নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : সেকেন্ড সিøপের ফিল্ডার শুভাগতহোমের দূর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে জাফর আনসারিকে ফিরিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর একটি ৫ উইকেটের ইনিংস। চট্টগ্রাম টেস্টে মেহেদী রঙ ছড়িয়েছিলেন মিরাজ অভিষেক ইনিংসেই (৬/৮০), ফিরতি টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজে আলোকিত ঢাকা! নতুন বলে প্রথম স্পেলে ভয়ংকর রূপ ছড়িয়েছেন চট্টগ্রামে। ঢাকা টেস্টে নুতন বলে প্রথম স্পেলটি তার ১১-১-৪৪-৩, উইকেটে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডকে লিড এনে দেয়া ৯ম জুটিকে ৯৯ এ থামিয়ে দিতে পেরেছে মুশফিকুরের দল দ্বিতীয় নুতন বলটি মিরাজের হাতে তুলে দিয়েই! ওকসকে লেগ ¯িøপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেই টেস্ট অভিষেক ইনিংসের মতো দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও নামতা গুনে ৬ উইকেট (৬/৮২) শিকার মিরাজের।
টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেটের ইনিংসে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজের আগে নাম লিখিয়েছেন ৬ বোলার। তবে তাদের কেউ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে কোন ইনিংসে দেখা পাননি ৫ উইকেট। টেস্ট অভিষেকে স্মরনীয় বোলিংয়ে নিজের জাত জানিয়ে দেয়া মিরাজ উপর্যুপরি দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেটের ইনিংসে (৬/৮২) নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন।
২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ৬/১৩৬, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজের অভিষেক ইনিংসে ৫ উইকেটে কি দ্যুতিই না ছড়িয়েছিলেন অফ স্পিনার নাইমুর রহমান দুর্জয়! অথচ, টেস্টে ওটাই তার একমাত্র ৫ উইকেটের ইনিংস। পরের ম্যাচে বুলাওয়েতে উইকেট মাত্র ১টি (১/৭৪)। ২০০১ সালে বুলাওয়েতে সেই ম্যাচে বাঁ হাতি পেস বোলার মুঞ্জুরুল ইসলাম টেস্ট অভিষেকে পেয়েছেন ৫ উইকেটের দেখা (৬/৮১)। তবে টেস্টের পারফরমেন্স ¤øান করে দিয়েছেন মুঞ্জু হারারে টেস্টেÑদুই ইনিংসেই কেটেছে তার উইকেটহীন। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউন টেস্টে কি দূর্দান্ত অভিষেকই না হয়েছিল মাহামুদুল্লাহ রিয়াদেরÑপ্রথম ইনিংসে ৩/৫৯’র পর দ্বিতীয় ইনিংসে পেলেন ৫ উইকেটের দেখা (৫/৫১)! এমন ম্যাচ উইনিং বোলিংয়ের পরের ম্যাচে সেন্ট জর্জেসে ৩/৪৪ ও ১/৩৭। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬/৯৪ এ ৪র্থ বাংলাদেশী হিসেবে টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেটের ইনিংসে নিজেকে অন্য উচ্চতায় উঠিয়ে আনা বাঁ হাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি পরের ম্যাচে একাদশে থেকেও টসে’র আগে খেলতে অপারগা জানিয়েছেন। বাসা থেকে আনা খাবার খেয়ে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় পেটের পীড়ায় মিরপুরে টেস্ট খেলতে নামেননি ইলিয়াস সানি! পাকিস্তানের বিপক্ষে ১ বছর পর চট্টগ্রাম টেস্টে খেলতে নেমে পেয়েছেন ৩ উইকেট (৩/১২৩)। টেস্টে অভিষেকে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ানো অফ স্পিনার সোহাগ গাজী ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে প্রথম ইনিংসে ৩/১৪৫’র পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৭৪Ñটেস্ট অভিষেক ম্যাচে ৯ উইকেটে আলো ছড়ানো সোহাগ গাজী পরের ম্যাচেই নিষ্প্রভ। খুলনা টেস্টের ২ ইনিংসে ৩/১৬৭ও ০/৮! ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিষেক ম্যাচে সেন্ট ভিনসেন্টে ৫/১৩৫’র পর সেন্ট লুসিয়ায় পরের টেস্টে ২/৮৯ও ১/৮১! টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেটে স্মরনীয় বোলিং করেছেন ইতোপূর্বে বাংলাদেশের যে ৬ বোলার,তাদের কারো দ্বিতীয় ম্যাচে ছিল না ৫ উইকেটের ইনিংস। এখানেই ব্যতিক্রম অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। চট্টগ্রামে টেস্ট অভিষেক ইনিংসে ৬/৮০, পরবর্তী টেস্টের প্রথম ইনিংসেও নামতা গুনে ৬ শিকার (৬/৮২) খুলনার এই ছেলেটির!
ক্যারিয়ারের প্রথম ২ ম্যাচে নামতা গুনে ৫ উইকেট শিকারে অন্য এক উচ্চতায় নিজেকে উঠিয়ে এনেছিলেন বাঁ হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর। ২০ মাস আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে ৫উইকেট (৫/৫০), দ্বিতীয় ম্যাচে আরো ভয়ংকর (৬/৪৩) মুস্তাফিজুরকে দেখেছে বিশ্ব। ওয়ানডে ফরমেটে প্রথম ২ ম্যাচে এমন কৃতিত্বে জিম্বাবুয়ের ভিটরির রেকর্ড ছুঁয়েছেন মুস্তাফিজ। ২০১১ সালে হারারেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচে ৫/৩০ও ৫/২০ এ জিম্বাবুয়ে পেস বোলার ভিটরির ওই রেকর্ডকে ছুঁয়ে ফেলা মুস্তাফিজুরে কৃতিত্বে অনুপ্রানিত হয়ে তারই এক সময়ের পার্টনার মিরাজ টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ২ ম্যাচে স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়া বোলিং উপহার দিয়েছেন।
১৩৯ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ২ ম্যাচে ৫ উইকেটের ইনিংস হাতে গোনা। মিরাজকে নিয়ে সংখ্যাটি মাত্র ৭ জনের। ১৮৮৭ সালে সিডনী টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার চার্লি টার্নার অভিষেক ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ৬ উইকেট (৬/১৫)। সিডনীতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে সেখানে ৫ উইকেট (৫/৪১)। ১৮৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার মন্টি নবেল প্রথম ২ টেস্টে মেলবোর্ন এবং অ্যাডিলেডে ৫ উইকেটের ইনিংস (৬/৪৯ ও ৫/৮৪) দিয়েছেন উপহার। ১৯২৫ সালে অজি লেগ স্পিনার ক্লারি গ্রিমেত সিডনীতে নিজের অভিষেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট (৫/৪৫), পরের বছরে লিডসে নিজের দ্বিতীয় টেস্টে পেয়েছেন ৫ উইকেট (৫/৮৮)। ১৯৭৮ সালে ব্রিসবেনে আলো ছড়ানো অভিষেকে (৬/৭৪) অজি পেসার রডনি হগ দিয়েছিলেন সমৃদ্ধ আগামীর বার্তা। পার্থে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টেও ৫ উইকেটের ইনিংস (৫/৬৫)। ১৯৮৮ সালে চেন্নাই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষিক্ত ভারত লেগ স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানী একাই ধসিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে, নামতা গুনে ২ ইনিংসে ৮টি করে উইকেটে (৮/৬১ও ৮/৭৫)। বেঙ্গালুরুতে পরবর্তী টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা পেয়েছেন ৫ উইকেট (৬/৫৯)। ২০০৩ সালে ইংলিশ ফাস্ট বোলার রিচার্ড জনসন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট ইনিংসে ৬/৩৩’র পর বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট (৫/৪৯)। ১৩ বছর পর মিরাজের সাফল্যে প্রথম ২ টেস্টে এমন বিস্ময়কর বোলিং দেখল বিশ্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।