চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পৃথিবীতে আসার পর প্রত্যেক প্রাণীকেই সুনিশ্চিত যে বিষয়টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সেটা হলো মৃত্যু। মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, অতঃপর তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে’। (সুরা আনকাবুত : ৫৭)।
আর মানব জাতির মৃত্যু মানেই হলো পৃথিবীর সকল স্বাদ বিনষ্ট করে চিরস্থায়ী নতুন এক জীবনের শুরু।যাকে আমরা পরকালের জীবন বলে থাকি; যে জীবনের শুরু থাকলেও শেষ বলতে কিছুই নেই। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কিন্তু তোমরা দুমিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকো, অথচ আখিরাতের জীবন হলো উত্তম ও চিরস্থায়ী।’ (সূরা আ‘লা : ১৬-১৭)।
দুনিয়ার জীবনটা খুব সংক্ষিপ্ত। এ প্রসঙ্গেও কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘মহান রব জিজ্ঞেস করবেন তোমরা কত দিন ছিলে দুনিয়ার জমিনে? তারা (আমরা) বলবে একদিন বা একদিনের কিছু সময় মাত্র।’ (সুরা মুমিন : ১১২-১১৩)।
এ সংক্ষিপ্ত জীবনে আমরা পরকালের জন্য যা অর্জন করবো তা নিয়েই মহান রবের সামনে দাঁড়াবো। কিন্তু এতেও আমাদের দাম্ভিকতার কমতি হবেনা, আমরাতো সরাসরি বলে দিবো বিচার দিবসে যে, আজ আমি আমার বিষয়ে কারো সাক্ষ্য প্রমাণ মানবোনা! ঠিক তখনি মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, ‘পড়ো তুমি তোমার আমলনামা। আজকের হিসাবের জন্য তুমি নিজেই যথে।’ (সুরা বনী ঈসরাইল : ১৪)।
যখন পড়া শুরু করে দিবো তখন আমাদের জবান আফসোসের সুরে বলতে থাকবে, ‘হায় এটা কেমন ধরনের আমলনামা! ছোট বড় কোন কর্মই বাদ দেয়নি। সবই সংরক্ষণ করে রেখেছে।’ (সুরা কাহাফ : ৪৯)। সেদিন আমাদের মুখ বন্ধ করে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে। আর আমাদের হাত মহান আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিবে।পা ও সাক্ষ্য দিবে।আমরা যা করেছি তার সব বলে দিবে।’ (সুরা ইয়াসিন : ৬৫)।
এমনিভাবে আমাদের যত্মে রাখা শরীরের চামড়াও আমাদরে বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া শুরু করবে। আমরা তখন বলবো কি হলো তোমাদের?! কেন আজ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছো? তারা উত্তরে বলবে, ওই আল্লাহ আমাদের কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, যিনি সবকিছুকেই কথা বলার শক্তি দান করেছেন। এবং তিনি তোমাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন প্রথমবার। আর তার দিকেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা হা মীম সিজদা : ২১)।
অতঃপর সবশেষে গুনাহগারদেরকে যখন বাম হতে আমলনামা দেয়া হবে, তখনকার আর্তনাদ কতইনা লাঞ্চনাদায়ক আর্তনাদ হবে! চিৎকার করে বলতে থাকবে, ইশ্! যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হতো! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসলো না! আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেলো!
ফেরেশতাদেরকে বলা হবে ধরো! একে গলায় বেড়ি পড়িয়ে দাও। অতঃপর নিক্ষেপ করো জাহান্নামে! অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত করো সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিলোনা। মিসকীনকে খাবার দিতে উৎসাহিত করতো না। অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোন সুহৃদ নাই। এবং কোন খাদ্য নাই,ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত। গোনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না।’ (সুরা হাক্বাহ : ২৫-৩৭)।
কেমন হবে ওই দিনের অবস্থা! একটু ভাবলেই উপলব্ধি করার সম্ভব। বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ বহু গুনাহ করে তার পাশের ব্যক্তি জানেনা। স্বামীর গুনাহের কথা স্ত্রী জানেনা।বোনের গুনাহের কথা জনেনা তার পাশে থাকা ভাই! যদি কোনোভাবে জেনে যায় তখনতো লজ্জায় দিশেহারা হয়ে বহুলোক আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। কিন্তু ঐ দিন যখন বিচার হবে, তখন গোটা দুনিয়ার সব মানুষ জেনে যাবে পৃথিবীতে আমি আপনি কেমন ছিলাম। আর তখন কেবল আফসোস ই হবে একমাত্র সম্বল! যালিম তথা গুনাহগার লোকেরা নিজের হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎ পথ অবলম্বন করতাম। ‘দুর্ভোগ যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহন না করতাম।’ (সুরা ফুরকান : ২৭-২৮)।
কিন্তু এ আফসোস কোনো কাজে আসবেনা। বরং মহান রবের দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতেই হবে। প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ (সহীহ বুখারী)।
অতএব আসুন আর দেরি নয়, আর অপেক্ষা নয়, বরং এখন থেকেই পৃথিবীর সকল মোহ, ভোগবিলাসের পিছনে না দৌড়ে, প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক স্বীয় জীবনকে পরিচালিত করার মাধ্যমে মহান রবের দেয়া সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলতে শুরু করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কবুল করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।