Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

একই শিল্পীকে নিয়ে নরওয়ের বিশাল মিউজিয়াম

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৭ এএম

নরওয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পী এডভার্ড মুংকের ‘স্ক্রিম' নামের ছবিটি বিশ্ববিখ্যাত৷ শিল্পীর বিশাল সংগ্রহ এবার অভিনব এক মিউজিয়াম ভবনে শোভা পাচ্ছে৷ ভবনটির স্থাপত্যও শিল্পীর মনোভাবের সঙ্গে দিব্যি খাপ খেয়ে যায়৷

অসলোর ওয়াটারফ্রন্ট এলাকায় প্রায় ৬০ মিটার দীর্ঘ মুংক মিউজিয়াম শোভা পাচ্ছে৷ কোনো একজন শিল্পীর জন্য বিশ্বের অন্য কোথাও এত বড় মিউজিয়াম তৈরি হয় নি৷ স্থাপত্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটা ছিল বিশাল এক চ্যালেঞ্জ৷ এস্টুডিও এরেরোস সংস্থার স্থপতি ইয়েন্স রিশটার এর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, ‘‘শিল্পী এডভার্ট মুংকের যোগ্য একটি ভবন কীভাবে তৈরি করতে পারি, যেটি তার বিদ্রোহী সত্ত্বাকে একটা আকার দিতে পারে? স্থপতি হিসেবে প্রতিদিন তো এমন দায়িত্ব আসে না!''

মিউজিয়ামে প্রায় ২৭,০০০ শিল্পকীর্তি রয়েছে৷ ১৯৪৪ সালে মৃত্যুর আগে এডভার্ট মুংক উইল করে নিজের সৃষ্ট তৈলচিত্র, ভাস্কর্য, স্কেচ অসলো শহর কর্তৃপক্ষকে দিয়ে গিয়েছিলেন৷ ১৩ তলার তথাকথিত ‘ভার্টিকাল' মিউজিয়ামের সাতটি তলায় সেই সব শিল্পকর্ম দেখার সুযোগ রয়েছে৷ ইয়েন্স রিশটার বলেন, ‘‘ভার্টিকাল মিউজিয়াম আমাদের এডভার্ট মুংকের সঙ্গে শহরের সংযোগের স্বাদ নেবার সুযোগ দিচ্ছে৷ অর্থাৎ দর্শক হিসেবে এই ভবনের উপরে ওঠার সময়ে বাইরের জগতের সঙ্গে সংযোগ কখনো বন্ধ হয় না৷''

সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করতে শিল্পকর্মগুলি জানালাহীন ঘরে শোভা পাচ্ছে৷ এডভার্ড মুংকের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পসৃষ্টি ‘স্ক্রিম'-এর একটি সংস্করণও মিউজিয়ামে রয়েছে৷ সেটিকে এক্সপ্রেশানিজম বা অভিব্যক্তিবাদ শৈলির পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করা হয়৷ মুংক বার বার বিষন্নতা ও হতাশাজনক অভিজ্ঞতার শৈল্পিক রূপ দিয়েছেন৷ মুংক মিউজিয়ামের প্রধান স্টাইন ওলাফ হেনরিকসেন মনে করেন, ‘‘এডভার্ড মুংক মানুষের অবস্থার সবচেয়ে অস্তিত্বগত দিকগুলি তুলে ধরেছেন৷ শিল্পী হিসেবে তিনি তাঁর ভাষারও উন্নতি করে গেছেন৷ ফলে সহজেই যোগাযোগ গড়ে তোলা গেছে৷ সবাই তাঁর বিষয়বস্তু বুঝতে পেরেছেন৷''

অসলো শহরের নতুন রিভারফ্রন্টে মিউজিয়ামটি সারিবদ্ধ ভবনগুলির মাঝে অবস্থিত৷ আগে সেখানে বন্দর ছিল৷ কাছেই নতুন অপেরা ভবন এবং গত বছরে নির্মিত ডাইশমান লাইব্রেরিও রয়েছে৷ শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে এলাকাটি৷ হেনরিকসেন বলেন, ‘‘এডভার্ড মুংক এখন আমাদের পরিচয়, আমাদের দেশের এবং শিল্পের ইতিহাসের অঙ্গ৷ বাকি বিশ্বে তাঁর প্রাসঙ্গিকতার কারণে নরওয়ের মানুষও গর্ব বোধ করেন৷ তিনি আমাদের সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক শিল্পী৷''

সাবেক মুংক মিউজিয়ামটি শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে দূরে ছিল৷ ছোট জায়গায় সামান্য কয়েকটি শিল্পকর্ম স্থান পেতো৷ তা সত্ত্বেও নতুন ভবনে স্থানান্তরের বিষয়টিকে ঘিরে কম বিতর্ক হয় নি৷ শুধু নির্মাণের জন্য ২৫ কোটিরও বেশি ইউরো ব্যয় করা হয়েছিল৷

সবচেয়ে বড় ছবিগুলি ক্রেনের সাহায্যে এক ফাটলের মধ্য দিয়ে নতুন মিউজিয়ামে ঢোকানো হয়েছিল৷ হেনরিকসেন মনে করিয়ে দেন, ‘‘পুরানো মিউজিয়ামে একটি মাত্র প্রদর্শনীর জায়গা ছিল৷ এখানে ১১টি স্পেস রয়েছে৷ ফলে আমরা এডভার্ড মুংকের প্রায় ২৭,০০০ শিল্পকীর্তির সংগ্রহের আরও বেশি অংশ প্রদর্শন করতে পারি৷ সাময়িক প্রদর্শনী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের কাজ দেখানোর সুযোগও রয়েছে৷''

মিউজিয়ামে দর্শকদের জন্য বাঁধাধরা কোনো গতিপথ স্থির করা হয়নি৷ অসংখ্য এস্কালেটরের মাধ্যমে উপর-নীচ করা যায়৷ ভোরে বা সন্ধ্যার আলোয় মিউজিয়াম ভবনটিকে জীবন্ত প্রাণী বলে মনে হয়৷ স্থপতি হিসেবে ইয়েন্স রিশটার বলেন, ‘‘সন্ধ্যার আলো পড়লে ভবনের বাইরের অংশে প্রায় স্বচ্ছ দেওয়াল জীবন্ত হয়ে ওঠে৷ বিশেষ করে পশ্চিম দিকটি শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে থাকায় সেটা যেন বিশাল পর্দা হয়ে যায়৷ দর্শকদের আনাগোনা ও আচরণ সেই পর্দায় ফুটে ওঠে৷''

অসলো শহরের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে চাইলে মিউজিয়াম ভবনের উপরে ভিউয়িং প্ল্যাটফর্মে যেতে হবে৷ মুংকের অসংখ্য শিল্পকীর্তি দেখার মাঝে দু-দণ্ড জিরিয়ে নেবার জন্যও জায়গাটি উপযুক্ত৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ