Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন বছর নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা

হাবীবুল্লাহ সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

একটি উক্তি দিয়ে প্রবন্ধটি শুরু করছি- যে সময়কে যত মূল্যায়ন করে, সময় তাকে ততোটুকু মূল্যায়ন করে। যে সময়কে মূল্যায়ন করে না, সময়ও তাকে মূল্যায়ন করে না (পৃথিবী তাকে চিনে না)।
চতুর্দিকে ইংরেজি ২০২১ বিদায়ের আয়োজনে ব্যস্ত পুরো পৃথিবী। বিশেষত ইউরোপ আমরিকার উন্নত শহরগুলো ২০২১ কে বিদায় ২০২২ স্বাগত জানানোর সব আয়োজন ইতিমধ্যে শেষ করেছে। কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ২০২১ শিরোনামের সম্পূর্ণ একটি বছর। যা আর কখনো ফিরে আসবে না। ক্যালেন্ডারের যে পাতাটায় ২০২১ এর তারিখগুলো সাজানো ছিল, এগুলো এখন পুরাতন। কিছুদিন পর এগুলো আরো পুরাতন হবে। একদা এই পৃথিবীর মানুষ ভুলে যাবে ২০২১ এর সময় ক্ষণ তারিখ মাস ও দিনগুলোকে। স্মৃতির এ্যালবামটিও পুরাতন হবে। একদিন পৃথিবীর গ্যালারি থেকে এই এ্যালবামটিও নিরুদ্দেশ হবে। এখানে ক্যালেন্ডারের হিসাব তো আর ক্যালেন্ডারের নিজস্ব হিসাব নয়, এ হিসেব আমাদের। এ হিসেব আমাদের জীবনঘড়ির। ক্যালেন্ডার তো হলো আমাদের জীবনডায়রির ব্যবহৃত পাতা মাত্র। বছর শেষ হওয়া মানে আমাদের ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে একটি বা কয়েকটি পাতা গত হওয়া। যে পাতাগুলো বা সময়খন্ডগুলো আমাদের জীবনপাতায় আর কখনো সচল হবে না।
কাগজের ক্যালেন্ডার নতুন করার আয়োজন চতুর্দিকে কিন্তু এই কাগজ যে আমার আপনার নিজের সময় এই হিসেব কি কেউ কখনো করি? ক্যালেন্ডার পুরাতন হলে ঘরে আর রাখি না। ক্যালেন্ডার থেকে একটি সংখ্যার বিদায় আসলে কি সংখ্যার বিদায়? না, সংখ্যার বিদায় নয়, আমাদের জীবনকালের একটি অংশের বিদায়। আর এ কারণেই যে কোনো ক্যালেন্ডারে বর্ষ শুরু ও বর্ষশেষ উৎসবের ব্যাপার নয়, চিন্তা-ভাবনা ও হিসাব-নিকাশের ব্যাপার। আমাদের সমাজে এমন ক’জন আছেন যিনি বছরান্তের এই হিসেব নিয়ে বসেছেন? অথচ অন্য কোন বিষয়ে আমরা ঠিকই হিসেব নিয়ে বসি। দোকান ভাড়া বাড়ি ভাড়া সবই তো হিসেব করি। কখনো ফেলে আসা পূর্ণ বছরের হিসেবটি করেছি? করেনি! পত্রিকাওয়ালা সালতামামি করে। আমরা যদি আমলের আর চরিত্রের সালতামামি করতে পারতাম!
মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ পুঁজি আর তার বিনিয়োগ ক্ষেত্র হচ্ছে তার নিজের কর্ম। জীবনকাল ভালো কাজে ব্যয় হলে তা ফেরত আসবে মুনাফাসহ। আর মন্দ কাজে ব্যয় হলে তা বয়ে আনবে লোকসান ও ক্ষতি। পুঁজি হারানোর বিপদ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন : যে কণা পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখতে পাবে। আর যে কণা পরিমাণ মন্দ কাজ করবে তাও সে দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল : আয়াত নং-৭-৮)।
২০২১ এর শেষ সময়ে জীবনের খাতা খুলে অতীতকে হাতড়িয়ে আমরা নিতে পারি পাপ-পুণ্যের হিসাব। পাপ থেকে তওবা করে, পুণ্য থেকে আগ্রহ নিয়ে শুরু করতে পারি আমাদের ২০২১ থেকে আরো সুন্দর সুনির্মল ২০২২কে। ২০২২ সালের স্বাগত লগ্ন যদি আমরা সবাই মিলে নিজেকে নিজের পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে নতুন আঙ্গিকে পাপমুক্ত দুর্নীতি ও অন্যায় মুক্ত গড়তে শপথ করি; তাহলে আশা করা যায় বিগত ২০২১ এর চেয়ে আগত ২০২২ অনেক সুন্দর ও সফল একটি বছর হবে, ইনশাল্লাহ।
আমরা সকলে ২০২২ সালকে বরণ করে নেব সহজ সরল নিরাপদ ও আনন্দমুখর পরিবেশকে সঙ্গী করে। জাতীয় জীবনে শীতের কুয়াশা ভেদ করে ওঠা রাঙা প্রভাত প্রত্যাশা করছি। নতুন বছর আলোকিত করুক সবার জীবন। নতুন বছর সকলের জন্য মঙ্গল হোক। আনন্দ ভালোবাসা আর প্রেমের ছোঁয়ায় দূর হোক সব দুঃখ বেদনা অশান্তি গ্লানি দারিদ্র্য সংঘাত সংকট ও বঞ্চনা। কামনা করছি সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু। আজকের এই নবদিনে আমরা রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে সুরমিলিয়ে বলি, বছরের আবর্জনা দূর হোক হয়ে যাক। নববর্ষ মানেই নতুন আশা আকাক্সক্ষা নতুন স্বপ্ন নতুন সংকল্প। স¤প্রীতি ও শান্তির আলোয় উদ্ভাসিত হোক। সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। বাংলার প্রতিটি ঘরে প্রবাহিত হোক শান্তির রসধারা। সবার জীবন হোক সমৃদ্ধ। পৃথিবী হোক নিরাপদ আবাসস্থল এই হোক শুভদিনে বিশ্ব স¤প্রদায়ের একমাত্র প্রার্থনা। মানুষে মানুষে বিভেদ দ্ব›দ্ব ঈর্ষা হিংসার অবসান হোক। সকলের স¤প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন অটুট থাকুক। আমরা একটু যদি সৎভাবে ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে লোভ লালসা পরিহার করে জীবনযাপন করি তবে মানুষে মানুষে হানাহানি বন্ধ হবে। অশুভ ও অপশক্তির পতন হোক। দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ দুর্নীতিবাদ নির্মূল হোক। মুক্ত চেতনার জয় হোক। সফল হোক বাংলার সর্বমুখী জাগরণের সাধনা ও গান। আমাদের স্বাধীনতা সর্বভৌমত্ব হোক নিরাপদ ও বহির শত্রুর থাবা মুক্ত।
নতুন বছরের আমাদের দেশগড়ার নতুন শপতে বলিয়ান হতে হবে। যেভাবে আমরা ২০২১ এর হিসেব নিকাষ কষে পাপমুক্ত হবো, তেমনি করে আগত বছরের দেশ গড়ার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হবো, ইনশাল্লাহ। দেশের সবসেক্টরে নতুন বছরের নতুন শপথের পাঠ শুনাতে হবে। রাজনীতি অর্থনীতি পৌরনীতি শিক্ষানীতি ব্যবসায়নীতি সকলে ক্ষেত্রেই নতুন বছরের নতুন শপথের আলোয় অলঙ্কৃত হবে। এভাবে যখন সর্ব বিষয়ে আমরা একটি নতুন বছর নতুন করে শুরু করবো তখন আশা করা যায়- ২০২২ এর প্রতিটি ক্ষণকাল ও মুহূর্ত যাবো ভালোর আলোয়।
আবার ফিরে আসি অতীত কথায়- প্রতিটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত আমাদের জানাচ্ছে জীবনের ক্ষয় ও পতন সম্পর্কে। জানান দিচ্ছে যা চলে যায় তা আর ফিরে আসে না’ এই সম্পর্কে। সুতরাং উৎসব পর্বণ আর সীমাহীন উন্মাদনা নয়, অনুশোচনা ও আত্মসমালোচনাই হতে পারে বিগত বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সুন্দর ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের পথ ও পদ্ধতি। একারণে অযথা হৈ চৈ নয়, বুদ্ধিদীপ্ত ও আবেগ বিবেকের যৌথ সিদ্ধান্তের দ্বারা নতুন বছরকে নতুন চেতনায় অনুভব করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের তাওফিক দিন। প্রবন্ধের শেষলগ্নে একটি হাদিস উল্লেখ করছি- হাদিস শরিফে আছে যে আমল কাজ বা অনুষ্ঠান আল্লাহর নাম ব্যতীত শুরু হয়- তা হয় অসম্পূর্ণ। তাতে আল্লাহর সাহায্য বা বরকত থাকে না; আর যে আমল কাজ বা অনুষ্ঠান আল্লাহর নামে শুরু হয় তা হয় বরকতময়। একাজের আগাগোড়া সবটুকুতেই আল্লাহর রহমত জড়িয়ে থাকে, সাথে থাকে সাহায্য ও নুসরাত। সুতরাং ডাক ঢোল তবলা পিঠিয়ে নয়, আল্লাহর নামেই শুরু হোক আমাদের ইংরেজি নববর্ষ ২০২২ এর ঊষালগ্নটি। আমিন।



 

Show all comments
  • জিয়াউল হক ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:৪৮ এএম says : 0
    লেখাটি অনেক ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ