পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান বাজারগুলোতে পোশাক রফতানিতে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রফতানি প্রায় ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের দেশগুলোই নয়, রাশিয়া, ভারত, জাপান, চিলিসহ সব অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে পোশাক রফতানির পালে হাওয়া লেগেছে।
তবে পোশাকখাতের রফতানির ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন কাঁচামাল ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাজার অনেক চড়া। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ার সঙ্গে দাম আশানুরূপ পাওয়া যাচ্ছে না।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সারাবিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৭ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ডলার। অর্থাৎ ৪৩৫ কোটি ডলারের বেশি রফতানি বেড়েছে সারাবিশ্বে।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশভিত্তিক পোশাক রফতানির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় এসময়ে পোশাক রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪২৩ কোটি ১৬ লাখ ৫ হাজার ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে, যা তার আগের অর্থবছর ২০২০-২১ সময়ে ছিল ২৯০ কোটি ৮ হাজার ডলার। অর্থাৎ ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে প্রায় ৪৬ (৪৫ দশমিক ৯১) শতাংশ। অর্থবছরের প্রথমার্ধে পোশাকের মোট রফতানি ২৮ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া রফতানি বেড়েছে ইউরোপ ও কানাডার বাজারে। ইউরোপ ও কানাডার বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৮৩ ও ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রাশিয়া, স্পেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশে রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এসময়ে অপ্রচলিত বাজারেও রফতানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এতে খুশি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি বাড়াতে নানা ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবার মনে হয়, সেই সুযোগটি এসেছে। এটাকে যদি আমরা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমাদের রফতানি অনেক বেড়ে যাবে।
গত কয়েক মাসের উপাত্ত পর্যালোচনায় শিল্পের অগ্রযাত্রার সম্ভাবনা প্রতীয়মান। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতের বাজারের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন, যেহেতু বিশ্বব্যাপী মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার এখনো নড়বড়ে।
নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পাশাপাশি নতুন বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ায় আমাদের সাহস বেড়ে গেছে। এই বাজারগুলোতে রফতানি আরও বাড়াতে আমরা এখন নতুন নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামব। আমাদের এখন একটাই ভয়: করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। এটা যদি সামাল দিতে পারি, তাহলে আর কোনো কিছুই আটকাতে পারবে না। যে রমরমা দিন ফিরে এসেছে, তা কমপক্ষে আগামী পাঁচ-ছয় বছর অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।