Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আত্মসংযমী মানুষ সফলতা লাভ করে

শাহাদাৎ হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

আত্মনিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের আবেগ ব্যক্তিত্বের একটি অংশ। আমরা যদি আনাদের আবেগ লাগামহীনভাবে প্রকাশ করতে থাকি এর ফলে অন্যকে বিব্রত হতে হয়। যার ফল পরবর্তীতে সেটা আমাদের ব্যক্তিত্বের উপরেই প্রভাব ফেলে। আত্মসংযম হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করার ক্ষমতা, অর্থাৎ নিজের আবেগ, আচরণ, আকাঙ্ক্ষা বা সহজভাবে শান্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা। এই ক্ষমতা আমাদের নিবিড়তা এবং দক্ষতার সাথে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের মুখোমুখি হতে দেয়।
মানুষকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছাতে হলে অবশ্যই তাকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মসংযম হয়ে সংশোধন হতে হবে। অর্থাৎ আত্মার সংশোধন করার পর তিনি সফলতা লাভ করবেন। আত্মসংযম করতে একমাত্র ইসলামের বিধান সমূহ পালন করার মাধ্যমেই আত্ম সংশোধন করা সর্বোত্তম। অর্থাৎ ইসলামিক বিধান বা হুকুম আহকাম পালন করলে আমরা পরিপূর্ণতা লাভ করবো এবং আমাদের আত্মসংশোধন হবে। কিন্তু সেটা কিভাবে হবে? এবং কোন পদ্ধতিতে করতে হবে সেটা জানতে হবে?
একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি সে কোন পথে চলবে। তার কোন কাজগুলো প্রথমে করা প্রয়োজন এবং এরপর কোন কাজগুলো সম্পূর্ণ করা উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি এই কাজ সম্পূর্ণ করার পদ্ধতি উপলব্ধি করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বর্ণিত বিধান আমাদের সামনে থাকা সত্বেও আল্লাহর বিধান মোতাবেক আমল করতে পারব না। আপনি আত্মনিয়ন্ত্রণ করার জন্য কয়েকটি মাধ্যম পালন করুন।
১. আপনার বাহ্যিক দিককে সুন্দরভাবে পরিচর্যা করে সাজিয়ে তুলতে হবে। কিন্তু এই সুন্দর পরিচর্যা হতে হবে ইসলামে বর্ণিত ওয়াজিব কাজগুলো পালনের মাধ্যমে এবং হারাম কাজগুলো বর্জনের মাধ্যমে। অর্থাৎ একজন মুমিন ব্যক্তি প্রথম ধাপে যে কাজগুলো করবে সেগুলো অবশ্যই ইসলামে ও শরিয়তে বর্ণিত হতে হবে অতঃপর হারাম কাজগুলোকে বর্জন করে আল্লাহর আদেশ পালন করা। এই কাজের ফলে আপনার অন্তরের ভিতর নূরের জৌতি তৈরি হবে যা আপনাকে পরবর্তীতে দুনিয়ায় যেকোন হারাম কাজ থেকে বিরত রাখবে।
২. আপনার আত্মাকে পাক পবিত্র করা অর্থাৎ আপনাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি পরিবর্তন করতে হবে। আপনার কলুষতাকে দূর করতে হবে এবং আত্মার ভিতরের অপবিত্রতাকে ধুয়েমুছে পরিস্কার করতে হবে। আত্মার বিষ যেমন: গর্ববোধ করা, কৃপণতা, লোক দেখানো কাজকর্ম, হিংসা, গিবত, যিনা ইত্যাদি অর্থাৎ যে কাজগুলো আধ্যাত্মিক দিক থেকে উদ্ভব হয় এসব কাজগুলোকে বর্জন করা। আপনার আধ্যাত্মিক সমস্যা গুলো চাইলেই হঠাৎ করে পরিবর্তন করতে পারবেন না এর জন্য প্রয়োজন অনুশীলন। আপনাকে আপনার আধ্যাত্মিক দূর্বল করা প্রতিটি বিষয়ের খোজ করতে হবে এবং তাৎক্ষণিক সেই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যেত হবে। এবং আপনাকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।
৩. আধ্যাত্মিক অর্জনকারী একজন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার দোষ-গুণে নিজেকে গুণান্বিত করবেন। তাদের অপবিত্র দূর করার সাথে সাথে নিজের অন্তরকে সুন্দর গুনাবলি দিয়ে ভরিয়ে দিবে। শুধু নিয়মিত সালাত, রোজা ও জিকির আজকার করলেই অন্তরের পবিত্রতা দূর করা যাবে না। অনেকে আছে যারা লোক দেখানো কাজ করে সমাজে ঘুরেফিরে বেড়ায়। অবশ্যই আধ্যাত্মিক অর্জনকারী ব্যক্তিকে লোক দেখানে কোন ইবাদাতে শামিল করা যাবে না।
অতঃপর আপনার ভালো কাজের মাধ্যমে আপনি আল্লাহর রঙে রঙ্গিত হবেন। আল্লাহর নূরের জোতিতে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে তার রঙ্গিন রঙ্গের ছোয়ায় আবদ্ধ করে নিবেন। তখনই আপনার মধ্যে ধর্মীয় নৈতিকতা দেখা দিবে। আর নৈতিকতার ফলে আপনি সমাজে আপনার সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবেন।
একজন মুসলিম অবশ্যই নিজেকে ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে আত্মনিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা প্রায়ই সামান্য কথা নিয়ে একে অপরের সাথে রাগ করে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে যাই। অথচ সামান্য রাগকে উপেক্ষা করে যদি নিজেদের সংযত করে রাখতে পারি তাহলে আমাদের অপেক্ষায় রয়েছে অসংখ্য নেয়ামত। আত্মনিয়ন্ত্রণের ফলে দুনিয়ার জীবনে যে প্রাপ্তিগুলো পাওয়া যায়। যথা- ১. আপনাকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে দেয়। আপনাকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাড় করিয়ে দেয় যে চ্যালেঞ্জ আপনি সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারেন। ২. আপনার জীবনের ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। আত্মনিয়ন্ত্রণের ফলে আপনি সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন আপনার জীবনের সফলতা কোথায়।
৩. যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থেকে সমস্যা সমাধানে সহায়তা করার ক্ষমতা। একজন আত্মনিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির মন-মেজাজ সর্বদা ভালো থাকে। ৪. চিন্তার বৃহত্তর স্বচ্ছতা রাখতে সহায়তা করে। ৫. পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়। সামান্য কথা নিয়ে ঝগড়া, দরকষাকষি, হানাহানি, মারামারি, দ্বিধা- দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায় ফলে অন্যের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরিবর্তে সম্পর্ক আরো মধুর হয়। ৬. মনোনিবেশ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৭. আপনি যখন অতিরিক্ত চাপের মাঝে থাকেন তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনার কাজ বিঘ্নিত হবে না। আপনি সঠিকভাবে কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হবেন না। ৮. আপনার আত্মসম্মান বজায় রেখে চলতে সাহায্য করে। আপনি এমন কোন কাজে নিজেকে জড়িত করবেন না যে কাজে আপনার আত্মসম্মান লঙ্ঘন হয়।
মানবজাতির সীমালঙ্ঘন করে চলা পছন্দসই। কিন্তু একজন ব্যক্তির সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে দূরে রাখুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ