পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা আবারও বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অজ্ঞান পার্টির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মোহাম্মদপুরের বসিলায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে পুলিশ কর্মকর্তা মীর আব্দুল হান্নান মারা গেছেন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খাওয়ানো নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে- অসচেতনতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঝিমিয়ে পড়া ও অপরাধীদের সহজ সাজা ও জামিন।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অজ্ঞান পার্টির বেপরোয়া হওয়ার নেপথ্যে তিনটি কারণ রয়েছে। দেখা যায়, অজ্ঞান পার্টির প্রধান টার্গেট থাকে সাধারণ যাত্রীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এদের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তবে যারা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তারা ঝামেলা এড়াতে অনেকে মামলা করে না। আবার মামলা বা গ্রেফতার হলেও স্বল্প সাজা ও জামিনে বের হয়ে যায়। এসব প্রতারণায় আইন কঠোর হওয়া উচিত। তা হলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমে যেত। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝিমিয়ে যাওয়ায় অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে গেছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ থাকা দরকার।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয় মো. মোমেন মিয়া জানান, আব্দুল হান্নান আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আবদুল হান্নান কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে গত রোববার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাসে চড়েন। বাসটি কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর গেলে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তার কাছে থাকা মুঠোফোন দিয়ে পথচারীরা স্বজনদের ফোন করে বিষয়টি জানান। সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, তার বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়ার আলাইপুরে। ছুটি নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন আব্দুল হান্নান। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা এটিভান নামে এক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। নিষিদ্ধ এ ওষুধ চা, ডাব ও বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারে মিশিয়ে অন্যদের খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়। গাড়ি বা ট্রেনে যাত্রীবেশে ‘অপারেশনে’ ও একইভাবে টার্গেট করা হয়। যিনি টার্গেট ঠিক করেন তাকে বলা হয় ‘মাস্টার’। এরপর টিমের সবাই গাড়িতে উঠে। টার্গেটের পাশে, পেছনে ও কাছের সিটে বসে একেকজন। শেষের দিকে গাড়িতে ওঠে এক ছদ্মবেশী হকার। গাছ-গাছড়া বা কবিরাজি পণ্য, আচার, চকলেট বা হালুয়ার গুণাগুণ প্রচার করে বিক্রি শুরু করেন। তাকে তাদের ভাষায় বলা হয় ‘ডাক্তার’। প্রচারের জন্য প্রথমে ফ্রি খাওয়ানো বা চেকে দেখতে বলা হয়। সেখানে অন্য যাত্রীদের স্বাভাবিক পণ্য দিলেও টার্গেট করা ব্যক্তিকে দেয়া হয় চেতনানাশক মেশানো খাবার। পাশে বসা অজ্ঞান পার্টির সদস্য নিজে খেয়ে টার্গেট করা যাত্রীর মনে বিশ্বাস জমিয়ে খেতে উৎসাহিত করে। তাকে ‘বয়ান বাজ’ বলে ডাকা হয়। অজ্ঞান হওয়ার পর পাশের সিটে বসা চক্রের সদস্য সব হাতিয়ে নেয়। তাদের ভাষায় সে-ই ‘ক্যালরিম্যান’। তবে তাদের দলে নারী সদস্যও রয়েছে। হিজাব বা বোরকা পরেই মাঠে থাকে তারা। সে সদস্যরা নারী যাত্রী বা পথচারি হিসেবে নানাভাবে সহানুভূতি আদায় করে শিকারকে ফাঁদে ফেলে। টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়ার পর ওই নারী বা পুরুষ সুযোগ বুঝে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। তারপর একে একে সরে পড়ে বাকিরাও। গাড়ি ও ট্রেনে চেতনানাশক গন্ধ শুকানো ও চোখে-মুখে মলম লাগানোর কৌশলও প্রায় দেখা যায়। একই কৌশল ব্যবহার করা হয় পথচারিদের ক্ষেত্রেও।
ওই সূত্রে আরো জানা গেছে, লঞ্চের ছদ্মবেশটাও প্রায় অভিন্ন। বিস্কুট, চকলেট, খাবার ইত্যাদি বিক্রির আড়ালে কুপোকাত হয় যাত্রীরা। শুধু টাকা-পয়সা বা মূল্যবান জিনিসপত্রই নয়। অজ্ঞানপার্টি চালকের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে গাড়িও। প্রাইভেট কার বা অটোরিকশায় যাত্রীবেশে চড়ে সুবিধামতো নির্জন স্থানে গিয়ে কাজ সারছে। নানা কৌশলে খাবারের নামে যাত্রা বিরতি দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে চেতনানাশক। অথবা চেতনানাশক শুকিয়ে, খাবারের মাধ্যমে খাইয়ে বা চোখে-মুখে মলম লাগিয়ে দিয়ে অচেতন করছে। রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে হাওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার ইনকিলাবকে জানান, অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে আগের চেয়ে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা কম বা বেশি হয়েছে তা পরিসংখ্যান দেখলে জানা যাবে। তবে অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারা কিছুদিন জেল খেটে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আইন কঠিন হলে এ ধরনের প্রতারণা কমে যেত।
তিনি আরো বলেন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা বেশিরভাগই গণপরিবহন ও ভাসমান অবস্থায় অপরাধ করে। তাই এসব চক্র থেকে রক্ষায় জনসাধারণকেই বেশি সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে চলার পথে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে। আমরা পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছি। জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতি মাসে ১৫০ থেকে ২০০ জন মানুষ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সেখানে চিকিৎসার জন্য যায়। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢামেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা মূলত রোরাজিপাম গ্রুপের ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। খালি পেটে খেলে এর প্রতিক্রিয়া বেশি হয়ে থাকে। তবে এ ধরনের ওষুধ যাদের খাওয়ানো হয়, তাদের যদি আগে থেকে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও লিভারের রোগ থাকে তা হলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনতে দেরি হলে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি বগুড়ার শেরপুরের জাহিদুল ইসলাম (৩০) নামের এক সৌদি প্রবাসী দেশে ফিরেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। ঢাকার উত্তরা থেকে শাহ ফতেহ আলী পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে বাড়ি যাওয়ার পথেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন তিনি। পরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার ১৪ জানুয়ারী ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীর স্ত্রী জান্নাতি খাতুন শেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। দ্রুুততম সময়ের মধ্যেই সেটি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।