Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোরআন-হাদিসের বিকল্প নেই : খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

চতুর্দিকে শুধু অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা। সুতরাং অশান্ত পৃথিবীকে শান্তি পূর্ণ করতে হলে মহান আল্লাহর নাজিলকৃত পবিত্র কোরআন ও হাদিসের সুশিক্ষা প্রতিটি মানুষকে গ্রহণ করে তার আলোকে জীবনযাপন করতে হবে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোরআন হাদিসের কোনো বিকল্প নেই। গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামই সঠিক ধর্ম। যার মধ্যে বাড়াবাড়ি নেই ছাড়াছড়ি নেই এবং কোনো বক্রতাও নেই। ইসলাম মানুষের মাঝে মুসলমানের মাঝে বিভক্তিকে অনুমোদন করে না। তাইতো আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত মুমিন ভাই ভাই সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করো আর আল্লাহকে ভয় করো আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন।’ রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তার নিজের জন্য যেই জিনিসটা ভালোবাসে সেটা তার অপর ভাইয়ের জন্য ভালো না বাসবে।’

ইসলাম এমন এক ধর্ম যা গরিব-ধনী শক্তিশালী দুর্বল রাজা-প্রজা এর মাঝে পার্থক্য পছন্দ করে না। বরং প্রত্যেকের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার দাবি রাখে। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো আর এটাই হল তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী।’ হাদিস শরিফে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই যার হাত এবং জবান থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ নিশ্চয় ইসলাম কারো প্রতি জুলুম করে না এবং জুলুমকে সমর্থনও করে না বরং মানুষকে শান্তি দয়া ও মহব্বতের প্রতি আহবান করে। হাদিস শরিফে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা কেয়ামত দিবসে বলবেন, আমার মহব্বতকারীরা কোথায়? আমার ইজ্জতের কসম, আমি আজকে তাদেরকে আমার আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দান করব। যেদিন আমার আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।’ আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ইসলামের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, আজ বিশ্ব পরিস্থিতি নাযুক অবস্থায় পৌঁছেছে। সারা পৃথিবীর মানুষ অশান্তির আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে। চতুর্দিকে শুধু অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা। সুতরাং অশান্ত পৃথিবীকে শান্তি পূর্ণ করতে হলে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাজিলকৃত পবিত্র কোরআন ও হাদিসের সুশিক্ষা প্রতিটি মানুষকে গ্রহণ করে তার আলোকে জীবনযাপন করতে হবে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোরআন হাদিসের কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে ‘এটি (কোরআন) সেই কিতাব যাতে (মহান আল্লাহ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে) কোনো সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহভীরু হতে ইচ্ছুক লোকদের জন্য (সার্বিক বিষয়ে) পথ প্রদর্শনকারী।’ (সূরাতুল বাকারা,২)। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে ‘এটি রমজান মাস যাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের (সার্বিক বিষয়ের) জন্য পথপ্রদর্শক এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যকারী।’ (সূরা আল বাকারা,১৮৫)। রাসূলে কারিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যিনি কোরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি শরিফ)। আলোচ্য হাদিস থেকে বুঝা যায় যে ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো পবিত্র কোরআনের সুশিক্ষা অর্জন করা। রাসূলে কারিম (সা.) আরো এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশুদ্ধভাবে কোরআন পড়ল এবং কোরআনের বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করল, কেয়ামত দিবসে তার পিতামাতাকে এমন একটি মুকুট পড়িয়ে দেয়া হবে যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও অধিকতর হবে। যদিও সেই সূর্য তোমাদের ঘরের ভেতরেও থাকে। তাহলে ওই ব্যক্তির (মর্যাদার) ব্যাপারে তোমাদের কি ধারণা যে ব্যক্তি এই কোরআনের বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করে।’ (আহমাদ, আবু দাউদ) সুতরাং আলোচ্য আয়াত ও হাদিসের আলোকে এ কথা প্রতীয়মান হয়েছে যে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের শান্তি শৃঙ্খলা মুক্তি এবং মর্যাদানির্ভর করে কোরআন ও হাদিসের সুশিক্ষার ওপর। অন্যথায় উভয় জগতের মানবীয় জীবনে শুধু অশান্তিই সৃষ্টি হবে। মহান আল্লাহ সবাইকে নেক আমলের জিন্দেগি দান করুন। আমীন।

নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল হক আমিনী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বৈধ ও হালাল উপার্জনের ওপর নির্ভর করা এবং অবৈধ ও হারাম উপার্জন বর্জন করা মুসলমানদের জন্য অন্যতম ফরজ ইবাদত। শুধু তাই নয়, এর ওপর নির্ভর করে তার অন্যান্য ফরজ ও নফল ইবাদত আল্লাহর নিকট কবুল হওয়া বা না হওয়া। বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার কারণে অনেক মুসলিম এ বিষয়ে কঠিন বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত।

অনেক ধার্মিক মানুষ রয়েছেন যারা সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদির বিষয়ে অনেক সচেতন হলেও হারাম উপার্জনের বিষয়ে মোটেও সচেতন নন। খতিব বলেন, কোরআন হাদিসের দৃষ্টিতে এটি বক ধার্মিকতা ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ বলেন : হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবহিত। (সূরা মুমিনুন: আয়াত-৫১)। এখানে আমরা দেখছি যে, পবিত্র বস্তু হতে আহার করা সৎকর্ম করার পূর্বশর্ত।

খতিব বলেন, অবৈধ উপার্জন থেকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করার জন্য তা বিচারকগণের নিকট পেশ করো না’ (সূরা বাকারা: আয়াত-১৮৮)। কোরআন ও হাদিসে বিশেষ কয়েক প্রকার অবৈধ উপার্জনের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। খতিব বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ বা অবৈধভাবে কোনো মুসলিমের অধিকার ছিনিয়ে নিবে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করবেন এবং জান্নাত তার জন্য নিষিদ্ধ করবেন।’ এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল, যদি সামান্য কোন দ্রব্য হয়? তিনি বললেন, ‘আরাক গাছের একটি কর্তিত ডালও যদি এভাবে গ্রহণ করে তাহলে এই শাস্তি।’ (সহিহ মুসলিম : ১/১২২)। আল্লাহ সবাইকে ইসলামের সহি বুঝ দান করুনÑ আমীন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ