চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলামের অন্তর্গত প্রত্যেকটা মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা। আল্লাহর নিকট আনুগত্যের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া বিধান ও হযরত মুহাম্মদ (সা:) প্রদর্শিত পথে নিচের জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহর আনুগত্যকারীর জন্য আল্লাহ যেমন জান্নাতের ব্যবস্থা করেছেন তেমনি বিরুদ্ধাচারণ করলে শাস্তির ব্যবস্থাও করেছেন। জান্নাত কিংবা জাহান্নামে জন্য নয় একজন তাকওয়াবান মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। কিন্তু আমরা প্রাত্যহিক জীবনে হরহামেশাই আল্লাহকে ভুলে যাই এবং নিজের অন্তর আত্মার কু-প্ররোচনায় ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল ব্যস্ত থাকি। আল্লাহ কুরআনের মধ্যে স্পষ্ট করে কিছু বিষয় উল্লেখ করে দিয়েছেন যেগুলো তার পছন্দ নয় তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সীমা লঙ্ঘনকারী।
আল্লাহ কুরআনে বলেন- সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯০) তাহলে স্পষ্ট যে আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করে না। আল্লাহ আমাদের পৃথিবীর পাঠিয়েছেন তার প্রতিনিধি হিসেবে তার আনুগত্য ও ইবাদত করতে কিন্তু আমরা করছি ব্যক্তি পূজা। কেউ কেউ পার্থিব সুখ শান্তির জন্য একজন আর একজনকে খুন পর্যন্ত করছে। আল্লাহ আমাদের শক্তি দিয়েছেন কথা বলার জন্য জিহ্বাও দিয়েছেন কিন্তু আবার এটাও স্পষ্ট করেছেন হাদিসের মধ্যে : যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন। (মিশকাত তাহকীক সানী (৩৩), সহীহাহ (৫৪৯)।
কিন্তু আমরা বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করছি সমাজে কতিপয় ব্যক্তি তার হাত ও জিহ্বা দিয়ে শুধু কষ্ট নয় রীতিমতো আগ্রাসন চালাচ্ছে । তারা ক্ষমতা আর ব্যক্তি দাম্ভিকতায় এতটাই উচ্ছৃঙ্খলতা প্রকাশ করছে যা সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিক স্খলন ঘটাচ্ছে যা সীমা লঙ্ঘনকারীর আরো একধাপ উপরে। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আমাদের হওয়া উচিত সত্য সুন্দর কিন্তু সমাজে দেখা যাচ্ছে এর ব্যতিক্রম চিত্র কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না সমাজ হয়ে উঠছে ঈর্ষাপরায়ণ। আর ঈর্ষা আর হিংসা কি পরিমাণ ভয়ঙ্কর তা মহানবীর কথায় স্পষ্ট তিনি বলেন-
Jealousy (Hasad) is the Disease of Soul. Jealousy is a kind of feeling that leaves the heart of a jealous person impure and empty of faith.
হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে যখন জিজ্ঞেস করা হলো: Who are the best people? He (P.B.U.H) replied `the one with a clean heart and truthful tongue'. He (P.B.U.H) was then again asked that a truthful tongue is understandable but what does a clean heart mean? Prophet Mohammad (P.B.U.H) answered, it is the heart of one that is pious, pure, and is free of sin, transgressions, hatred and Hasad.' [Ibn Majah]
মহানবীর কথায় পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে একজন ভালো মানুষ হতে হলে সীমা লঙ্ঘন, হিংসা, ঈর্ষা ও বিদ্বেষমূলক আচরণ পরিহার করতে হবে। কিন্তু মহানবীর এই অমিয় বাণী আমরা কি ব্যক্তি জীবন পারিবারিক জীবন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে সক্ষম হচ্ছি কি? অবশ্যই না এই আদর্শ চর্চা করতে পারলে সমাজ তথা রাষ্ট্র আজ স্বপ্নের সোঁনার বাংলাদেশে পরিণত হতো। সময় থাকতে আমাদের উচিত আল্লাহর বিধান মানা, হিংসা, সীমা লঙ্ঘন ও অহংকার না করা। কারণ এই সকল অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে : Abu Bakrah reported: The Messenger of Allah, peace and blessings be upon him, said, `No sin deserves quicker punishment from Allah Almighty for its doer in the world, along with what is prepared for him in the Hereafter, than transgression and severing family ties.' (Source: Sunan al-Tirmidhi 2511)| ।
অর্থাৎ আল্লাহ করা বার্তা দিয়েছেন দুনিয়ায় মোহে অন্ধ হইও না কারণ সীমা লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি আল্লাহ সবার আগে কার্যকর করবেন। আর মহান সৃষ্টিকর্তা এতটাই পরাক্রমশালী যে সব কিছু তার অবগত এ বিষয়ে কুরআনে উল্লেখ আছে : তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে আল্লাহকে অধিক ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব কিছুর খবর রাখেন।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১৩)। সুতরাং কোন অন্যায় করে আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব না তাই আত্মশুদ্ধির পথ বেঁচে নেওয়াই উত্তম আমরা সব সময় চেষ্টা করবো আমাদের কথা, কাজে ব্যবহারে যেন সীমা লঙ্ঘন না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।