চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
খ্রিস্টীয় বছর তথা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ দিবাগত রাত। এ রাতের ১২টা ১ মিনিটকে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করা হয়। বছরের শেষ রাতের এ মুহূর্তটি উদযাপন একটি খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি। বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্কলাররা ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ও রুচিসম্মত মুসলিম নারী-পুরুষ কখনো থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম (ইসলামি রীতিনীতি) ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে, কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আল ইমরান:৮৫)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সঙ্গে আচার-আচরণে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ)। আমাদের যুবক যুবতীরা অধীর আগ্রহে থার্টি ফার্স্ট নাইটের অপেক্ষায় থাকে। সেদিন মুখোশধারী কিছু লম্পট হাজারো মেয়েদের সতীত্ব নষ্ট করতে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে।
তাদের ভালোবাসা থার্টি ফার্স্ট নাইট কেন্দ্রিক থাকে। রাতের আঁধারে যেসব যুবক যুবতী নগ্নতা ও অশ্লীলতায় গা ভাসিয়ে নিউ ইয়ারকে সেলিব্রেশন করে, ওরাই দিনশেষে পরস্পরকে ঘৃণা করে। এতে সাময়িক আনন্দ থাকলেও, এক সময় সেটা আফসোসে রূপ নেয়। অমুসলিমদের আচার-আচরণ ও তাদের অনুষ্ঠানে প্রেজেন্টেশন করতে কুরআন হাদীসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ (সুরা মায়েদা:৪৮)। থার্টি ফার্স্ট নাইট এটা সম্পুর্ন পশ্চিমা সংস্কৃতি। মুসলমানদের জন্য সেটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
এমনকি অমুসলিমদের থেকে কোনো ধরনের সাহায্য ও গ্রহণ করা যাবেনা। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, এক মুশরিক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি (তাকে) বললেন, তুমি ফিরে যাও। আমরা মুশরিকদের সাহায্য চাই না।’ (সুনানে আবু দাউদ)। ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ একটা নীরব ফেতনা। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ফেতনা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, (যখন) ব্যক্তি ভোর অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর অতিবাহিত করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে।’ (সহীহুল মুসলিম)।
অথচ এ সময়ে আমাদের অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত। জীবন থেকে একটা বছর চলে যাওয়া মানে মৃত্যুর জন্য এক বছর এগিয়ে আসা। তাই পিছনের জীবনের গোনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত। নামাজ ও কুরআন পাঠের মাধ্যমে নিউ ইয়ারকে বরণ করা চাই। দুঃখজনকভাবে আমরা ওয়েস্টার্ন কালচারকে ফলো করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন। এবং ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নামক বেহায়াপনা ও নষ্টামি থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।