Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪০ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা

৬ শতাধিক শরণার্থীকে ফেরত পাঠাল থাইল্যান্ড, সংঘর্ষ অব্যাহত মিয়ানমারে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত জুলাই মাসে কয়েকটি গ্রামে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, যেখানে অন্তত ৪০ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং বেঁচে যাওয়া কয়েকজনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বলেছে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রামের বাসিন্দাদের এক জায়গায় জড়ো করার পর পুরুষদের আলাদা করে ফেলে, তারপর তাদের হত্যা করা হয়। এসব ঘটনার অনুসন্ধানে যেসব ভিডিও ও ছবি মিলেছে, তাতে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হত্যা করার আগে নির্যাতন চালানো হয়। তারপর মাটিতে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয় তাদের লাশ। বিবিসি লিখেছে, জুলাই মাসে মধ্য মিয়ানমারের সাগাইং জেলার কানি শহরের কাছে এরকম চারটি হত্যাযজ্ঞ চলে। ওই এলাকাটি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কানি এলাকার ১১ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নেয়ার পর মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ও ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছে তারা। ওই ভিডিও ও ছবিগুলো সংগ্রহ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি এনজিও, যারা মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছে। সবচেয়ে বড় হত্যাযজ্ঞটি চালানো হয় কানি এলাকার ওইন গ্রামে। সেখানে অন্তত ১৪ জন পুরুষকে পিটিয়ে অথবা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে তাদের লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে জঙ্গলের ভেতরে পাহাড়ি খাদের মধ্যে। ওই এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন, সেনা সদস্যরা ওই লোকগুলোকে হত্যা করার আগে দড়ি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছে। ওই গ্রামের এক নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি, যার ভাই, ভাতিজা এবং দেবরকে সেনা সদস্যরা হত্যা করেছে। তিনি বলেছেন, “দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওই দৃশ্য সহ্য করা সম্ভব ছিল না। আমরা মাথা নিচু করে রেখেছিলাম, কাঁদছিলাম। “আমরা বার বার ওদের প্রাণভিক্ষা চেয়েছি, তারা আমাদের কথা কানে তোলেনি। তারা মেয়েদের বলছিল, ‘এর মধ্যে কি তোমাদের স্বামী আছে? যদি থাকে তাহলে শেষ বিদায় নিয়ে নাও’।” সৈন্যদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া একজন বলেছেন, তার সাথে অন্য যাদের আটক করা হয়েছিল, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। “তাদের বেঁধে রেখে পাথর ছোড়া হয়েছে, রাইফেলের কুঁদো দিয়ে মেরেছে। এই অত্যাচার চলেছে সারা দিন ধরে।” বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সেনা সদস্যদের কেউ কেউ তরুণ, ১৭-১৮ বছর বয়সীরাও আছে। কেউ কেউ আবার অনেক বয়স্ক। তাদের সঙ্গে এক নারীকেও তিনি দেখেছেন। ইয়িন গ্রামের কাছেই জি বিন ডুইন গ্রামে জুলাইয়ের শেষ দিকে একটি গণকবরে ১২টি বিকৃত লাশ মাটি চাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি শিশু এবং এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির লাশও ছিল। পাশেই একটি বরই গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ। তার লাশের ভিডিও পর্যালোচনা করে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে। ওই বৃদ্ধের পরিবার বলেছে, সেনা সদস্যরা গ্রামে ঢোকার সময় ছেলে আর নাতিরা পালিয়ে গেলেও তিনি বাড়িতে থেকে গিয়েছিল এই আশায় যে, বয়সের কারণে হয়ত তার কোনো ক্ষতি কেউ করবে না। নিহতদের স্বজনদের দাবি, সেনাবাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে তারা কোনোভাবে জড়িত ছিলেন না। ইয়িন গ্রামের হত্যাযজ্ঞে ভাইকে হারানো এক নারী বলেছেন, সেনা সদস্যদের কাছে তিনি মিনতি করে বলেছিলেন যে তার ভাই ‘গুলতি পর্যন্ত ছুড়তে পারে না’। এক সৈনিক তখন উত্তর দেয়: “একটা কথাও না, আমরা ক্লান্ত, এক্কেবারে মেরে ফেলব।” ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের মিয়ানমারে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বেশিরভাগ বেসরকারি সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং জাতিগত বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের মুখে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ৬শ’রও বেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে থাইল্যান্ড। রোববার থাইল্যান্ডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠানোর এই খবর জানিয়েছেন। এদিনও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ চলছে বলে জানান তিনি। সীমান্তের থাই অংশে রয়টার্সের এক সাংবাদিক রোববার বিকালেও অবিরাম গুলির আওয়াজ শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই লড়াই পরিস্থিতির মধ্যেই রোববার সকালের দিকে রয়টার্সের সাংবাদিকরা থাইল্যান্ডের স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েক ডজন শরণার্থীকে সীমান্তের ওপারে ফেরত পাঠানোর জন্য তিনটি ট্রাকে তুলতে দেখেছেন। ট্রাক সীমান্ত ছেড়ে যাওয়ার আগে এক শরণার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি মায়ে তাও তালে থেকে পালিয়ে এসেছি। সেখানে আমার আশপাশের এলাকায় গোলা পড়েছিল। আমি পানি পার হয়ে এই (থাইল্যান্ড) দিকে হেঁটে এসেছি।” থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশের গভর্নর সোমচাই বিকালের দিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “লড়াইয়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় অনেক শরণার্থী স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চাইছেন।” সোমচাই বলেন, এ পর্যন্ত ৬২৩ জন শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখনও ২, ০৯৪ জন শরণার্থী থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। তারা মিয়ানমারে ফিরতে চাইলে তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন থাইল্যান্ডকে তাড়াহুড়ো করে শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন মাঠে নামে, তখন তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষকে হামলার নিশানা করে সেটি সবারই জানা। তাই এই শরণার্থীরা যে আসলেই তাদের জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছে তা বললে অত্যুক্তি হবে না।” রোববার এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের পক্ষ থেকে করা ফোনকলের কোনও সাড়া দেননি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্র। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের শরণার্থী অধিকার সংগঠন ‘দ্য এইড অ্যালায়েন্স কমিটি’ বলেছে, থাইল্যান্ডে প্রবেশের অপেক্ষায় মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছে। বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংঘর্ষ অব্যাহত মিয়ানমারে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ