চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নেয়ামত হলো সময়। কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এই নেয়ামতটির যথার্থ মূল্যায়নের প্রতি বিশেষ তাগিদ ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সামনে নতুন বছর শরু হতে যাচ্ছে। এখন থেকে আমরা নিয়ত করি আগামীর দিন গুলো ভালোও উত্তম কাজে ব্যয় করতে পারি। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নেয়ামত হলো সময়। কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এই নেয়ামতটির যথার্থ মূল্যায়নের প্রতি বিশেষ তাগিদ ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সূরা আসর: ১-৩)। একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান হলো যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা হলো যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি: ২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৭৩৪। পরকালে মানুষকে জীবনের প্রতিটি মূহুর্তের হিসাব দিতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া এক কদম ও নড়তে পারবে না। তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬)।
কিন্তু মানুষ মোহের ঘোরে আচ্ছন্ন থাকে। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে। (বায়হাকি, শোআবুল ইমান: ১০২৪৮, মুসনাদে হাকিম: ৭৮৪৬)।
পরকালে মানুষ যে বিষয়ে সবচেয়ে অনুতপ্ত হবে তা হলো, অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার না করা। নেক আমল করলে বান্দার অবস্থার উন্নয়ন হবে, বদ আমল করলে তার অবনতি হবে। আমল ছাড়া সময় পার করলে তার জন্য প্রকারান্তরে ক্ষতি হিসেবেই গণ্য হবে। উদাসীনতা বা সময়ের প্রতি অবহেলা সম্পর্কে সাবধান করে আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেন: ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদিগকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা সমাধিসমূহ দেখতে পাও (তোমাদের মৃত্যু হয়)। এটি কখনো সংগত নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবারও বলি, এটি মোটেই সমীচিন নয়; তা তোমরা অনতিবিলম্বে জানতে পারবে। না, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা খতিগ্রস্ত হতে না। তোমরা (সময়ের প্রতি উদাসীন কর্মে অবহেলাকারীরা) অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে (তাতে প্রবেশ করবে)। অবশ্যই অতি অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম চাক্ষুষ দেখে (তাতে প্রবেশ করে তার শাস্তি ভোগ করে) প্রত্যয় লাভ করবে।
অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদিগকে সব নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সূরা ১০২ তাকাছুর, আয়াত: ১-৮)। আমরা প্রায় সময় নানান ব্যস্ততায় ব্যতিব্যস্ত থাকি। যেকোনো উপলক্ষে অবসর যখন আসে, তা আমাদের জন্য মহামূল্যবান নেয়ামত। সময় আমাদের জীবনের এমন একটি মূলধন বা পুঁজি, যা বিনিয়োগ করলে আমরা ইহকাল ও পরকালে লাভবান ও উপকৃত হব; আর এটি হেলায় নষ্ট করলে উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। ইমাম বলেন, অবসরে আমরা যে আমলগুলো করতে পারি তা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত যথাসময়ে আদায় করা। নফল নামাজ তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আউওয়াবিন, সলাতুত তাসবিহসহ অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামাজ পড়া। অজু, গোসল ও নামাজের মাসআলা-মাসায়েল, সূরা-কিরাত ও দোয়া-কালাম ভালোভাবে জানা। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। অর্থ ব্যাখ্যাসহ কোরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। কোরআন তিলাওয়াত শেখা ও শুদ্ধ করার চেষ্টা করা। কোরআনের বিশেষ বিশেষ ফজিলতের আয়াতসমূহ ও সূরাসমূহ মুখস্থ করা, ব্যাখ্যাসহ অধ্যায়ন করা। অবসরে পারিবারিক পরিমন্ডলে নিয়মিত দ্বীনি তালিমের আয়োজন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনে নতুন বছর শরু হতে যাচ্ছে। এখন থেকে আমরা নিয়ত করি আগামীর দিন গুলো ভালোও উত্তম কাজে ব্যয় করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সময়ের সঠিক ব্যবহার করার তৌফিক দিন। আমিন।
ঢাকার মানিক নগর সর্দারবাড়ি জামে মসজিদের খতিব মুফতি জাবের কাসেমী আজ খুৎবার বয়ানে মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, আমরা ২০২১ সাল শেষ করে ২০২২ সালে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। বিগত বছরটি আমাদের জীবনের অন্যান্য বছরের মতো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি নেয়ামত ছিলো। এই নেয়ামত থেকে কতটুকু আল্লাহর আনুগত্যে এবং মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে আর কতটুকু আল্লাহর নাফরমানিতে ও মানুষের অকল্যাণে ব্যয় হয়েছে তার হিসাব নেয়া উচিৎ। সুতরাং যতোটুকু আল্লাহর আনুগত্যে ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে তার জন্য শোকরিয়া আদায় করে আলহামদুলিল্লাহ বলা। আর যতোটুকু তার নাফরমানিতে ব্যয় হয়েছে তার জন্য ইস্তেগফার বা ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু আফসোসের সাথে বলতে হয় বর্তমানে আমাদের অনেকেই নিজের বিগত বছরের হিসেব বাদ দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির মাধ্যমে নতুন বর্ষ বরণ করার জন্য শিরক,নাচ,গান,মদ ইত্যাদিতে গুনাহতে লিপ্ত হয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত হবেন। (আবু দাউদ ৩৫১২) অতএব আসুন বিজাতীয় সংস্কৃতি বাদ দিয়ে নিজের জীবনের হিসাব নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা আজ জুমার বয়ানে বলেন, বর্তমান সময়ে মুসলমানদের সীমহীন মতানৈক্য সুস্পষ্ট ফিৎনা। যা কিনা কিয়ামতের আলামত। ফেৎনার জামানা শুরু হয়ে গেছে। অমুসলিমদের ফিৎনা ইসলামে সুস্পষ্ট যা কোরআন ও হাদীসের মাধ্যমে আমাদের নিকট পরিস্কার। কিন্ত মুসলমানদের শতধা বিভক্তি ও ফেরকা ইসলামের নামে যা চালানো হচ্ছে তা আজ চক্ষুষ্মানদের নিকট সুষ্পষ্টভাবে বড় আকারের ফিৎনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাও সুষ্পষ্ট কিয়ামতের আলামত। এসময় ঈমান ও আমল রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে রাসূল ( সা.) মুসলমানদের সতর্ক করেছেন। কোরআনুল কারীমের সূরা আনআমের ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "নিশ্চিতভাবে তোমরা জেনে রেখো একমাএ এটাই (ইসলামই যা আমি আমার রাসূলের নিকট পাঠিয়েছি) সরল সঠিক পথ। তোমরা শুধু তাই অনুসরণ করবে। এতদ্ভিন্ন বিভিন্ন মত ও পথ তোমরা অনুসরণ করবে না। যদি কর তাহলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে"। সূরা নূরের ৬৩ নং আয়াতে এই বিচ্ছিন্নতাকে ফিৎনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে রাসূল সা. বলেছেন, ফেৎনার জামানা হবে এমন যে, মুমিনগণের অনেকেই সকালে মুমিন থাকলেও বিকেলে কাফের হয়ে যাবে অর্থাৎ ঈমান বিক্রি করে বিকেলে কাফের হয়ে যাবে। আর বিকেলে মুমিন থাকলেও সকালে কাফির হয়ে যাবে। সত্যিকার অর্থে আজ মুসলমানদের মধ্যে সে অবস্থা দেখা দিয়েছে। যুগে যুগে কিছু লোক এমন ছিল, যারা স্বার্থের বিনিময়ে বিধর্মীদের নিকট বিক্রি হয়েছে। কিন্ত এখন বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক আকারে বিভিন্ন পন্থায়। যাতে সাধারণ মুসলিমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে। কেউ সাজছে দরবারি আলেমরুপে আবার কেউ কেউ সুস্পষ্ট কুফরি মতবাদকে জায়েজ করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে বাতিলের সংগে হাত মেলাচ্ছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ধরণের বিবিধ ফেৎনাকে কিয়ামতের আলামত বলেছেন। এ সময় ঈমান বাঁচানোর একমাএ উপায় হিসেবে তিনি কোরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধরার ও বহুরুপিদের এড়িয়ে চলার এবং সুন্নাহর উপর দৃঢ় অবস্থানের নির্দেশ দিয়ে উম্মাহকে সতর্কভাবে পথ চলার উপদেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক বিদা'ত ও সুবিধাবাদী স্বার্থপর মুনাফিক বর্ন চোরাদের খপ্পর থেকে ঈমান রক্ষার জেহাদে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।