Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালেবানের সাথে সীমান্ত বিরোধ মিটেছে

পাকিস্তানের কর্মকর্তা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

পাকিস্তান এবং আফগান তালেবান কর্তৃপক্ষ সম্মতির মাধ্যমে সীমান্ত বেড়া নিয়ে সা¤প্রতিক দ্ব›দ্ব কাটিয়ে উঠেছে। শুক্রবার পাকিস্তানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা একথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন যে, সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরো বেড়া দেওয়া হবে ঐক্যমতের মাধ্যমে।
এই কর্মকর্তা, যিনি পটভ‚মিতে সাংবাদিকদের একটি গ্রæপের সাথে কথা বলেছেন, বলেছেন: ‘একটি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, বেড়া-সম্পর্কিত সমস্যাগুলো ভবিষ্যতে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে মোকাবেলা করা হবে’।
কর্মকর্তা অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলেননি যে, বুধবারের ঘটনার পর পাকিস্তান এবং ডি ফ্যাক্টো আফগান সরকারের মধ্যে আলোচনা কোন স্তরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে তালেবান যোদ্ধারা সীমান্ত বেড়া বাধাগ্রস্ত করেছিল এবং কাঁটাতারের স্পুলগুলো নিয়ে গিয়েছিল। যোদ্ধারা তখন পাকিস্তানি সৈন্যদের আবার বেড়া দেওয়া শুরু করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল।
এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। তালেবান সীমান্ত ও উপজাতীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও আলোচনায় অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, তালেবান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব বুধবার এলাকা পরিদর্শন করেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করেন। ‘বিরোধটি শান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে’ তিনি বলেন।
আফগানিস্তানের তীব্র বিরোধিতা সত্তে¡ও পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান বন্ধ করতে ২০১৭ সাল থেকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ২৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে বেড়া দিচ্ছে। বেড়া নির্মাণের পাশাপাশি প্রকল্পের মধ্যে সীমান্ত চৌকি এবং দুর্গ নির্মাণ এবং সীমান্ত রক্ষাকারী আধা-সামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কর্পসের নতুন উইং বাড়ানোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বেড়ার ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বেষ্টনীর একটি বড় অংশ বসবাসের অযোগ্য ভ‚খÐে এবং কিছু জায়গায় খুব উচ্চতায় নির্মিত হয়েছে। প্রায় ৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে বেড়াটি সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেড়া একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ আফগানরা ঔপনিবেশিক আমলে করা সীমানা নিয়ে বিরোধ করে। পাকিস্তান অবশ্য জোর দিয়ে বলে যে, দুটি দেশকে আলাদা করার লাইন, যাকে ডুরান্ড লাইনও বলা হয়, সেটিই বৈধ আন্তর্জাতিক সীমান্ত।
সীমান্তের মর্যাদা নিয়ে মতপার্থক্য এতটাই তীব্র ছিল যে, এর ফলে অতীতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছে। অধিকন্তু, বেড়া স্থাপনকারী পাকিস্তানি নির্মাণ দলগুলি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসীদের দ্বারা আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ সহ্য করেছে।
ইসলামাবাদ সবসময় আশা করেছিল যে আফগান তালেবান দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিষয়টির নিষ্পত্তিতে সাহায্য করবে। তবে, তা হয়নি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন তালেবানরা সমস্যাটির সমাধান করেনি এবং এইবারও এখন পর্যন্ত এটি সমাধানের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করেনি।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ, যিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী, আগস্টে গোষ্ঠীর দ্বারা কাবুল দখলের কয়েকদিন পরে একটি সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সীমান্তে বেড়া দেওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ‘আফগানরা অসন্তুষ্ট এবং বেড়ার বিরোধিতা করে’। বেড়া দেওয়া মানুষকে আলাদা করেছে এবং পরিবারগুলিকে বিভক্ত করেছে’ তিনি বলেন।
ব্যাকগ্রাউন্ড ব্রিফিংয়ে থাকা কর্মকর্তা বেড়া প্রকল্পের প্রতি তালেবানের বিরোধিতাকে খাটো করেছেন। ‘বেড়া একটি বাস্তবতা, এর প্রায় ৯০ শতাংশ ইনস্টল করা হয়েছে। এর সাথে একমত না হওয়া একটি বিকল্প নয়’ তিনি জোর দিয়ে বলেন।
নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সাথে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেছেন যে, যুদ্ধবিরতি না বাড়ানোর বিষয়ে টিটিপির ঘোষণা সত্তে¡ও সংলাপ এখনও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত রয়েছে এবং একটি নিষ্পত্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। টিটিপির বন্দীদের মুক্তির দাবি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সংলাপ শেষ পর্যন্ত পৌঁছায়নি’।
টিটিপি ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে তাদের প্রতিশ্রæতি পূরণ না করার অভিযোগ করার পর শুরু হওয়া মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকার করেছিল। আলোচনায় প্রাথমিক অগ্রগতির পর ৯ নভেম্বর যুদ্ধবিরতি শুরু হয় এবং তা অনেকাংশে অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই টিটিপি আবার আক্রমণ শুরু করে।
এ কর্মকর্তা টিটিপি ইস্যুতে আফগান তালেবানের সাথে কিছুটা হতাশ বলে শোনালেন। ‘তারা সর্বদা দৃঢ়ভাবে বলেছে যে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগান মাটি ব্যবহার করতে দেবে না, কিন্তু কার্যত আমরা কোন পদক্ষেপ দেখিনি’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। সূত্র : ডন অনলাইন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ