পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। গতকাল সংসদে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বছরের প্রথম ও শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। পরে এর ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
স্পিকারের অনুরোধের পর প্রেসিডেন্ট তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। এসময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ। স্পিকারের আসনের পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তিনি। প্রতিবারের মতো এবারও মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেওয়া ১৬৯ পৃষ্ঠা ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন প্রেসিডেন্ট। বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে ভাষণ শুরু করে সোয়া ৫টায় শেষ করেন। এসময় প্রেসিডেন্ট সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সংসদে তুলে ধরেন।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সব প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। আমি সরকারি দল ও বিরোধীদলের সব সংসদ সদস্যকে এ মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ও কার্যকর ভ‚মিকা পালনের আহŸান জানাই।
প্রেসিডেন্ট বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে দলমত, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি উদাত্ত আহŸান জানাই। আসুন লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল মহান স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সরকারি অর্থের অপব্যবহার রোধপূর্বক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সরকারি সব কার্যক্রমে জনগণের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রকে অধিক কার্যকর করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নীতির কারণে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ। দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে সম্প্রীতি সহকারে নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করতে পারে, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবগুলো নির্বিঘেœ যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। তথাপি ধর্মের নামে কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, ২০২১ সাল ছিল বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্মরণীয় বছর। এ বছরেই আমরা উদযাপন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী। উৎসবের এমন মহামিলন, গণমানুষের এমন সম্মিলন ইতিহাসে কমই দেখা যায়। যদিও করোনা মহামারির কারণে উৎসব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু শেষ প্রান্তে কোনো বাধাই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি।
তিনি বলেন, সাড়ম্বরে দেশে ও দেশের বাইরে জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে বন্ধু দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানের মর্যাদা ও আনন্দ-উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। এছাড়া অনেক বন্ধু দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও যোগাযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।
মহামারি করোনা সংক্রমণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট বলেন, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অনুপ্রেরণায় আমরা এখন পর্যন্ত করোনা এবং এর অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছি। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন যাতে আমাদের দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে রেমিট্যান্স প্রেরণে নগদ প্রণোদনা এবং পদ্ধতি সহজীকরণের সুফলের কথাও তুলে ধরেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।