চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হিজরি সনের ১৪৪৩ জমাদিউল আউয়াল’ মাস ৬ ডিসেম্বর সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড শীতে কিংবা প্রবল শৈত্যপ্রবাহে সবকিছু প্রায় জমে জমে যায়। তাই এ মাসের এই নাম। এই মাসটিতে আরবে ঠাণ্ডা নেমে আসত। প্রসিদ্ধ উষ্ট্রযুদ্ধও এই মাসের ১৫ তারিখে সংঘটিত হয়’। আর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউস সানি’, এটি হিজরি আরবি সনের ষষ্ঠ মাস। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এই মাস দুটি ‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে সমধিক পরিচিত। এর বাংলা অর্থ হলো প্রথম জমাদা ও দ্বিতীয় জমাদা বা প্রথম শীত ও দ্বিতীয় শীত; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম মাস ও শীতকালের দ্বিতীয় মাস। (আল মুনজিদ)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তুমি পর্বতমালা দেখছ, মনে করছ উহা স্থির অচল, অথচ তারা মেঘপুঞ্জের ন্যায় সঞ্চারমান। ইহা আল্লাহরই সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সমস্ত কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৮৮)। আর জুমাদা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো স্থির, অবিচল, দৃঢ়, কঠিন; জমাটবদ্ধ, নিস্তব্ধ, নীরব, নিথর, শুষ্ক, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত; শীতল, শীতকাল, শীতবস্ত্র; কার্পণ্য, বদ্ধমুষ্টি; কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অস্থির সময়, চিন্তাযুক্ত অবস্থা।
যেহেতু আরব দেশে শীতকালে প্রচণ্ড শীতে তরল পানি জমে কঠিন বরফে পরিণত হতো; জড় পদার্থগুলো জমে শক্ত হয়ে যেত; উদ্ভিদ ও জীব নিথর হয়ে থাকত; প্রাণীরা নীরব হয়ে যেত; তাই এই মাসের এ নামকরণ করা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘জুমাদা’ হলো আরবদের শীতকাল। এটি বসন্তের নিকটবর্তী; গ্রীষ্মের পূর্বে। কারণ দুই ভূমির সীমানা বা দুই বাড়ির সীমানাকে এবং নিকট প্রতিবেশীকেও ‘জুমাদা’ বলা হয়। একত্রে এ দুই মাসকে ‘জুমাদায়ান’ বা ‘জুমাদায়িন’ বলা হয়।মূলত এই মাসের নামের মাঝে যেসব অর্থ বিদ্যমান, তা তিন ভাগে বিভাজনযোগ্য।
যথা ইতিবাচক অর্থ, নেতিবাচক অর্থ ও মধ্যবর্তী বা ক্রান্তিকালীন অর্থ। সুতরাং আমাদের করণীয় হবে ইতিবাচক অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও বেশি বেশি নেক কাজ বা সৎকর্ম সম্পাদনে ব্রতী হওয়া। নেতিবাচক অর্থগুলো অনুধাবন করে নিজের মধ্যে থাকা সব নেতিবাচক অভ্যাস ও বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রতি মনোনিবেশ করা।আর আরবি অন্যান্য মাসের মতো এই মাসেরও রয়েছে কিছু তাৎপর্য।এই মাসের আমল হলো নফল নামাজ, নফল রোজা, দান-খয়রাত ইত্যাদি।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ, তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউয়াবিন নামাজ আদায় করা। কাজা রোজা থাকলে পুরা করা, মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা। মাসের চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিজ’ বা শুভ্র সময়ের বাবা হজরত আদম (আ.)-এর সুন্নত রোজা রাখা। সপ্তাহে প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নফল রোজা রাখা।
বিশেষত ‘রজব’ মাসের প্রস্তুতি হিসেবে আরো বেশি নেক আমল এবং অধিক পরিমাণে নফল নামাজ ও নফল রোজা করার কথা রয়েছে। জিকির-আজকার, দোয়া-কালাম, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ-তাহলিল,তাওবা-ইস্তিগফার, খতম তিলাওয়াত,সদকা-খয়রাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মাস অতিবাহিত করলে নিশ্চিত এর বরকত, ফজিলত ও কল্যাণ লাভ হবে। অন্যথায় সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে।পরিশেষে এই জন্য আমাদেরকে সমস্ত প্রকার শিরক, কুফর ও বেদ’আত থেকে মুক্ত হয়ে ঈমানের ওপরে অটল থাকতে হবে।
তাই আসুন আমরা শিরক মুক্ত ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারি আল্লাহ তা’আলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।