পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের তীব্র বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছে মধ্য এশিয়ার তেল-সমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানের সরকার। বুধবার কাজাখ সরকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। কাজাখ প্রেসিডেন্টের দফতরের বরাত দিয়ে বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আগে জ্বালানি পণ্য এলপিজির দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু মঙ্গলবার এলপিজির ওপর থেকে সেই প্রাইস ক্যাপ তুলে নেওয়া হয়। ফলে অনেকটাই বেড়ে যায় এলপিজির দাম। ফলে মঙ্গলবার থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে সেই প্রতিবাদ সহিংস হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজাখস্তানের সরকার প্রথমে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে। বড় শহরগুলোতে লকডাউনও ছিল। এরপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। শেষ পর্যন্ত পুরো সরকার নিয়ে পদত্যাগ করেন কাজাখ প্রধানমন্ত্রী। বুধবার প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। তিনি স্মাইলভকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, মঙ্গলবার কাজাখস্তানের অয়েল হাব বলে পরিচিত মেঙ্গিস্টা শহরে প্রতিবাদ শুরু হয়। দ্রুত এই বিক্ষোভ অন্য শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। রাতেও বিক্ষোভকারীরা শহরের রাস্তায় ছিলেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ শহর আলমাটিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুঁড়েও বিক্ষোভ সামাল দিতে পারেনি। বিক্ষোভকারীরা সরকার ও সামরিক ভবনগুলোতে হামলার ডাক দেয়। প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বলেছেন, এই ধরনের প্রতিবাদ অন্যায়। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত বিক্ষোভকারীদের। এছাড়া এই সহিংসতার পেছনে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি প্ররোচকদের হাত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। উল্লেখ্য, কাজাখস্তানে অনেকেই এলপিজিতে গাড়ি চালান। সরকার এতোদিন দাম নিয়ন্ত্রণ করে রাখায় গ্যাসোলিনের চেয়ে এলপিজিতে গাড়ি চালানো সস্তা ছিল। সরকার সেই এলপিজির দাম বাড়ানোয় প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। যার জেরে সরকারের পতন হলো। খবরে বলা হয়, দেশটিতে গাড়ির জনপ্রিয় জ্বালানি এলপিজির দাম শনিবার দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করার পরদিন রোববার তেল সমৃদ্ধ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মানজিস্তাউয়ে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে আলমাতিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ, আলমাতি ও মানজিস্তাউসহ বিভিন্ন এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করে সহিংসতার জন্য দেশি ও বিদেশি ইন্ধনদাতাদের দায়ী করেন। জরুরি অবস্থার মধ্যে কারফিউ ও লোকজনের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পৃথকভাবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলমাতির পাশাপাশি মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শাইমক্যান্ত ও তারাজে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলোতে হামলা চালিয়েছে। এসব ঘটনায় ৯৫ জন পুলিশ আহত হয়। অপরদিকে পুলিশ দুই শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে। মন্ত্রিসভার ভারপ্রাপ্ত সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে তোকায়েভ তাদের ও প্রাদেশিক গভর্নরদের এলপিজির আগের দাম ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি গ্যাসোলিন, ডিজেল ও ‘সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ অন্যান্য যেসব ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল সেগুলোর আগের মূল্য পুনর্বহালেরও নির্দেশ দেন। তিনি বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির দাম স্থিতিশীল রাখা ও দরিদ্র পরিবারগুলোর ভাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার নির্দেশ দেন। জরুরি অবস্থার জারির পর বিক্ষোভ কবলিত শহরগুলোর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আলমাতির মেয়র শহরটির বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছেন, শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ‘উস্কানিদাতা ও চরমপন্থিদের’ আটক করছে। রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।