পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাজারে নতুন আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় আলু নিয়ে এখন থেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকসহ মৌসুমি আলু চাষীরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় গত বছরও শুরুতে আলুর দাম বেশি থাকায় অধিক লাভের আশায় ব্যাপকভাবে আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু এবছরের শুরুতেই আগাম জাতের নতুন আলুর দাম কম হওয়ায় ভরা মৌসুমে আলুর বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। বাজার দর নিম্নমুখি হওয়ায় অনেকেই এরই মধ্যে আলু পরিচর্যায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
মহামারি করোনা, লকডাউন তার ওপর দফায় দফায় বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল রংপুর অঞ্চলের নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কৃষকরা। এসবের ধকল সামলাতে বছরের এক তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ায় কৃষিখাতে বেশ ভাটা পড়ে যায়। ব্যাহত হয় আমনসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষাবাদ। সব ধকল কাটিয়ে সেপ্টেম্বর মাস থেকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মাঠে নামেন এ অঞ্চলের কৃষক-কৃষাণীরা। আমনের পাশাপাশি বিভিন্ন রবিশস্য চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন মৌসুমি সবজির পাশাপাশি আগাম জাতের আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন প্রায় সকলেই। তাছাড়া, গত বছর আগাম আলু চাষে বেশ লাভবান হওয়ায় এবার আলুর দিকে জোর দেন সবাই।
বৃষ্টিতে রোপণকৃত আগাম জাতের আলু পচে নষ্ট হলেও হাল ছাড়েননি কৃষকরা। নতুন করে আবারও আলু বীজ রোপণ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে আগাম জাতের আলু রোপণের ধুম পড়ে যায় তিস্তার চরাঞ্চলসহ রংপুর অঞ্চলের সর্বত্র। সুষ্ঠু পরিচর্যা আর অনুক‚ল পরিবেশের কারনে চরাঞ্চলসহ এ অঞ্চলের সর্বত্রই ভালো ফলন হয় আগাম জাতের আলুর। কৃষকদের চোখে-মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
কৃষি বিভাগ জানায়, রংপুর অঞ্চলে রবি মৌসুমের অর্থকরি ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আলু। বিশেষ করে রংপুরের গঙ্গা চড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায় একসময়ের পতিত থাকা তিস্তার চরে আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এই তিন উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই এ অঞ্চলের কৃষকেরা আমন ধান কাটার পর শীতকালীন ফসল হিসেবে আগাম আলুর চাষ করে আসছেন। এই আলু চাষের জন্য তারা স্বল্পমেয়াদী ও আগাম জাতের আমন ধানের চাষ করেন। প্রচলিত আমন ধানের আগেই এই ধান কেটে আলু বীজ রোপণ করেন। এবার দফায় দফায় বন্যার কারনে আগাম জাতের ওই আমন ধান অনেকেরই নষ্ট হয়ে গেছে। আলু চাষের জন্য সেসব জমিতে এই ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। অনেকেই ফেলে রাখা এসব জমিতে আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ করেন। সেগুলো এখন তোলার সময় হয়েছে। অনেকেই আবার আলু তুলে ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রিও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু বাজারে নতুন আলুর দাম না থাকায় কৃষকদের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নেমে এসেছে।
অন্যান্য বছর মৌসুমের শুরুতে বাজারে আগাম জাতের আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবছর শুরু থেকেই আলু ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পর্যায়ক্রমে তা এখন ২০-২৫ টাকায় নেমে এসেছে। আর এ কারনে ভরা মৌসুমে আলুর দাম নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বলছেন লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচ উঠানোই মুশকিল হবে। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চর ছাওলা, চর তাম্বুলপুর, শিবদেব ও রহমত চর, গঙ্গাচড়ার ইছলী চর, শঙ্করদহ এবং কাউনিয়ার গদাই ও ঢুষমারার চর ঘুরে দেখা গেছে, চাষীরা এখন আলু ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত।
সবার ধারণা, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া এরকম অনুক‚লে থাকলে এ অঞ্চলে এবারও আলুর বাম্পার ফলন হবে। আগাম জাতের আলুর ফলন ভালো হওয়ায় মৌসুমি আলু চাষেও মনোযোগী হয়ে পড়েন সবাই। এরই মধ্যে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই বাজারে এসেছে নতুন আলু। কিন্তু কাঙ্খিত দাম না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন আলু চাষীরা। তারা মৌসুমের আলু নিয়ে এখন থেকেই দুশ্চিান্তায় পড়েছেন।
কৃষকরা বলছেন, গত বছর শুরুতে আলুর দাম বেশ ভালো ছিল। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে নতুন আলুর যে দাম তাতে উৎপাদন খরচ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রংপুর কৃষি স¤প্রসারন অধিদফতর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে রংপুরে ৯৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৬ টন। রংপুরে সাধারণত কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, লেডিরসেটা, বারি আলু, কারেস ও এস্টারিস, শীল, দেশি সাদা আলুর চাষ বেশি হয়। এবারও তাই হয়েছে এবং সর্বত্র ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের শেষের দিকে আলু তোলা প্রায় শেষ হবে।
রংপুর অঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য রংপুরের ৫ জেলায় ৬৭টি হিমাগার রয়েছে। এরমধ্যে রংপুরে ৪০টি এবং নীলফামারী জেলায় ১০টি। বাকি তিন জেলায় আছে ১৭টি হিমাগার।
এদিকে গত মৌসুমে শুরুতে আলুর দাম ভালো থাকলেও পরবর্তীতে বাজারে আলুর দরপতন নেমে আসে। ফলে অনেকেই হিমাগার থেকে আলু বের করেননি। আর এতে প্রায় ৪০ ভাগ আলুই অবিক্রীত থেকে যায়। এই অবিক্রীত আলু আবার ব্যাপক হারে বীজ হিসেবে ব্যবহারের শঙ্কা করছেন কেউ কেউ। ফলে অনেক স্থানে ফলন বিপর্যয়েরও শঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।