Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানব দেহে প্রাণীর হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন

বিশ্বে এই প্রথম

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের একজন রোগীর শরীরে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে তার আগে শুকরের হৃদপিণ্ডটি জেনেটিকালি রূপান্তরিত করে নেয়া হয়।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাত ঘণ্টা ধরে চলা পরীক্ষামূলক ওই অস্ত্রোপচারের তিনদিন পরেও সাতান্ন বছর বয়সী ডেভিড বেনেট বেশ সুস্থ রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে ওই অস্ত্রোপচার হয়। বেনেটের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকদের তরফে এটাই সর্বশেষ চেষ্টা। তবে দীর্ঘমেয়াদে তিনি কতদিন সুস্থ থাকতে পারবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অস্ত্রোপচারের একদিন আগে বেনেট বলেছিলেন, ‘আমার সামনে বিকল্প দুইটা, হয় অস্ত্রোপচার করা অথবা মারা যাওয়া।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি এটা অন্ধকারে গুলি ছোঁড়ার মতো একটা ব্যাপার, কিন্তু আমার জন্য এটাই শেষ চেষ্টা।’

বিশ্বের প্রথম এই ধরনের অস্ত্রোপচার করার জন্য ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারকে বিশেষ অনুমতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা তদারকি কর্তৃপক্ষ। কারণ, না হলে বেনেটের মৃত্যু ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। মানব হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য তিনি উপযুক্ত ছিলেন না। সাধারণত রোগীর স্বাস্থ্য অত্যন্ত দুর্বল হলে চিকিৎসকরা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। চিকিৎসকদের যে দল এই অস্ত্রোপচার করেছে, তারা বহু বছর ধরে এ নিয়ে গবেষণা করছিল। এটি সফল হলে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন বদলে যাবে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিনে এক বিবৃতিতে সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ বলেছেন, ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বল্পতার সমাধানে এই অস্ত্রোপচার বিশ্বকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সঙ্কটে প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে প্রতিদিন ১৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষমাণ তালিকায় এক লাখের বেশি মানুষ রয়েছে জানা যায়। ফলে চিকিৎসায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদা মেটাতে জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন নামে পশু বা প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহারের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই বিবেচনা করা হচ্ছে। হৃদপিণ্ডে শুকরের ভাল্ব ব্যবহার এর মধ্যেই অনেকটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে নিউ ইয়র্কের চিকিৎসকরা ঘোষণা করেন যে, তারা একজন ব্যক্তির শরীরে সফলভাবে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। তবে যার শরীরে সেটি স্থাপন করা হয়েছিল, তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তার সুস্থ হয়ে ওঠার আর কোন আশা ছিল না। তবে বেনেটের ক্ষেত্রে আশা করা হচ্ছে যে, তিনি আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করতে পারবেন।

অস্ত্রোপচারের ছয় সপ্তাহ আগে গুরুতর হৃদরোগ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি বিছানায় শুয়ে রয়েছেন এবং তার শরীরে সংযুক্ত একটি যন্ত্র তাকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে। ‘সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমি এখন অপেক্ষা করছি,’ তিনি বলেছেন। তাকে এখন সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সোমবার তিনি নিজে থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে আসলে কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এএফপি নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, শুকরের হৃদপিণ্ডটিকে জেনেটিকালি রূপান্তর করা হয়েছে। কারণ সেখানে এমন কিছু জিন ছিল, যা বেনেটের শরীরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে। গ্রিফিথ বলেছেন, তারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে বেনেটকে পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্যদিকে বেনেটের ছেলে ডেভিড বেনেট জুনিয়র অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তারা কিছুই বুঝতে পারছেন না। গ্রিফিথ বলেছেন, ‘তার জন্য যা করা হয়েছে, তার গুরুত্ব তিনি বুঝতে পেরেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই কোন মানব শরীরে এমন অস্ত্রোপচার করিনি। আমি ভাবতে চাই, থেরাপি তাকে যা দিতে পারতো, আমরা তার চেয়ে ভালো একটি বিকল্প দিতে পেরেছি। কিন্তু তিনি একদিন, সপ্তাহ, মাস, নাকি বছর (বেঁচে থাকতে) থাকবেন, আমি তা জানি না।’ সূত্র : সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানব দেহ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ