Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রেসিডেন্টের সাথে রাজনৈতিক দলের সংলাপ আজ শুরু

নির্বাচন কমিশন গঠন জাতীয় পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল যাচ্ছে বঙ্গভবনে, লাগবে করোনা পরীক্ষা রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত সংলাপ শুধু আনুষ্ঠানিকতা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সাথে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ আজ শুরু হচ্ছে। বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাথে প্রেসিডেন্ট সংলাপে বসছেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দলের সাথে বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্টের ধারাবাহিক সংলাপের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সংলাপ করবেন। করোনার মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের চোখ রাঙানি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের করোনা টেস্ট করে সংলাপে অংশ নিতে হবে।

জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেবেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রেসিডেন্টের সংলাপ বা মতবিনিময় মূলত এক ধরনের ‘আনুষ্ঠানিকতা’। এ সংলাপের মাধ্যমে নতুন কিছু হবে বলে মনে হয় না। এর আগেও দু’বার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল। এবারও তাই হবে।

জানা গেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৬ সালে যে সংলাপ হয়েছিল, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের খুব বেশি কড়াকড়ি আরোপ না হলেও এবার সীমিত সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে সংলাপে আসার অনুরোধ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বল্প সংখ্যক প্রতিনিধিদের সংলাপের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
এ সংলাপ জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলতে পারে। বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, এখনও সব দলের সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ চ‚ড়ান্ত হয়নি। তবে পরবর্তীতে আগামী ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের (ইনু) সাথে সংলাপের দিন চ‚ড়ান্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।

জাসদ সূত্রে জানা যায়, ২২ ডিসেম্বর তাদের সংলাপের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের অনধিক সাতজন প্রতিনিধি নিয়ে সংলাপে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলের ভিত্তিতে সংলাপে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করবেন প্রেসিডেন্ট। এতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ (সিএজি) ২ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট নাগরিক এই সার্চ কমিটিতে থাকবেন।

উল্লেখ্য, আগামী ১৪ ফেব্রæয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে প্রেসিডেন্ট নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের হাতে। গেল এক দশকে সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন।

সাংবিধানিক সংস্থা ইসির সদস্যদের নিয়োগে আইন করার কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা হয়নি। এ নিয়োগ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে সরকারকে। অবশ্য এবার সরকারও ইসি গঠনে আইন প্রণয়নে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, সময়ের স্বল্পতার কারণে তারা এবার আইন করতে পারছেন না। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারও ইসি গঠন করা হবে। চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের আগামী দুটি অধিবেশনের মধ্যে তিনি ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন সংসদে উত্থাপন করতে পারবেন। এর খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধান সাপেক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন বলে সংবিধানে উল্লেখ আছে।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গঠনের আগে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ শুরু করেছিলেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এক মাস ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে চলা ওই সংলাপ ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়েছিল।

তবে এবারের সংলাপে বিএনপি অংশ নেবে না বলে দলের একাধিক সিনিয়র নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সাথে সংলাপ করে নতুন কিছু পাওয়ার আশা তারা করছেন না। তাদের কাছে নির্বাচন কমিশন গঠন এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এ সরকারের অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে যে আন্দোলন করছেন তাকেই আরো বেগবান করে সফল করতে চান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন কমিশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ