Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েনি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান দাম প্রভাব ফেলেছে ভোক্তার ওপর। মূল্যস্ফীতির চাপে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ। বেশির ভাগ দেশে এ হার রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতি কঠোর করার উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। যদিও এ পরিস্থিতির বাইরে থেকে গেছে জাপান। এখনো মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভব করেনি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এপির খবরে বলা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে সুদের হার বাড়িয়েছে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে উল্টো পদক্ষেপ নিচ্ছে ব্যাংক অব জাপান (বিওজে)। সম্প্রতি ব্যাংকটি জানিয়েছে, করপোরেট বন্ড ক্রয়কে কভিডপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। পাশাপাশি এখনো অধরা ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অর্জন এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে কয়েক কোটি ডলারের প্রণোদনা বিতরণ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অনিশ্চয়তা তৈরি করায় এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে ব্যাংকটি। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের মার্সেল থিলিয়ান্ট একটি প্রতিবেদনে বলেন, শিগগিরই জাপানে মূল্যস্ফীতির এ লক্ষ্য পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। ব্যাংক অব জাপান এমন কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে থাকবে, যেগুলো অদূর ভবিষ্যতে মুদ্রানীতি কঠোর করবে না। অক্টোবরে জাপানের মূল্যস্ফীতি দশমিক ১ শতাংশ ছিল। দামের অস্থিরতার মধ্যে থাকা খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাদ দিলে মূল্যস্ফীতির হার নেতিবাচক। বিওজে আগামী মার্চে শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে শূন্য শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছে। অন্যদিকে গত ১২ মাসের তুলনায় অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশটিতে এ মূল্যস্ফীতির হার চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। মহামারীর শুরু থেকেই ফেডারেল রিজার্ভ ও অন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বর্তমানে বিওজের মতো আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ উন্মোচন করেছিল। পাশাপাশি মুদ্রানীতি সহজ করে রেকর্ড নিম্নে নামানো হয়েছিল সুদের হার। কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদানের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে উন্নত হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এ অবস্থায় পণ্যের দাম বাড়ায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পুরোপুরি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়াতে চলেছে। মার্কিন মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের কাছাকাছি উচ্চতায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে নীতিনির্ধারকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাসভিত্তিক বন্ড ক্রয় পূর্বের পরিকল্পনার চেয়ে দ্বিগুণ দ্রুত কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটি ২০২২ সালের প্রথমার্ধে সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সম্প্রতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদের হার রেকর্ড নিম্ন দশমিক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। গত মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি এক দশকের সর্বোচ্চে ৫ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। এশিয়ার কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সুদের হার বাড়াতে শুরু করেছে। নিউজিল্যান্ড রেকর্ড নিম্ন সুদের হার বাড়িয়ে অক্টোবরে দশমিক ২৫ শতাংশ এবং নভেম্বরে দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। ১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাপানের অর্থনীতিতে ধীরগতি শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে এরপর আর কখনই সেভাবে গতি ফিরে পায়নি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি। দ্রুত বয়স্ক জনসংখ্যা সংকুচিত হওয়া এবং ক্ষীণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগ, বেতন বাড়ানো কিংবা বিনিয়োগের বিষয়ে খুব সতর্কাবস্থায় রয়েছে। উল্টো দেশটি এখন মূলত পণ্যমূল্যের পতন ঠেকাতে লড়াই করছে। টোকিওর কেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিওজের নীতি বোর্ডের সাবেক সদস্য সায়ুরি শিরাই বলেন, জাপানের মূল্যস্ফীতি স্থবির রয়ে গেছে। জাপানের খুচরা বিক্রেতা, রেস্তোরাঁ ও অন্য ব্যবসাগুলো তাদের মূল্যসংবেদনশীল ভোক্তাদের ওপর উচ্চ ব্যয় চাপাতে অপছন্দ করে। পরিবর্তে তারা মুনাফার মার্জিন কমিয়ে দেয়। যদিও অক্টোবরে জাপানের পাইকারি মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। শিল্পোৎপাদক ও কৃষকরা ক্রমবর্ধমান ব্যয় বিশেষ করে জ্বালানির জন্য চাপ অনুভব করছেন। পেট্রল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। কিছু খাবার ব্র্যান্ড আমদানি করা গম, আলু ও অন্যান্য পণ্যের উচ্চ ব্যয় মেটাতে আগামী বছর দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সায়ুরি শিরাই আশা করেন, আগামী বছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে। তবে এ হার ২ শতাংশে পৌঁছে যাওয়া কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, জাপানে ভোক্তা ব্যয় দুর্বল রয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলো খুচরা ব্যয়ের ওপর সম্পূর্ণ খরচ চাপিয়ে দিতে সক্ষম হবে না। এপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ