পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নতুন বছর রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশনের অংশ হিসেবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ সেবা চালু হয়েছে। সবুজ রঙের অর্ধশত বাস কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার রুটে চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া এবং শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এতে দেখা যায় ব্যক্তিমালিকানার অন্য যে কোনো বাস ভাড়ার অর্ধেক ভাড়া ঢাকা নগর পরিবহনে নেয়া হচ্ছে। অথচ বাসগুলোয় যাত্রী সঙ্কট। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল নগর পরিবহনের বাসগুলো নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া কোথাও যাত্রী উঠানামা করে না। অন্য বাসগুলো যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানো নামানো করায় বেশি ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা ঠাঁসাঠাঁসি করে ওইসব বাসে যাতায়াত করছেন। যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা করায় রাজধানী ঢাকা শহরে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও যেখানে সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে চাঁদা আদায় এবং বাসের ড্রাইভারদের যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
পরিবহন সেক্টরে কার্যত নৈরাজ্য চলছে। একাদিকে বিআরটিএ’র বেঁধে দেয়া ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে; অন্যদিকে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো নামানো হচ্ছে। এতেকরে যাত্রীরা যেখানে সেখানে বাসে উঠার সুযোগ নিয়ে মূল স্টপেজে যেতে চান কম। তাছাড়া বাসের ড্রাইভারদের মধ্যে যাত্রী নেয়ার প্রতিযোগিতা তো রয়েছেই। এমনিতে লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার বেশি; তারপর অনেক বাস হেলপার চালিয়ে থাকেন। প্রতিদিন বাসের ড্রাইভারদের মালিক জমার টাকা নির্ধারিত করে দেন। এই টাকা জমা দেয়ার অর্থ সংগ্রহ, কয়েক দফায় পরিবহন মালিক, পরিবহণ শ্রমিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের কিছু ব্যক্তিকে প্রতিদিন নির্ধারিত চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়াও ড্রাইভার, হেলপার ও কন্ডাক্টরের দিনের বেতনের টাকা তুলতে হয়। এসব কারণে রাস্তায় এক বাস অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে যাত্রী নিতে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়াও যাত্রীদের মধ্যে যেখানে সেখানে বাসে উঠা ও বাস থেকে নামা এবং চলন্ত বাসে উঠানামার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আর একই রোডে সব গতির যানবাহন চলাচল করায় মোটর সাইকেল বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। এতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বাসের ড্রাইভাররা বেপরোয়া, তারা যাত্রী ধরতে প্রতিযোগিতা করেন। বেশিরভাগ ড্রাইভারের বৈধ লাইসেন্স নেই; আবার হেলপার দিয়ে বাস চলাচলের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে এটা ঠিক আছে। কিন্তু যাত্রী হিসেবে আমরা কী দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি। যেখানে সেখানে বাসে উঠানামা এবং চলন্ত বাস থেকে নামার মানসিকতা কি দুর্ঘটনার জন্য দায়ীয় নয়? আমাদের (যাত্রী) সচেতন না হলে দুর্ঘটনা কমবে না। ঢাকা নগর পরিবহনের নুরুদ্দিন নামের এক ড্রাইভার বলেন, সবুজ বাস স্টপেজ ছাড়া না থামায় যাত্রী কম হচ্ছে। যাত্রীদের মানিসকতা বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও যেখানে সেখানে থেকে উঠবো, যেখানে সেখানে নামব। যাত্রীদের এই মানসিকতার বদল ঘটাতে হবে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গত ৮ জানুয়ারি ২০২১ সালের দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ধরা হয়। এতে দেখা যায় ২০২১ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এসব দুর্ঘটনায় অন্তত ৬ হাজার ২৮৪ জন নিহত হয়। এতে ৭ হাজার ৪৬৮ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩৫.২৩ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে।
২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩৫.২৩ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩৪.২৪ শতাংশ পথচারী এবং ১২.৬৯ শতাংশ চালক ও হেলপার ছিলেন। গত বছর দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শতকরা ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে একই দিন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় গত বছর সারা দেশে ৩ হাজার ৭৯৩ সড়ক দুর্ঘটনা হয়। এসব দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ২৮৯ জন নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সরকারের কোনো পরিসংখ্যা নেই। বিভিন্ন দৈনিক, টেলিভিশনের কাটিং থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গত শনিবার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তান ঢালে নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দু’জন মারা যায়। ওই দুর্ঘটনা তদন্ত করে র্যাব গতকাল ঘটনা তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, জমার টাকা তুলতেই বেপরোয়া বাস চালাচ্ছিলেন চালক। মেঘলা পরিবহনের বাসের ড্রাইভার-মালিক চুক্তি অনুযায়ী দিনে বাসের মালিককে দিতে হয় ২ হাজার ২৫০ টাকা। স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালালে যে কয়টা ট্রিপ হয়, তাতে জমার টাকা তুলতেই বেগ পেতে হয় চালককে। তাই ট্রিপ বাড়াতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন মেঘলা পরিবহনের চালক রাকিব শরীফ। চালকের হালকা পরিবহন চালানোর লাইসেন্স ছিল। এই লাইসেন্স দিয়েই তিনি ভারী যানবাহন চালাচ্ছিলেন।
মেঘলা পরিবহনের বাসের ওই ড্রাইভারের মতোই অন্যান্য পরিবহনের বাসগুলো ড্রাইভাররা চলাচ্ছেন। অনুসন্ধান করে দেখা যায় ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার চালিত বাস যত্রতত্র আটক করা হয়। অতপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাগজ দেখার নাম করে একশ টাকা নিয়ে বাসগুলো ছেড়ে দেন। আবার একটি রুটের বাসে তিন থেকে চার স্পটে চাঁদা দিতে হয়। ফলে ড্রাইভাররা বাড়তি টাকা উঠাতে বেপরোয়াভাবে বাস চালান এবং যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা করান। আবার যাত্রীদের মধ্যে অনেক যাত্রী অবিবেচকের মতো যেখানে সেখানে বাসে উঠেন; আবার যেখানে সেখানে নামেন। বাসের ড্রাইভাররা কোথাও যাত্রীদের নামাতে না চাইলে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। ফলে বাধ্য হয়েই বাসের ড্রাইভার যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছেন। এসব কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তা ছাড়াও আমরা যারা গণপরিবহনে যাতায়াত করে থাকি তাদের সচেতন সুনাগরিক হওয়া উচিত। নির্ধারিত স্টপেজে উঠা এবং বাস থেকে নামার অভ্যাস করা উচিত। যাত্রীদের সচেতনতা ছাড়া দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না। সবার উচিত অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের দিকে তাকানো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।