Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস

শাহাদাৎ হোসেন | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

পৃথিবীতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনা, যা আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেন নি। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আগে থেকেই সে সম্পর্কে জানেন এবং সেই ঘটনার সাথে তার ইচ্ছাও রয়েছে। ইমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রোকন হলো তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস। তাকদীরের প্রতি ইমান আনয়ন করা মানে উহার ভাল-মন্দ উভয়ের প্রতিই বিশ্বাস করা। প্রতিটি বস্তুতে সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ তায়া’লা নির্ধারিত প্রকৃতি প্রদত্ত তার নিজস্ব কিছু গুণ, ক্ষমতা ও সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে। বস্তুর অন্তর্নিহিত গুণাগুণকে ‘কদর’ বলা হয়। তাকদির অর্থ ভাগ্য। বান্দার তাকদির আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। বান্দার ভালো মন্দ যা কিছু হোক তা সবই আল্লাহর হুকুমে হবে। দুনিয়ায় ভালো কিছু পাওয়া গেলে আত্মহারা হয়ে যাওয়া যাবে না আবার কোন বিপদ আপদে পড়লে হতাশ হওয়া যাবে না। বরং এটি আল্লাহর দান। তাই এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়া’লার শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। সুতরাং আমাদের আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। ভালো-খারাপ অবস্থায় সবর বা ধৈর্য রাখতে হবে। তাকদিরে বিশ্বাস করতে হবে এবং নেক কাজ করতে হবে।
আমাদের জীবনে সবকিছুই হয় আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণ অনুযায়ী এবং সবই হয় তাঁর অনুমতিক্রমে ও জ্ঞাতসারে। আল্লাহর ইচ্ছা ও জানার বাইরে বান্দা কিছুই করতে পারে না। আমাদের যদি এই বিশ্বাস থাকে তাহলে অদৃষ্টবাদ ও অদৃষ্টকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আপনার মধ্যে যদি এই দৃঢ় বিশ্বাস থাকে তাহলে আপনি অতি আনন্দে আত্মহারা হবেন না কিংবা কোনো ব্যর্থতায় দিশেহারাও হবেন না।
উলামায়ে কেরাম তাকদীরকে দু’ভাগে ভাগ করেন। ১. তাকদীরে মুবরাম ২. তাকদীরে মাআল্লাক। তাকদীরে মুবরাম হল তাকদির চূড়ান্ত যা কখনোই পরিবর্তন হয় না। অনাদী থেকে আল্লাহর কাছে যা লিপিবদ্ধ আছে তাই সংঘটিত হবে। আর তাকদীরে মুআল্লাক হল, যা ফেরেশেতাদের খাতায় লিখা থাকে। এই প্রকারের তাকদীর দোয়া বা বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে পারে। কুরআন হাদিসে তাকদীর পরিবর্তনের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে, তা এই প্রকার তাকদীরের ব্যাপারেই। আল্লাহ সুবহানাল্লাহ ওয়া তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন স্থির রাখেন, আর তাঁর কাছেই রয়েছে মূল কিতাব।’ (সূরা রা’দ, আয়াত : ৩৯)।
হাদিস শরীফে বলা আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না।’ ( সুনানে তিরমিযী, হাদিস : ২১৩৯)। তবে, অনেকে মনে করেন বান্দা তার কাজের সৃষ্টিকর্তা। অর্থাৎ তাকদির বলতে কিছু নেই, অনেকটা তাকদিরকে অস্বীকার করার শামিল। তারা নিজেই তাদের নিজেরটা নির্ধারণ করে নেন। আমরা অবচেতন মনে বলে ফেলি,”ভাগ্য বলতে কিছু নেই, মানুষের কর্মই তার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।” মানুষ যদি নিজের ভাগ্য ঠিক করে নিতে পারতো তাহলে পৃথিবীতে কোন মানুষ মারা যেতো না। অনেক লোক ঔষধ খাচ্ছেন সুস্থ হচ্ছেন না আবার অনেকে ঔষধ না খেয়েই সুস্থ হচ্ছেন। যদি এমন মনে হয় আমাদের কর্মই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় তাহলে এটি অবাস্তব কথা।
আবার এক প্রকার লোক যারা বলে, মূলত বান্দার আসলে কোন কিছু করার নাই, সব আল্লাহর চূড়ান্ত করে রেখেছেন। বান্দা বাধ্য আল্লাহর নির্ধারিত বিষয়ে অটল থাকে। কিন্তু বান্দার তাকদির আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। তবে, বান্দাকে আল্লাহ পাক কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং স্বাধীনতা দিয়েছেন। সমাজে অনেকে আছে সামান্য সমস্যা হলেই অন্যের কাছে সহায়তা চায়। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে নিজের শক্তি সামর্থ্য থাকা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। কিন্তু খুআ প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য যথার্থ। কেননা আল্লাহ সুবহানাল্লাহ ওয়া তায়ালা নামাজের পরই রুজিরোজগারের জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
তাকদিরে বিশ্বাস ব্যতিত কোন ব্যক্তির ইবাদাত কবুল হবে না। কেননা তাকদির বিশ্বাস হলো ইমানের একটি অংশ। নামাজ, রোজা, হজ্জ পালন হলেও সমাজে অনেক ব্যক্তি যারা লোক দেখানো ইবাদত করে থাকে। তারা সামান্য কোন বিষয় নিয়েই চিন্তিত, অর্থাৎ এ জাতীয় ব্যক্তিরা তাকদিরে বিশ্বাসী নন। হযরত সা’দ (রা.) একবার আল্লাহর রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, কোন ধরনের মানুষ সর্বাধিক বিপদ আপদে পতিত হয়? জবাবে আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, সর্বাধিক কঠিন বিপদে পতিত হন নবীরা (আ.), তারপর নেককারগণ, এরপর পর্যায়ক্রমে উত্তম লোকগণ। মানুষকে বিপদাপদ দ্বারা পরীক্ষা করা হয় তার ধর্মের প্রতি দৃঢ়তা ও নিষ্ঠা অনুযায়ী। যদি ধর্মের প্রতি তার দৃঢ়তা থাকে তাহলে তার বিপদ আরো কঠিন করা হয়। যদি ধর্মের প্রতি দৃঢ়তা না থাকে তবে তার বিপদ হালকা করে দেওয়া হয়। কারো কারো ওপর বিপদ আসতে থাকে অনবরত। অবশেষে সে পৃথিবীতে বিচরণ করে এমনভাবে যে তার কোনো পাপ থাকে না।
জন্ম, মৃত্যু, রিজিক, তাকদির সবই মহান আল্লাহর হাতে এবং এ সবই মহান আল্লাহ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। এটা শুধু মুখে না বলে অন্তরে বিশ্বাস করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। যারা তাকদির বিশ্বাস করে এবং হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করে কোনো পাপ করে করে না বা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কোনো অসাধু উপায় অবলম্বন করে না তাদের পরিচয় মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে দিয়েছেন, “আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। (সূরা আত-তাওবাহ -৫১)।
সুতরাং তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস বলতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে প্রতিটি বিষয়ের ঘটনা যা ঘটেছে বা ঘটমান এবং ঘটবে প্রতিটি বিষয়ই পূর্ব থেকে নির্ধারিত। আল্লাহর তাকদিরেই সব হয়ে থাকে। তাকদির মানেই হলো নির্ধারণ। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্ধারণ করাটাই হলো তাকদির।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ