যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা তুলে ধরতে সেখানে দেশের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিট। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈঠকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কাছে বাংলাদেশের বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের এলিট ফোর্সের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির পর্যবেক্ষণে এমনটি মনে হয়েছে। কোনো না কোনো লবিস্ট গ্রুপ বা পিআর প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করছে। তাই এর কাউন্টার হিসেবে সেদেশে বাংলাদেশের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগের করা প্রয়োজন বলে মনে করছে বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বা কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে অনেকে লবিং করে থাকেন। এসব কাজের জন্য লবিস্ট আছে। পিআর প্রতিষ্ঠান আছে। রাজনৈতিক কারণে অনেক নেতিবাচক তথ্য তাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তাই সেখানে কাজ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করা হলে সঠিক তথ্য সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে ভূ-রাজনীতিও জড়িত বলে সরকার মনে করছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তখন আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে দূতাবাসকে আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। এই তালিকায় বাংলাদেশের র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ জন কর্মকর্তার নাম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ১৫ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপ হয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীঅ্যান্থনি ব্লিনকেনের। পরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠান মোমেন।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে এক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সংসদীয় কমিটিতে তলবের প্রস্তাব তোলেন। ওই সদস্য বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানালো তখন বিষয়টি সামনে আসলো। আগে থেকে কোনো তথ্য কেন পাওয়া যায়নি। তবে সংসদীয় কমিটি এ প্রস্তাব আমলে নেয়নি। তবে প্রয়োজন হলে সংসদীয় কমিটি যুক্তরাষ্ট্র সফর করবে এবং সেখানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে বলে জানানো হয়।
বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে বিমানের বাড়তি ভাড়া কমাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিমানভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করায় তা নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে ওই সুপারিশ করা হয়।
কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ফ্রান্স ও মালদ্বীপ সফর নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর এ সরকারি সফর বাংলাদেশ-ফ্রান্স এবং বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। আলোচনা শেষে কমিটির পক্ষ থেকে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম জোরদার করার সুপারিশ করা হয়।
মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স ও মো. আব্দুল মজিদ খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।