চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
যে গান মানুষের অব্যক্ত কথা বলে, যে গানে সঞ্চারিত হয় হৃদয়ের জমাটবদ্ধ অনুভূতি সে গানই মানুষের প্রিয় হয়। সে গান ছড়িয়ে পড়ে প্রাণ থেকে প্রাণে। লেখক বা গায়কের চিন্তাধারা অগণিত মানুষের মননে সংক্রমিত হলে তবেই একটি গান স্বার্থকতা পায়। দল, মত, বর্ণ, বয়স সব ছাড়িয়ে গানের শব্দমালা ছড়িয়ে যায় মানুষের কণ্ঠ থেকে কণ্ঠে। এমন গানই শিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখে। একটি গানই হয়ে ওঠে একজন শিল্পীর পরিচয়বাহক।
আমাদের একজন কবি আছেন। যার এমন অগণিত গান আছে, যা যুগ যুগ ধরে সমানভাবেই জনপ্রিয় হয়ে আছে মানুষের কাছে। কথা, সুর আর কণ্ঠে যিনি লাখো হৃদয়কে আন্দোলিত করেন। ব্যক্তিত্ব আর স্বকীয়তায় নিজেকে নিজেই ছাড়িয়ে যান প্রতিনিয়ত। বলছি মুজাহিদ বুলবুলের কথা৷ পুরো নাম মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বুলবুল। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে যে ক’জন ইসলামী সংগীত শিল্পী নিয়মিত গেয়ে যাচ্ছেন, মাতিয়ে রাখছেন দর্শক-শ্রোতাদের মুজাহিদ বুলবুল তাঁদের অন্যতম। সঙ্গীতাঙ্গনে তার দৃপ্ত পদচারণার শুরুটা ১৯৯৮ সালে। ইসলামী গজলের অ্যালবাম ‘কামলিওয়ালা’ প্রকাশের মাধ্যমে। এরপর একে একে ‘চলো জিহাদ রণে’ ‘জাগো হে মুসলমান’ ‘ফরিয়াদ’ ‘আর্তনাদ’ ‘মুক্তির দিশারী’ ‘গুলশান’ ‘প্রহরী’ ‘অসহায় বনি আদমের অশ্রু ঝরে’ এবং উর্দু গজলের অ্যালবাম ‘নালায়ে কলন্দর’সহ মোট ২৬ টি অ্যালবাম বের হেয়েছে। তাঁর সবকটি অ্যালবামই সাড়া জাগিয়েছে শ্রোতা মহলে।
তাঁর বহুল প্রচারিত যে গানগুলো গ্রাম থেকে শহর, স্টেইজ থেকে স্টেইজ ঘুরে বেড়ায় তার সংখ্যা অগণিত। ‘আসুক না যত বাধা’ ‘যদি জিহাদ মাঠে মা গো মৃত্যুও হয়’ ‘আমরা আর কত মার খাবো’ ‘আল্লাহ রক্ষা করো ফিলিস্তিন’ ‘মওলা’ ‘সরল পথের পথিক’ ‘বক্তা না কমেডিয়ান’ ‘লকবনেশা’ ‘ভণ্ডগুলোর দোষ’ তন্মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুকেন্দ্রিক গাওয়া তার গানগুলো সংগীতপ্রেমীদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। শিল্পী প্রতিবাদ করেন শৈল্পিকভাবে। তার ব্যঙ্গাত্মক প্রতিবাদী গানগুলো তাই দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। ‘নিরাপদ সড়ক’, ধর্ষণ-সন্ত্রাস রুখে দেয়ার প্রত্যয়ী গান ‘ধর’, ত্রাণ চোরদের জন্য ‘থাপ্পড় সংগীত’ মাইকে-মাইকে বেজে উঠতে শোনা যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসলামী সঙ্গীতাঙ্গনে কর্ড, বাজনা, গিটারসহ অনেক শব্দই প্রাসঙ্গিক। তবে এই জায়গাতেও মুজাহিদ বুলবুল স্রোতের বিপরীতে হাঁটেন। বাংলাদেশে ইসলামী সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে, ইসলামী সংস্কৃতির একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
স্টেইজ পারফর্ম শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। সেই যে শুরু এখনও চলছে বিরামহীন। গেয়ে চলেছেন মঞ্চ থেকে মঞ্চে। হামদে বারী তা’আলা, নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, শানে আউলিয়া, মরমী সংগীত, জাগরণীমূলক গান, দেশাত্মবোধক সংগীত, সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে প্রতিবাদমূলক গানসহ প্রায় সব ধরণের গান গেয়েই সমানভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মুজাহিদ বুলবুল। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডে বসবাসকালীন চ্যানেল আই ইউরোপে তাঁর উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ইসলামী সংগীতের সাপ্তাহিক ফনোলাইভ অনুষ্ঠান ‘মাদিনার সুর’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইসলামী সংগীত শিল্পীর পাশাপাশি একজন সফল গীতিকার, সুরকার ও কবি হিসেবেও তিনি সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর গাওয়া গজলগুলোর প্রায় সবগুলোই তাঁর নিজের লেখা এবং সুর করা। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘পাখি আর হাওরের প্রেম’ ‘লাল পাহাড়ের নীল কবিতা’ ‘বিচ্ছিন্ন বিষাদ: শতচ্ছিন্ন পঙক্তিমালা’ অন্যতম।
মুজাহিদ বুলবুল মুগ্ধতার সমার্থক শব্দ হিসেবেই ভক্তদের কাছে গণ্য হয়ে থাকেন। যদিও সাধারণত শিল্পীরা আলোচনায় থাকেন, সমালোচনায় থাকেন। শিল্পীরা উত্থানে থাকেন, পতনেও থাকেন। তবে মুজাহিদ বুলবুল এই জায়গায় ব্যতিক্রম। সঙ্গীত জগতে তাঁর শুরুর পর থেকে যে ধারাবাহিকতা, তা তিনি ধরে রেখেছেন দারুনভাবে। কখনো ছন্দপতন হতে দেননি।
১৯৮৪ সালের ১লা জানুয়ারি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাধুহাটি গ্রামে মাওলানা আব্দুস সুবহান জিহাদী ও শামসুন নাহার খানমের ঘর আলোকিত করে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসা থেকে হাদিস বিভাগে কামিল এবং ২০০৬ সালে সিলেট এম সি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। মুজাহিদ বুলবুল শ্রেণী-পেশা কিংবা বয়সের ভেদাভেদ চূর্ণ করে সকল শ্রেণীর মানুষের নিখাঁদ ভালোবাসায় আচ্ছাদিত ছিলেন, আছেন। যুগের পর যুগ কালজয়ী গানগুলোর কাঁধে ভর করে মানুষের হৃদয়ে তিনি অমর থাকবেন নিশ্চয়...।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।