নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক এক জয়ের পর আরো বড় স্বপ্ন নিয়ে ক্রাইস্টচার্চে এসেছিল বাংলাদেশ। তবে প্রথম দিনেই মুমিনুল হকদের সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে নিউজিল্যান্ড। তবে গোটা নিউজিল্যান্ড বললে ভুল হবে, হ্যাগলি ওভালের সবুজ উইকেটে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশকে সে দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন টম ল্যাথাম, উইল ইয়াং, ডেভন কনওয়েরা। সারা দিনে বাংলাদেশ নিতে পেরেছে কেবল ১ উইকেট। যে ভেন্যুতে প্রথম ইনিংসে গড় স্কোর ছিল ২৮২ রান, নিউজিল্যান্ড প্রথম দিনেই তুলেছে ৩৪৯ রান। দিনশেষে কিউই অধিনায়ক ল্যাথাম অপরাজিত ১৮৬ রানে, উইল ইয়াংয়ের সঙ্গে ১৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পর ডেভন কনওয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে যোগ করেছেন আরও ২০১ রান। এর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট হারিয়ে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল ২৮৯ রান, ১৯৯৯ সালে করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ড পেরিয়ে গেছে সেটিও।
দিনের নবম ওভারে ইবাদত হোসেনের বলে দুইবার এলবিডব্ল হয়েও রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন ল্যাথাম। এরপর বাকিটা সময় বাংলাদেশ বোলাররা পিষ্ট হলেন তার ব্যাটে। আগের ম্যাচে প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়ে ফেরা ল্যাথাম ঘরের মাঠে সাজিয়ে বসলেন শটের পসরা। শুরু থেকেই ফুললেংথে পেলে ড্রাইভ করেছেন, খেলেছেন কাট-পুলও। পুরো ইনিংসেই পায়ের দুর্দান্ত ব্যবহার করেছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া ছাড়াও ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন। ব্যাটে কানায় লেগে ক্যাচ উঠলেও সেসব গেছে সিøপের মাঝ দিয়ে, অথবা পড়েছে ফিল্ডারের একটু আগে। অবশ্য এমন ইনিংসে সে সব বোধহয় ল্যাথামের প্রাপ্যই। কনওয়েও ছিলেন শুরু থেকেই দাপুটে।
বাংলাদেশের হতাশার শুরু প্রথম সেশন থেকেই, যেটি তারা কাটিয়েছে উইকেটশূন্য। এমন সবুজ আর বাউন্সি উইকেটে যে লাইন-লেংথে করলে ফল মেলার কথা, বাংলাদেশ পেসাররা সেটা করতে পারেননি ধারাবাহিকভাবে। তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনরা হয় করেছেন বেশি ফুললেংথে—যে সব হয়ে গেছে হাফ ভলি, আর না হলে করেছেন অফস্টাম্পের বাইরে শর্টলেংথে। মাশুল গুণতে হয়েছে নিয়মিতই, মধ্যাহ্নবিরতির আগেই ল্যাথাম ও ইয়াংয়ের জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকে তুলে ফেলে ৯২ রান, অর্ধশতক করেন ল্যাথাম।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই অবশ্য উইকেট পেতে পারতেন ইবাদত। বিরতির পর প্রথম ওভারেই তার বলে সিøপে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইল ইয়াং। তবে দ্বিতীয় সিøপ থেকে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা নিতে গিয়ে মিস করেছেন লিটন দাস। তিনি চেষ্টা না করলে হয়তো ক্যাচটা যেত প্রথম সিøপে থাকা নাজমুল হোসেনের কাছেই। ঘটনার সেখানেই শেষ নয়। লিটনের হাত গলে বেরিয়ে যাওয়া বলটা গিয়েছিল ফাইন লেগের দিকে, সেখান থেকে থ্রো এসেছিল উইকেটকিপার নুরুল হাসানের কাছে। তবে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে নুরুলের থ্রো-টা গেল স্টাম্পকে ফাঁকি দিয়ে সীমানার দিকে। আশেপাশে কেউ ছিলেন না, ইবাদতই তাই ছোটা শুরু করলেন, তবে থামাতে পারলেন না বলটা। যে বলে আউট হতে পারতেন, ইয়াং সে বলেই পেয়ে গেলেন ৭ রান! সেখানেই শেষ নয়, ইবাদতের পরের ওভারে হয়েছে আরেকটি থ্রো, সেটিতেও এসেছে ৫ রান!
এরপর ল্যাথাম-ইয়াংয়ের জুটি ছুঁয়ে ফেলে ১০০ রান। ২০১২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও মার্টিন গাপটিলের পর এই প্রথমবার প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে উদ্বোধনী জুটিতে উঠলো শতরান।
৯৮ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করা ইয়াংকে ফিরিয়ে এরপর বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু দেন শরীফুল ইসলাম, ইনিংসের ৩৮তম ওভারে গিয়ে। শরীফুলের ফুললেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ইয়াং। শেষ পর্যন্ত দিনে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য হয়ে থেকেছে সেটিই। ৯৪ রানে শরীফুলের শর্ট বলে একবার ক্যাচ তুলেও ফিল্ডারদের নাগালের বাইরে পড়ায় বেঁচে যাওয়া ল্যাথাম শতক পূর্ণ করেছেন মাত্র ১৩৩ বলে। ক্রাইস্টচার্চের ঘরের ছেলের ক্যারিয়ারে এটি ১২তম শতক। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতকের তালিকায় এখন ল্যাথামের ওপর থাকলেন শুধু কেইন উইলিয়ামসন, রস টেইলর ও মার্টিন ক্রো।
দ্বিতীয় সেশন যেখানে শেষ করেছিলেন ল্যাথাম-কনওয়ে, শেষ সেশনটা শুরু করেছেন সেখান থেকেই। ১৯৯ বলে দেড় শ পূর্ণ করেন ল্যাথাম, ইবাদতকে চার মেরে। ওই শটেই কনওয়ের সঙ্গে তার জুটি ছুঁয়ে ফেলে এক শ। এরপর ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় উইকেটে আগের সর্বোচ্চ ১২৩ রানের জুটি ছাড়িয়ে যান দুজন, যে রেকর্ড এর আগে ছিল ইংল্যান্ডের জেমস ভিন্স ও মার্ক স্টোনম্যানের। ৭৬তম ওভারে ক্রাইস্টচার্চের প্রথম ইনিংসের ২৮২ রানের আগের গড় স্কোর ছাড়িয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
আবারও চারজন স্বীকৃত বোলার নিয়ে নামা বাংলাদেশ এবার ভুগেছে বোলিং-সহায়ক কন্ডিশনে। মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর শুরু থেকেই চড়াও হয়েছিলেন কিউইরা, রান আটকে রাখার কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেননি এ অফ স্পিনার। মাঝে নাজমুল হোসেনকে বোলিংয়ে এনেছিলেন মুমিনুল, অবশ্য দ্বিতীয় নতুন বল নিতে ২ ওভার অপেক্ষাই করেছেন তিনি। মিরাজের বলে একটা রিভিউ নিয়েছিলেন ল্যাথামকে কট-বিহাইন্ড করতে, তবে আল্ট্রা-এজ কোনো আশা জোগাতে পারেনি। ল্যাথামের বড় স্কোরের দিনে কনওয়ে ছুটেছেন আরেকবার। শতক না পেলেও ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ ম্যাচশেষে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তিনি উঠে এসেছে চার নম্বরে, ছাড়িয়ে গেছেন ডন ব্র্যাডম্যানকে।
দিনের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে কনওয়ে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিয়েছিলেন ল্যাথামকে, সেটি আর ফিরে পাননি। ৯৯ রানে অপরাজিত থেকেই রাতটা কাটাতে হয়েছে তাঁকে। কনওয়েকে শতক পেতে না দেওয়া- এমন দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বোধহয় ওইটুকুই। বিদায়ী টেস্টের প্রথম দিনে দীর্ঘক্ষণ প্যাড পরে বসে থেকেও মাঠে নামতে পারেননি টেইলর। তাতে নিশ্চয়ই তিনি হতাশ নন দেশসেরা এই ব্যাটার। তবে বাংলাদেশের জন্য দিনটা নিশ্চিতভাবেই হতাশাময়।
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ৩৪৯/১ (ল্যাথাম ১৮৬*, ইয়াং ৫৪, কনওয়ে ৯৯*; তাসকিন ০/৬৮, শরিফুল ১/৫০, ইবাদত ০/১১৪, মিরাজ ০/৯৫, শান্ত ০/১৫)।
প্রথম দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।