Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

মূল হোতা আশিক র‌্যাবের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

মাত্র আট মাসবয়সি শিশুটির হার্টের সমস্যা। চিকিৎসার খরচ জোগাতে শিশু আর স্বামীকে নিয়ে কক্সবাজারে যান মা। তারপর গত তিনমাস ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে হাত পেতে চাইছিলেন সহায়তা। এ অসহায় মায়ের কাছেই চাঁদা দাবি করে বসে স্থানীয় আশিকুর রহমান। চাঁদা না পেয়ে তার সংঘবদ্ধ চক্রটি ক্ষুব্ধ হয়। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর লাবনী বিচ এলাকার রাস্তা থেকে ওই নারীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে আশিকের দুই বন্ধু নারীটিকে ধর্ষণ করে।

এরপর তাকে মোটরসাইকেলে তুলে কলাতলী জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে নেয় আশিক। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। আর তার স্বামীর কাছে দাবি করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ। এরপর তাকে হোটেলে আটকে রেখে বের হয়ে যায় আশিক। কক্সবাজারে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূলহোতা ও প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিককে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব কথা জানিয়েছে র‌্যাব। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, ভিকটিমকে অপহরণের ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী র‌্যাব-১৫ এর কাছে উদ্ধারে সহায়তা চায়। পরে র‌্যাব ভিকটিমের স্বামীকে নিয়ে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ও একপর্যায়ে ভিকটিম উদ্ধার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে জিম্মি করতে সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ ও ১৫ এর অভিযানে গত রোববার মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিক র‌্যাবের কাছে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূলহোতা। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। আশিক ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সে প্রথম ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয় বলে জানায়। সে ও তার সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সে পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত। এক পুলিশ সদস্যকেও ব্ল্যাকমেইল করে আশিক।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিক আরও জানায়, ভিকটিমকে হোটেলে আটকে রেখে আশিক হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন মিডিয়াতে জানাজানি হলে আশিক আত্মগোপনে চলে যায়। পরে গ্রেফতার বেশভ‚ষা পরিবর্তন করে ঘটনার দুদিন পর কক্সবাজার থেকে একটি এসি বাসযোগে ঢাকায় আসে। পরে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে সে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার আশিক পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম জবরদখল ও অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। সে পর্যটন এলাকার সুগন্ধা এলাকায় ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্রে বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া আদায় করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকে। গ্রেফতার আশিক বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবি করে। তার চক্রের সদস্যরা রাতে বিচে আসা ট্যুরিস্টদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করত। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করত। ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।



 

Show all comments
  • Md Sumon Khan ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 0
    কক্সবাজারে নিরাপত্তার কমতি আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Belal Hossain ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 0
    আমি বুঝি নাই ভাই, এরা আগে থেকে অপরাধের সাথে জড়িত তারপরও এদের বাইরে রাখা হয়। যাতে তারা আর ও বড অপরাধ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Faisal Forazi CH ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:০৫ এএম says : 0
    এর ঘটনার সাথে হোটেল কর্মচারীদের অবশ্যই জড়িত আছেন খতিয়ে দেখলে বেরিয়ে আসবে।কক্সবাজার যাওয়ার ইচ্ছে করছিলাম ফ্যামিলি নিয়ে আজ এই ধরনের ঘটনা হয়তো ভিতরে ভিতরে কি ঘটে আছে যা মানুষ হয়তো জানেনা একটা মর্মান্তিক ঘটনায় হয়তো প্রকাশ পেয়েছে কিছুটা মানুষের মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। এরকম একটি ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসক।
    Total Reply(0) Reply
  • Elias Uddin ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:০৫ এএম says : 0
    কক্সবাজার কে বয়কট করা হোক। যেখানে মা বোনদের কোন নিরাপত্তা নাই। ওই জায়গায় যাওয়ার কোন দরকার নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Matiur Rahman ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:০৬ এএম says : 0
    পর্যটন এলাকায় উন্নত আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্হা না থাকায় এধরনের ঘটনা ঘটে।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৬ এএম says : 0
    ATO NIRIHO MANUH KE CROSSFIRE E FELA HOY !! KINTU AI SHOB CHADABAJ-DURNITI BAJJJ DER CROSSFIRE E FELA HOY NA KENOOO??????
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:১১ এএম says : 0
    দ্রুত আইনের আওতায় এনে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দন্ড দেয়া প্রয়োজন। তবেই ধর্ষন বন্ধ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ