মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নাকি টেক্কা দিচ্ছেন আরব দুনিয়ার এক রানি! তিনি ফ্যাশন সচেতন, উচ্চশিক্ষিতা, আধুনিকা। তবে ব্রিটেনের রাজ পরিবারের সম্ভ্রম আদায় করেছেন সম্পূর্ণ অন্য কারণে। নিন্দুকেরা বলেন, কৌলীন্য নিয়ে বরাবরই বাকিংহাম প্যালেস নাক উঁচু। সেই বাকিংহাম আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আরবের এ রানিকে। তার সম্মানে রানির খাস বাসভবন উইন্ডসর দুর্গে বসানো হয়েছিল রাজ পরিবারের রাজকীয় খানাপিনার আসর, গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কোয়েট। আরব দুনিয়ার ওই রানির নাম মোজা বিনতে নাসের। রাজত্ব আরবের দেশ কাতারে। কাতারের সাবেক আমির শেখ হামাদ বিন খালিফা আল থানি-র স্ত্রী। আর বর্তমান আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির মা।
বয়স নেহাৎ কম নয়। সাত সন্তানের জননী নাসের। তবে ব্রিটেন সফরে যখন গিয়েছিলেন, তখন তাকে দেখে মুগ্ধ ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম তার তুলনা টেনেছিল চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচককের নায়িকাদের সঙ্গে। সিনেমাপ্রেমীরা বলেন, হিচককের নায়িকাদের বৈশিষ্ট্য হল তারা প্রত্যেকেই স্টাইলিশ, অভিজাত, রাজোচিত এবং অদ্ভুত এক ঠাণ্ডা ব্যক্তিত্বের হালকা মুখোশ পরা নারী, যার ভিতরে ধিকধিক আগুন চাপা রয়েছে। ব্রিটেনের ফ্যাশন পত্রিকা ভ্যানিটি ফেয়ার লিখেছিল, ‘হিচককের নায়িকাদের সঙ্গে যদি রাজকীয় প্রাচুর্য মিশিয়ে দেওয়া হয় তবে ইনি তার মূর্ত প্রতীক। আমরা মুগ্ধ।’
তবে উপমাটি নাসেরের একটি দিকের বর্ণনা দিয়েছিল। কাতারের রানি আর অধুনা রাজমাতা নাসের নিজেকে ফ্যাশন, রাজকীয়তা আর আভিজাত্যের উর্ধ্বে নিয়ে গিয়েছেন নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে। রাজকীয় প্রাচুর্য অবশ্য তার বিয়ের সূত্রে পাওয়া। তবে কাতারের রানি হিসেবে তিনি যে সম্পত্তির মালকিন, তাতে ব্রিটেনের রাজপরিবারের যাবতীয় সম্পদ অন্তত পাঁচবার কিনে ফেলা যাবে।
ওই বিপুল অর্থ আর কাতারের মাটির নীচে নিহিত সম্পদের ভরসায় নাসের আর পাঁচজন রানির মতোই পায়ে পা তুলে আরামের জীবন কাটাতে পারতেন। তাতে তার ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক-আশাকে কমতি হত না। আরব দুনিয়ার অন্য রানিরাও সে ভাবেই থাকেন। কিন্তু নাসের ঠিক করলেন তিনি দেশের কাজ করবেন। দেশের উন্নতিতে কাজে লাগবেন। কাতারের সম্পদ একদিন ফুরোবেই। তারপরও যাতে কাতারের প্রাসঙ্গিকতা কমে না যায় তারই চেষ্টা শুরু করলেন নাসের। আর প্রথমেই জোর দিলেন শিক্ষায়।
বিশ্বের আর কোনও দেশে শুধু শিক্ষার জন্য নিয়োজিত কোনও শহর সম্ভবত নেই। কাতারে নাসের তৈরি করলেন এডুকেশন সিটি। এমন একটি শহর যেখানে আধুনিক শিক্ষার সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। সেই শহরের এক একটি শিক্ষাভবনের স্থাপত্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ সুবিধা দেখে অবাক হয়েছে বিশ্বের তাবৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বমানের নামী সব বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের শাখা খুলেছে কাতারের শিক্ষা-শহরে।
কাতার রাজতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু রাজতন্ত্রকে টিকে থাকতে হলে প্রজাদের সমর্থন চাই। কাতারের রানি তাই তৈরি করেন আরব ডেমোক্রেসি ফাউন্ডেশন। দেশের গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি এই প্রতিষ্ঠান নজর রাখে দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করা হচ্ছে কি না। আসলে নাসেরের বাবা ছিলেন কাতারের বাদশাহর বিরোধী পক্ষ। প্রজাদের হয়ে কথা বলতেন তিনি। এই নিয়ে পূর্বতন বাদশাহর কোপে পড়ে একবার সপরিবারে কাতার ছাড়তে হয়েছিল নাসরের বাবাকে। পরে তারই কন্যার বিয়ে হয় রাজপরিবারে। সেই নাসের প্রজাদের কথা না ভাবলে কে ভাববেন!
কাতারর রানি হিসেবে আরও অনেক কাজ করেছেন নাসের। একটা সময়ে শুধু তেল বিক্রির অর্থে যেমন চলছে চলুক নীতিতে এগনো কাতার গত বিশ বছরে উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে। সবটাই হয়েছে নাসেরের তৈরি কাতার ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে। কাতারের তরুণদের চাকরি দেওয়ার জন্য তৈরি করেছেন সিলটেক প্রকল্প, নাসেরের উদ্যোগে কাতারে তৈরি হয়েছে আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ, শিশু এবং মহিলাদের চিকিৎসার আলাদা হাসপাতাল, চিকিৎসা সংক্রান্ত মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার। যার উন্নতির স্বার্থে রাজ পরিবারের তরফে ৭৯০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে।
এমনকি কাতারে বসবাসকারী অ-মুসলমানদেরে জন্য উপাসনালয় তৈরির ব্যবস্থাও করেছেন নাসের। তার আগে কাতারের আর কোনও রাজা বা রানিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে ভাবতে দেখা যায়নি। পশ্চিম এশিয়ার পুরুষ প্রধান জগতে একজন মহিলার এভাবে দেশের জন্য কাজ করা মুখের কথা নয়, তবে নাসের কোনওদিন কে কী বলল তার পরোয়া করেননি। আরব দুনিয়ায় মেয়েরা যেখানে মাথা থেকে বুক পর্যন্ত ওড়নায় ঢেকে রাখেন, সেখানে কাতারের রানি পুরুষের মতো স্যুট পরে মাথায় পাগড়ি বেঁধে এ-দেশ, সে-দেশ দাপিয়ে ঘুরে বেড়ান।
স্বাভাবিকভাবেই সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, ওমানের দেশগুলোতে নাসেরকে মন্দ চোখে দেখা হয়। এমন একজন মহিলা যিনি আরব দুনিয়ার সংস্কৃতিকে মাটিতে মেশাচ্ছেন। তবে নাসের তার এই গুণের জন্যই নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে। শোনা যায়, ব্রিটেন সফরে রানির স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ অভিভূত হয়েছিলেন নাসেরকে দেখে। তার কাজের কথা শুনে। তবে নাসেরের প্রতি ফিলিপের ভালোলাগা একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করেছিল ব্রিটেনের কয়েকটি দৈনিক। নাসের-ফিলিপের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি বন্দি করেছিলেন ছবি শিকারিরা। সেসব ছবি দিয়ে ফিলিপের বৃদ্ধ বয়সে প্রেমে পড়ার ইঙ্গিত দিয়ে প্রতিবেদনও বেরিয়েছিল সংবাদ মাধ্যমে।
নাসের ব্রিটেনের রানিকে টেক্কা দিয়েছেন আরও একটি ক্ষেত্রে। কিছুদিন আগেই লন্ডনের একটি নতুন প্রাসাদোপম বাড়ি কিনেছেন নাসের। সেই বাড়ি এ মুহূর্তে ব্রিটেনের সবচেয়ে দামি সম্পত্তি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাসের ওই বাড়িটিকে যেভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন, তাতে সেটি ব্রিটেনের রাজপ্রাসাদকেও হার মানাবে। অর্থের অভাব কখনওই হয়নি কাতারের রানি, এখন রাজমাতা নাসেরের। আরব দুনিয়ায় বিশেষত কাতারের মতো দেশের রাজ পরিবারে তা হয়ও না। তবে নাসের সেই প্রাচুর্যের গণ্ডিতে আটকে না থেকে সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন। কারণ তিনি নিজেও সাধারণ ছিলেন এক সময়ে।
দারিদ্র পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সবচেয়ে বড় সমস্যা। দেশের মানুষের মধ্যে সম্পদের সমবন্টনের দাবি জানিয়ে জেলে যেতে হয়েছিল নাসেরের বাবাকে। আশ্চর্যের বিষয় হল যে আমির নাসেরের বাবাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন, তারই পুত্র প্রেমে পড়েন নাসেরের। ১৯৭৭ সালে যারা নাসেরের বিয়ের সাক্ষী ছিলেন তারা বলেন, বিয়ের পোশাকে হবু রানির মুখে না কি সেদিন হাসি ছিল না। যদিও শেষপর্যন্ট হাসিটা নাসেরই হেসেছেন। কাতারের রাজতন্ত্রকে প্রজাদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পেরেছেন তিনি। আরব দুনিয়ার সংস্কারকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, চাইলেই ভাঙা যায় শাসন। দরকার শুধু ভাঙার ইচ্ছে আর সাহসের। সূত্র : দ্য পেনিনসুলা কাতার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।