Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান সুপ্রিম কোর্ট বারের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার। গতকাল রোববার বছরের প্রথম কার্যদিবসে নয়া প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে একজন বিচারপ্রার্থীর সর্বশেষ আশা-ভরসার স্থল। এই অঙ্গনকে কুলষমুক্ত রাখা, দুর্নীতিমুক্ত রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা সদা-সর্বদা সোচ্চার। তবে সমিতির সদস্য হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকি। আপনার কার্যকালের এই প্রথম কর্ম দিবসে তার কয়েকটি বিষয় আমি সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেন, বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারি মোশন বেঞ্চগুলো থেকে স্বল্প মেয়াদে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিকভাবে ৬ মাস বা এক বছর। জামিন প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে আদেশ নামানো। আদেশ ডেসপাস করা প্রতিটি ক্ষেত্রেই অহেতুক নানাবিধ অতিরিক্ত পয়সা খরচ করতে হয়। অথচ আদালতে ফাইল আনা, ফাইল পাঠানো কিংবা আদেশ পাঠানো আইনগতভাবে অত্র আদালতের প্রশাসনিক দায়িত্ব। নবীন আইনজীবীরা এটিই যে নিয়ম সেটিই আজ ভুলতে বসেছে।’

অনিয়ম এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মনে হয় এসব প্রশাসনিক কাজ সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বা আইনজীবী সহকারীর দায়িত্ব। এ কারণে বিচার প্রশাসনে নানারকম দুর্নীতি ও অনিয়ম ঘটছে। একটি মামলা এফিডেভিট করে দায়েরের পর আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে ও আদালতের আদেশের পর আদেশ পাঠানো পর্যন্ত পদে পদে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। কোনো মামলা জামিন কিংবা স্থগিতাদেশ বৃদ্ধির জন্য সময়মত নির্দিষ্ট আদালতে ফাইল না আসা কিংবা আদেশ সময়মত নিম্ন আদালতে না পৌঁছার ফলে জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তির অহরহ নিম্ন আদালত কর্তৃক পুনরায় কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ঘটছে। এসব সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করার জন্য আপনার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, হাইকোর্ট প্রদত্ত অন্তর্বর্তীকালীন যেকোনো আদেশ, বিশেষ করে জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেম্বার জজ আদালতে একতরফা শুনানি হয়ে থাকে। যেহেতু প্রতিটি আবেদনপত্রে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর মোবাইল নম্বর থাকে, আপিল শুনানির পূর্বে আপিলকারী পক্ষ কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে মামলা দায়েরকারী আইনজীবীকে অবহিত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে অবহিত করণের বিষয়ে সহযোগিতা দেয়া হবে।

আপিল বিভাগ ও সিনিয়র আইনজীবী তালিকাভুক্তির জন্য নীতিমালা করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক বলেন, আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তি, অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড হিসেবে তালিকাভুক্তি ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে সম্মাননা প্রদানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মানদন্ড ও নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। কোনো একজন ল’ গ্র্যাজুয়েট নিম্ন আদালতে আইনজীবী হওয়ার জন্য বার কাউন্সিল নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রথমে এমসিকিউ, পরবর্তীতে লিখিত ও সর্বশেষ ভাইভা দিয়ে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও অনুরূপভাবে এমসিকিউ, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। একটি তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হয়। অথচ আপিল বিভাগে তালিকাভুক্তির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম বা মানদন্ড না থাকায় অধিকাংশ আইনজীবী তালিকাভুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন না।
২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বেশ ক’জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করা আছে যারা অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এর স্বচ্ছতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পান। আমরা মনে করি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে আপিল বিভাগে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্তি, অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড তালিকাভুক্তি ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে সম্মাননার বিষয়টি নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ