বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী বেসরকারি যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি অভিযান-১০’এ ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আহতের সংখ্যা আরো অন্তত দেড়শ। নিখোঁজ রয়েছেন আরো শতাধিক। এপর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ঝালকাঠির ফায়ার ব্রিগেড ও কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা গেছে। নিহতদের লাশ ঝালকাঠি ও বরিশালের মর্গে পাঠান হয়েছে। আহত প্রায় ৭০ জনকে ঝালকাঠি জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান হয়েছে। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রায় ২৬০ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থ ‘এমভি অভিযান-১০’ ঢাকার সদরঘাট থেকে ৩শতাধীক যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে চাঁদপুর থেকেও কিছু যাত্রী নিয়ে নৌযানটি বরিশাল হয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে ঝালকাঠি ও নলছিটির মধ্যবর্তী সুগন্ধ নদী অতিক্রমকালে এর মূল ইঞ্জিনরুমে বিকট শব্দে আগুনের সূত্রপাত হয়।
একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, খুব দ্রুত আগুনের লেলিহান শিখা নৌযানটির লোয়ার ডেক থেকে দোতালা হয়ে তিন তলাতেও পৌঁছে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন লোয়ার ডেকের পেছনের দিকের ইঞ্জিন রুমের কাছাকাছি যাত্রীদের গ্রাস করে। এসময় আনেকেই ঘন কুয়াশা আর পৌষের হাড়কাপান শীতে নৌযানটি থেকে সুগন্ধা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এদিকে অগ্নিকান্ডের সাথে নৌযানটির একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এসময় ইঞ্জিন রুমে কোন কর্মী ছিলনা। অপরদিকে হুইল সুকানি সহ দায়িত্বরত মাষ্টারও নৌযানটি নদীর কিনারায় ভেড়ানোর কোন চেষ্টা না করে মাষ্টার ব্রিজ ত্যাগ করেন। ফলে নৌযানটি নিন্ত্রনহীনভাবে নদী স্রোতের সাথে ভাটিতে ধীর গতিতে চলতে চলতে ঝালকাঠি বন্দর পার হয়ে সুগন্ধা, বিষখালী ও বাসন্ডা নদীর মোহনায় পোনাবালিয়া গ্রামের কাছে কিনারা আটকে যায়। একাধিক যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, অগ্নিকান্ডের সাথে সাথে যদি নৌযানটিকে কিনারায় ভেড়ান হত, তবে হতাহতের সংখ্যা অনেক কম হতে পারত। পাশাপাশি নৌযানটিতে তেমন কোন অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নেভানোর নুন্যতম কোন সুযোগও ছিলনা।
এদিকে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঝালকাঠি ফায়ার স্টেশন প্রথম সংবাদ পেলেও তাদের কাছে কোন নৌযান না থাকায় রাতের ঘন কুয়াশার মধ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌকা সংগ্রহ করে ফায়ার ফাইটার ইকুইপমেন্ট সহ দুর্ঘটনা কবলিত নৌযানটির কাছে পৌছতে সাড়ে ৪টা বেজে যায়।
অপরদিকে বরিশালের একমাত্র নৌ দমকল স্টেশনে খবর দেয়র সাথে ‘রিভার ফায়ার ফাইটার ‘ অগ্নি ঘাতক’ও একটি ‘রিভার এ্যামেুলেন্স’ দুর্ঘটনাস্থলের দিকে রওয়ানা হলেও ঘন কুয়াশায় মাত্র ৫ কিলোমিটার দুরে দপদপিয়ার কাছে নৌযানটি নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। অগ্নি ঘাতক চড়ায় উঠে গেলেও রিভার এ্যাম্বুলেন্সটি দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়।
ইতোমধ্যে বরিশাল ফায়ার স্টেশন ছাড়াও রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়ীয়া থেকেও ৫টি ইউনিট ‘এমভি অভিযান-১০’এর কাছে পৌঁছে আগুনে নেভানোর কাজে অংশ নেয়। রাত সাড়ে ৪টা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছে। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে অন্তত ৩০জন আদম সন্তান। এছাড়া বিষখালি সহ বিভিন্ন নদী থেকে কোস্ট গার্ড অনন্ত ৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে। তবে এখনো অন্তত শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
গোটা নৌযানটির বিভিন্নস্থানে সকাল ৯টা পর্যন্ত শুধু অগ্নিদগ্ধ মানুষের লাশ আর তার পোড়া গন্ধে পরিবেশ ছিল বর্ণনাতীত। ঝালকাঠির জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন ছাড়াও দমকল বাহিনীর বিভাগীয় উপ-পরিচালকও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুর্ঘটনা স্থলে থেকে উদ্ধার কাজ তদারকি করছেন। নিহতদের স্বজনের ইতোমধ্যে বরিশাল ও ঝালকাঠিতে ছুটে এসেছেন। হতাহতদের নিকটজনের আহাজারিতে নৌযানটির এলাকার পরিবেশ এখন ভারাক্রান্ত। ঝালবাঠী জেলা প্রশাসন এবং বিঅইডব্লিউটিএ এ দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্তে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।