Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুবকদের ‘মাদকমুক্ত’ করতে অ্যালকোহলে ছাড়!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সংসদ সচিবালয়ে গত ৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মাদক নিয়ে আলোচনার পূর্ণ কার্যবিবরণী সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী দেখা যায় দেশে কিছু মাদক উন্মুক্ত করা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নতুন করে আলোচনা হয়। সেখানে বেশিরভাগ আলোচক মদ ব্যবহারে ছাড় দিয়ে দেশের মাদকাসক্ত যুব সমাজকে ‘মাদক থেকে মুক্ত’ করার কৌশলের কথা বলেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ড্রাগ এবং এলকোহল দু’টি ভিন্ন জিনিস। এলকোহলের প্রতি কিছুটা ছাড় দিলে ‘ড্রাগ সেবন’ কিছুটা কমতে পারে। মুসলিম দেশ হিসেবে উন্মুক্তভাবে না করে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিলে যুবসমাজকে মাদকাসক্ত থেকে কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। আলোচনায় আরো বলা হয়, মাদকের বিকল্প কিছু একটা সামনে নিয়ে আসতে হবে। মদ, বিয়ার ইত্যাদিতে যদি ৫ ভাগের নিচে এলকোহল থাকে তাহলে এগুলো বৈধ ঘোষণা করে দেয়া উচিত। যেসব মাদক হালকা ক্ষতিকর সেগুলোর ব্যবহার উন্মুক্ত করা যেতে পারে। আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব বক্তব্য দিয়েছেন- সংসদীয় কমিটির সভাপতি, সংসদ সদস্য, মহাপুলিশ পরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ হওয়ায় আলোচনা সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বøগ, টুইটারে এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ মানুষ বলছেন, মুসলিম দেশে এলকোহল নিয়ে এমপি ও সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনভিপ্রেত। মুসলিম দেশে মদ সেবনের ছাড় দিয়ে তরুণদের মাদকমুক্ত করার চেষ্টা হাস্যকর।

গত ৭ নভেম্বর সংসদ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মাদক নিয়ে তারা আলোচনায় অংশ নেন। সম্প্রতি ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে। সাধারণত সংসদীয় কমিটির কোনো বৈঠকের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে লিখিত কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, মাদক নিয়ে এর আগে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হলেও হাই প্রোফাইল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অতীতে এ ধরনের খোলামেলা আলোচনা হয়নি। বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন।

আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, মদ, বিয়ার বা এলকোহলের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিলে যদি রাজস্ব বৃদ্ধি পায় তাহলে তাই করা উচিত। ড্রাগ অর্থাৎ আইস, ইয়াবা, এলএসডি এগুলো ভয়াবহ ক্ষতিকর মাদক। কোনো মাদকে এলকোহলের পরিমাণ ৫ ভাগের নিচে থাকলে তা সরকারিভাবে বৈধ করা আছে। মদ, বিয়ার ইত্যাদিতে যদি ৫ ভাগের নিচে এলকোহল থাকে তাহলে এগুলো বৈধ ঘোষণা করে দেয়া উচিত। যুবসমাজকে মাদকের নেশা থেকে বাঁচাতে এ সবকিছু বিবেচনা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম রুমানা আলী বলেন, যেসব মাদক হালকা ক্ষতিকর সেগুলোর ব্যবহার উন্মুক্ত করা যেতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ড্রাগ এবং এলকোহল দু’টি ভিন্ন জিনিস। এলকোহলের প্রতি কিছুটা ছাড় দিলে ড্রাগ সেবন কিছুটা কমতে পারে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত ও সুপারিশ প্রয়োজন বলেও তিনি জানান। মহাপুলিশ পরিদর্শক বলেন, বাংলাদেশে এলকোহলের ওপর ৬০০ ভাগ ট্যাক্স নির্ধারণ করা আছে। বাংলাদেশের সমস্ত ক্লাবে এলকোহলের লাইসেন্স আছে। কিন্তু তারা কেউ আমদানি করে না, কারণ ট্যাক্স দিতে হয় বেশি। ক্লাবগুলো বেআইনিভাবে চোরাইপথে আসা মদ বিক্রি করে। যার কারণে দাম কম, ক্রেতা বেশি। এতে করে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার ট্যাক্স কমিয়ে দিলে অথবা মদ উন্মুক্ত করে দিলে ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল আন্দোলনে নেমে যাবে। বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, মাদক নির্মূল করতে হলে কিছু পলিসি পরিবর্তন করতে হবে। চোরাইপথে মদ ও বিয়ার ঢাকা শহরের সকল ক্লাবে বিক্রি হয়। ক্লাবগুলোর বৈধ লাইসেন্স রয়েছে আমদানি ও বিক্রি করার জন্য। মুসলিম দেশ হিসেবে উন্মুক্তভাবে না হলেও কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিলে যুবসমাজকে মাদকাসক্তি থেকে কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, আমেরিকা এবং কানাডায় গাজাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশে মাদক কখনো বন্ধ করা যাবে না। তবে হয়তো কিছুদিনের জন্য কমিয়ে রাখা যেতে পারে। কারণ মাদকের বিকল্প কিছু একটা সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাই এলকোহল, মদ, গাঁজা এগুলো সম্পর্কে আরো চিন্তাভাবনা করা উচিত। মাদক নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, এলকোহল সেবন উন্মুক্ত করার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এলকোহল আমদানিতে ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়া যায়। ড্রাগ অর্থাৎ মাদকের কারণে দেশের তরুণ সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তরুণ সমাজকে রক্ষা করার জন্যই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকতে হবে। যেসব মাদক সেবন করলে যুবসমাজ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যেমন আইস, হেরোইন ইত্যাদি বন্ধ করার জন্য কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন।

এদিকে সংসদীয় কমিটিতে মাদক নিয়ে আলোচনার আগে এ নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা, রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে মাদকের বিস্তার রোধ এবং মাদকাসক্তি পর্যায়ক্রমে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে সকল সংস্থার দায়ের করা মাদক মামলা প্রায় ৬৯ হাজার ৪৯০ এবং আসামির সংখ্যা ৯১ হাজার ৩৬১ জন। মোবাইল কোর্ট, জব্দকৃত মাদকদ্রব্যের বিবরণী ইত্যাদি তিনি কমিটিতে উপস্থাপন করেন।



 

Show all comments
  • Khan ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:১৫ এএম says : 0
    মুসলিম দেশের ধংসের জন্য Alcohol ছারের ভুল তথ্য সরকার দিতেছে। সরকার চায় রাস্তায় মাতাল যুবক যুবতী এবং ধর্ষণের মতো অপরাধ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকমুক্ত

২২ অক্টোবর, ২০২২
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
২৪ নভেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ