পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার মধ্যেই তৈরী পোশাক রফতানির পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। কয়েক মাস আগেও ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের কারণে পোশাক শিল্পের অনেক মালিকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। পুরনো বাজার ছাড়াও বিশ্বের নতুন নতুন বাজারে রফতানির ক্রয়াদেশ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা নতুন করে গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগ করেছেন। ইউরোপ-আমেরিকার করোনা-পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় ক্রয়াদেশ বেড়েছে। পোশাকের অর্ডার বৃদ্ধির সঙ্গে অনেক ক্রেতা দাম বাড়াতেও রাজি হয়েছে। বিদেশি বড় ক্রেতারা পাশাপাশি গত কয়েক মাস থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান প্রধান ক্রেতা দেশে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র ফুটে উঠেছে।
জানতে চাইলে রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় দেশগুলো পোশাক রফতানির প্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত। এর বাইরে চিলি, চীন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার বাজার পোশাক রফতানির নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ দেশগুলোতে পোশাক রফতানি গাণিতিক হারে বাড়ছে। নতুন বাজারে পোশাক রফতানির ব্যাপারে উদ্যোক্তারা খুব আগ্রহী। নতুন নতুন বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা সহায়তা বিশেষভাবে কাজে লাগছে। তবে অপ্রচলিত বাজারে রফতানি সম্প্রসারণে নগদ প্রণোদনার পরিমাণ ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হলে রফতানি সম্প্রসারণে খুবই কার্যকর হবে।
এমনকি গত ৬ মাসে (২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই আগের অর্থবছরের তুলনায় পোশাক রফতানি প্রায় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়; ইউরোপ ও কানাডার বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। স্পেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রায় সকল দেশেই এই সময়ে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য ইউরোপ-আমেরিকার দেশই নয়; রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চিলিসহ সব অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে পোশাক রফতানির পালেও হাওয়া লেগেছে। এদিকে ইউরোপ-আমেরিকার করোনা-পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় ক্রেতা দেশগুলো থেকে এখন পোশাক রফতানির কার্যাদেশ এসেছে ব্যাপক হারে। এছাড়া করোনাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের তুলনায় পোশাক রফতানিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। যে কারণে করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে আবার সুসময়ের দেখা পেয়েছেন উদ্যোক্তারা।
এদিকে পোশাক খাতে সুসময় ফিরলেও নতুন করে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শঙ্কায় ফেলেছে খাত সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানসহ ইউরোপে ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। অনেক স্থানে পোশাক বিক্রির দোকান ও আউটলেট বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বায়াররা করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা পোশাক পণ্য গ্রহণে ‘ধীর’ নীতি অবলম্বন করেছেন। অন্যদিকে, কারখানা মালিকরা বায়ারদের অর্ডার নেয়ার পর কাঁচামাল কিনে ফেলেছেন বা কিনতে শুরু করেছেন। ফলে বায়ারদের অর্ডার নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মালিকরা। তারা বলছেন, অর্ডার নিলেই তো হবে না, রফতানিও তো করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে ক্রেতারা বাংলাদেশের বাজারে ঝুঁকছেন বেশি, এটা অবশ্য আমাদের জন্য সুখবর। তাদের মতে, ক্রেতারা এতদিন অন্য দেশের চেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনার চেষ্টা করেছে। সে অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে। এখন তারা প্রচুর অর্ডার দিচ্ছে। এই সুযোগে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি বাড়িয়ে প্রাপ্য মূল্য নিতে হবে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, করোনার জারে রফতানি সম্প্রসারণে নগদ প্রণোদনাও কাজে এসেছে। যদিও প্রণোদনার পরিমাণ সময়ে পোশাক কারখানা খোলা রাখায়, এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি অপ্রচলিত বা ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য মতে, করোনার মহামারির পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির বাজার। গেল ৬ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের তৈরী পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৬ শতাংশ। পাশাপাশি ইউরোপ ও কানাডার বাজারেও রফতানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ডলার। সেই হিসেবে ছয় মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৮ শতাংশ। প্রধান বাজারগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র ফুটে উঠেছে।
পুরনো বাজারের বাইরে নতুন বাজার অনুসন্ধানে সফলতা আসছে দেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় তৈরী পোশাক খাতে। চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ সময়ে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৩০৬ কোটি মার্কিন ডলারের। পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার।
অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি সম্প্রসারণের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে গেছে। এ কারণে বৈশ্বিক পর্যায়ে পোশাকের যে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার ইতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক রফতানির ওপর পড়েছে। পাশাপাশি নগদ প্রণোদনা ও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নতুন নতুন বাজারে পোশাক রফতানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে শুধু জাপানের বাজারে ৫২ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার জাপানে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর এ সময়ে রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে ৩৪ কোটি ১২ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ফলে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর রাশিয়ায় রফতানি বেড়েছে ৩৮ দশমিক ১০ শতাংশ।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের, এর আগের বছরে একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে সেখানে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এই সময়ে ভারতের বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের। গত বছর একই সময়ে ভারত থেকে পোশাক রফতানি আয় ছিল ২৩ কোটি ১৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভারতে পোশাক রফতানি থেকে আয় বেড়েছে ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এছাড়া এ সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে অপ্রচলিত এই বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এদিকে, মেক্সিকোতে আলোচিত সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে দেশটিতে এ খাতে রফতানি আয় হয়েছিল ৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের। বছরের ব্যবধানে দেশটিতে রফতানি আয় বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্টে ১১ দশমিক ৫৬, সেপ্টেম্বরে ৪১ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৫৩ দশমিক ২৮, নভেম্বরে ৩২ দশমিক ৩৪ ও ডিসেম্বরে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমানে চার বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করছে। মালিকদের টার্গেট আট বিলিয়ন ডলার রফতানি করার।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতেই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দুশ্চিন্তায় ফেলেছে পোশাক মালিকদের। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্র বলছে, করোনার প্রথম বছর ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বেশিরভাগ দেশে তৈরী পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তাতে ২০২০ সালের শেষের দিকে শুরু করে ২০২১ সালে এসব দেশের অর্ডারগুলো বাংলাদেশমুখী হয়। ফলে ওভেন ও নিটওয়্যার কারখানাগুলোতে চাহিদার অনেক বেশি অর্ডার রয়েছে। এসব অর্ডার তৈরির কাজ চলছে। অনেক অর্ডার প্রস্তুত শেষে রফতানির পর্যায়ে রয়েছে। ঠিক সেই সময় ওমিক্রনের খবরে তৈরী পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড ও বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন, ওমিক্রনের কারণে বায়াররা ডেলিভারি সেøা করে দিয়েছেন। তবে ভালো খবর হলো এখন পর্যন্ত দেশের পোশাক খাতে কোনো অর্ডার বাতিল হয়নি।
প্রায় একই কথা বলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত পোশাক আমদানি-রফতানির পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। রফতানি কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে, বায়ারদের পক্ষ থেকে কোনো অর্ডার স্থগিত বা বাতিল হয়নি।
ক্ল্যাসিক ফ্যাশন কনসেপ্টের এমডি ও বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, ওমিক্রনের কারণে গত ডিসেম্বর থেকেই অর্ডার কমে আসছে। অর্ডার এখন কমলেও আমাদের সমস্যা নেই। কারণ আমাদের কাছে যে অর্ডার রয়েছে, তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত কাজ করতে পারব। তিনি বলেন, তবে বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে, বায়াররা অর্ডার দেয়া পণ্য নিতে বিলম্ব করছেন। তাতে পেমেন্ট দেরিতে হবে, পেমেন্ট দেরিতে পেলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে। শুধু তাই নয়, ওমিক্রন যদি আরো বিস্তার লাভ করে, এরপর বায়ারা অর্ডার স্থগিত করলে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হব। তার কারণ ইতোমধ্যে কাঁচামাল চলে এসেছে, পোশাকও প্রস্তুত হয়ে যাবে। আর প্রস্তুত করা পণ্য রফতানি করতে না পারলে টাকা পাওয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।