চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.) এর একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন। তিনি ছিলেন মদিনার খাজরাজ গোত্রের আনসার এবং সবচেয়ে বয়স্ক সাহাবী। তিনি দশ বছর আল্লাহর রাসূলের সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। আনাস (রা.) ১০ বছর বয়স থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ তার জীবনের কৈশোর থেকে যৌবনেরও একটি অংশ রাসূল এর সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) যখন ছোট তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) আনাসকে একটা কাজ দিলেন। ছোট আনাস কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য বাহির হলেন কিন্তু আনাসের ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছে, আনাস কাজ সম্পূর্ণ করলো কিনা এটা রাসূলকে চিন্তিত করছিলো তাই আল্লাহর রাসূল নিজে কাজ শেষ করে বের হলেন আনাসকে খুজতে। দেখতে পেলেন আনাস হাসিমাখা মুখ নিয়ে একদল বাচ্চাদের সাথে খেলায় জমে গেছে।
আল্লাহর রাসূল দাড়িয়ে আনাস (রা.) ও অন্যন্যা বাচ্চাদের খেলা দেখছিল। অতঃপর ছোট্টো আনাস খেলার মধ্যে থেকে দেখতে পেলো রাসূল (সা.) দূরে দাড়িয়ে তাদের খেলা দেখছে। তখন আনাসের মনে হলো, রাসূল তো তাকে একটা কাজ দিয়েছিলো। আনাস দ্রুত দৌড়ে রাসূলের কাছে আসলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমি কাজ না করে খেলায় যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আপনি আমাকে শাস্তি দিন।’
কিন্তু আল্লাহর রাসূল আনাসের কথায় জবাব দিলেন ‘আনাস আমি কাজটা করে নিয়েছি তুমি খেলতে যাও, খেলা শেষ হলে বাড়ি এসো।’ এই ছিল আমার রাসূলের খেলামদের প্রতি ব্যবহার। অথচ আমাদের সমাজে গরীব, দুখী, অসহায় ব্যক্তিদের সাথে ছোট কারণ নিয়েই তাদের রীতিমতো কটুকথা বলে যাচ্ছে।
আল্লাহর রাসূল (সা.) গেলাম আনাস (রা.) এর জন্য দো'আ করেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে দিন এবং আপনি তাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন।’ আল্লাহর রাসূল একবার হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসূল (সা.) দূর থেকে দেখলেন আবু বকর কোনো একটা কাজ নিয়ে তার গোলামকে বকাঝকা করছেন। আল্লাহর রাসূল এগিয়ে গিয়ে আবু বকরকে বললেন,‘ এই আবু বকর, তোমার নাম সিদ্দিক। গোলামদের সাথে তোমার এমন ব্যবহার মানায় না।’
আমাদের সমাজে গাড়ি চালক, রিক্সা চালক, বাড়ির কাজের লোক সহ দিনমজুর ব্যক্তিদের সাথে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ দেখা দেয়। অথচ তাদের সাথে আমাদের ব্যবহার কেমন করা উচিত সেটাই আদ্দো জানা নেই। তথাকথিত সমাজে প্রচলিত একটা কথা ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ কিন্তু এটা আদ্দো কি সঠিক। আমরা কেবল ব্যবহার বলতে জানি উচ্চ শ্রেণির লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করা।
সমাজের সবাই যদি উচ্চ শ্রেণির লোক হতো তাহলে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো আটকে থাকতো। যাতায়াত, বাসা বাড়ির কাজ সবই নিজেদের করতে হতো অথচ আমরা আরাম আয়েশে কিছু অর্থের সাহায্য কাজগুলো অন্যের মাধ্যমে পূরণ করে নেই। কিন্তু যাদের দিয়ে কাজগুলো সম্পূর্ণ করাই তাদের সাথে ব্যবহারটা এখনও সঠিক হয়ে উঠলো না।
আল্লাহর রাসূল যখন মৃত্যু সজ্জায় তখন হযরত ওমর ফারুক (রা.) কে ডাকলেন। হযরত ওমর (রা.) তার কানটা রাসূলের মুখের নিকট রাখলেন তখন রাসূল (সা.) আস্তে আস্তে বললেন, ‘হে ওমর কালি এবং পাতা নিয়ে আসো, তোমাকে কিছু বলবো সেগুলো লিখে আমার উম্মতকে জানিয়ে দিবে।’ হযরত ওমর (রা.) চিন্তা করলেন রাসূলের অবস্থা আসন্নজনক যদি কালি পাতা আনতে আনতে আমি রাসূলের শেষ কথা শুনতে না পাই তাই তখন ওমর ফারুক (রা.) বললেন,"হে আল্লাহর রাসূল আপনি বলুন আমি শুনছি। আমি আপনার এই কথা উম্মতদের মাঝে জানিয়ো দিবো।" আল্লাহর রাসূল (সা.) আস্তে আস্তে বললেন, ‘তোমরা নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হও। আর তোমাদের অধীনস্থদের সঙ্গে দয়া ও ন্যায়ের আচরণ করো।’ (আবু দাউদ, ৫১৫৬) হযরত ওমর ফারুক (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা তো এ সম্পর্কে অবগত।
অতঃপর হযরত আলী (রা.) কে ডাকলেন, ‘হে আলী কালি এবং পাতা নিয়ে আসো, তোমাকে কিছু কথা বলে যাবো আমার উম্মতের মাঝে আমার এই বানী জানিয়ে দিবে।’ হযরত ওমর ফারুক (রা.) এর ন্যায় হযরত আলী (রা.) ও বললেন,"আল্লাহর রাসূল আপনি বলুন আমি শুনছি। হযরত আলী তার কানটা একদম রাসূলের মুখের পাশে রেখে দিলেন। আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘তোমরা নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হও। আর তোমাদের অধীনস্থদের সঙ্গে দয়া ও ন্যায়ের আচরণ করো।’ (আবু দাউদ, ৫১৫৬)। হযরত আলী (রা.) ও তখন বললেন ‘হে আল্লাহর রাসূল আমরা এ বিষয়ে অবগত।
এখন যদিও দাস বা গোলাম প্রথা নেই তবে আছে নিম্নশ্রেণির মানুষদের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার আর শোষণ ব্যবস্থা। কিন্তু রাসূলের শেষ কথা ছিল নামাজ এবং অধীনস্থদের সঙ্গে দয়া ও ন্যায় আচরণ। আল্লাহ সুবহানাল্লাহ ওয়া তায়ালা আমাদের কবুল করুন। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।