Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একজন রুটি বিক্রেতার প্রার্থনা

রাকিব আল হাসান | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

প্রায় হাজার বছর আগের কথা। জগত বিখ্যাত মুহাদ্দিস আহমাদ বিন হাম্বল যখন তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করছেন। চুলে-গোঁফে শুভ্রতা চলে এসেছে,অথচ হাদিস অন্বেষায় নিরলস শ্রমের কোন কমতি নেই। হাদিসের খোঁজে চলে যেতেন দূর দূরান্তে। ঘুরে বেড়াতেন মুহাদ্দিসদের শহরে শহরে।
এমনিভাবে একদিন মুসাফির হয়ে দূরের কোন দেশে হাদিস সংরক্ষণে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু রাতটুকু কোথায় কাটাবেন তা ভাবার আগেই সন্ধ্যা নেমে আসে। অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি মসজিদের দেখা পান। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন। ঈশার আদায় করে যখন সামান্য বিশ্রামের জন্য বিছানায় যাবেন,ঠিক তখন মসজিদের খাদেম এসে আপত্তি তুলেন। মুহাদ্দিসের পরিচয় না জানায় সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন না। এক পর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলেন তিনি।
হাঁটতে হাঁটতে অদূরে একটি বাজার সামনে পড়ে। শীতকালীন সময়। বিক্রেতারা যারযার কাজ নিয়ে আছেন। তেমনি এক রুটিওয়ালা। আগুনের উষ্ণতাপে রুটি গরম করে বিক্রি করছেন। ইমাম আহমাদ আগুনের উষ্ণতা দেখে রুটিওয়ালার কাছে গেলেন। বললেন আপনার এখান থেকে আমি কি আগুনের তাপ পোহাতে পারি? যুবক রুটিওয়ালা বৃদ্ধ শায়েখকে না চিনেও আনন্দের সাথে স্বাগতম জানান।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল দোকানের সামনে বসে আগুন তাপিয়ে নিজেকে গরম করছেন। রুটিওয়ালা তার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু রুটিওয়ালার একটি বিষয় বিশেষভাবে বিন হাম্বলের নজর কাড়ে। রুটিওয়ালা তার প্রত্যেকটি কাজে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্’ বলেন। যখন তাওয়ায় রুটি দেন তখন বলেন, রুটি নামানোর সময় বলেন,বিক্রির সময়ও বলতে থাকে। কৌতুহলী শায়েখ যুবককে প্রশ্ন করেন ‘আপনাকে সবসময় দেখছি শুধু ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্’ বলেন, এই আমলের কারণটি কি আমাকে বলবেন মেহেরবানি করে?’
যুবক রুটিওয়ালা মুচকি হাসেন এবং বলেন, এর বদৌলতেই তো আল্লাহ্ তাআ'লা আমাকে মুস্তাজাবুদ্দাওয়াহ্ (যার প্রতিটি দোয়া আল্লাহ দ্রুত কবুল করে নেন) বানিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ একজন যুবকের মুখে এমন কথা শুনে শায়েখ বিস্মিত হন। হন শিহরিত। বিস্ময় লুকাতে না পেরে আবারও প্রশ্ন করেন, তোমার সব দোয়া আল্লাহ্ কবুল করেন! এখন পর্যন্ত যা যা দোয়া করেছো তার প্রতিটিই কবুল হয়েছে!
যুবক বলেন হ্যাঁ। কিন্তু শুধু একটি দোয়া এখনো কবুল হয়নি আমার! শায়েখ জিজ্ঞেস করেন কী সেই দোয়া যা আল্লাহ্ কবুল করেননি? ব্যথিত মন নিয়ে যুবক বলেন,আমি দোয়া করেছিলাম জগত বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের দেখা যেন আমি পাই,তার কপালে চুমু খেয়ে যেন নিজেকে ধন্য করতে পারি। কিন্তু এই মনোবাঞ্ছাটি আমার এখনো পূরণ হয়নি। যুবকের কথা শুনে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের দু-চোখে পানি চলে আসে। দু-হাত বাড়িয়ে যুবককে ডেকে বলেন- হে যুবক তোমার এ দোয়াটিও আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন। রুটিওয়ালা যুবক মশায়েখকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন। নূরানী কপালে চুমু খেয়ে নিজেকে ধন্য করেন এবং একটি আনন্দঘন মুহূর্তের অবতারণা হয়।
আমরাও পারি আমাদের প্রতিটি কাজ ও কর্মে আস্তাগফিরুল্লাহ্ বলতে। নবীজি আমাদের জন্য হাদীসের বিশাল এক ভান্ডার রেখে গিয়েছেন। হাদীস থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে এই অভ্যাস গড়ে তুলবে তার জন্য আরো চারটি পুরষ্কার থাকবে এবং পাঁচ নাম্বার হলো তার সব দোয়া আল্লাহ দ্রুত কবুল করে নিবেন। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ