Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পাকিস্তানে আজ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক

মুটের সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী কোরেশি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি গতকাল বলেছেন, ইসলামাবাদে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বৈঠক হবে ‘ঐতিহাসিক’ এবং আস্থা ব্যক্ত করেছেন যে, সম্মেলনটি আফগানিস্তান বিষয়ে একটি ঐকমত্য তৈরি করতে সক্ষম হবে। আজ রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের ১৭তম সাধারণ অধিবেশনের আয়োজন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিলে তা আফগানিস্তানে আঞ্চলিক, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনতে পারে। আল্লাহ না করুন, যেন আমরা অবহেলা দেখাই বা সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিই, তাহলে আফগানিস্তান একটি নতুন সঙ্কটের মুখোমুখি হতে পারে’।
আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য দৃঢ় এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল যোগ করে কুরেশি বলেছেন, ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বক্তব্য আফগান সঙ্কটকে লাইমলাইটে আনার জন্য অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মন্ত্রীর মতে, গত এক মাসে অন্যান্য উন্নয়নের মধ্যে এই ধাঁধাটি প্রমাণ করে যে, বিশ্ব আফগানিস্তানে বিরাজমান মানবিক সঙ্কটের বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থানের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে।

কুরেশি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই পাকিস্তান বিশ্বকে মানবিক সঙ্কট সম্পর্কে অবহিত করেছে এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিষ্ক্রিয় থাকলে পরিস্থিতি অর্থনৈতিক পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে’।
তিনি আরো বলেন, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পতন শুধুমাত্র নিকটবর্তী প্রতিবেশী বা অঞ্চলকেই প্রভাবিত করবে না বরং শরণার্থীদের দেশত্যাগ এবং সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধির আকারে সমগ্র বিশ্বকেও প্রভাবিত করবে। মন্ত্রী বলেন, এই মুট আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্য ঘাটতি, আফগান শিশুদের দুর্দশা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির আর্থিক সমস্যার প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

‘আজ বিশ্ব এ বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করা প্রায় ১১ ন্যাটো কমান্ডারও এর দিকে ইঙ্গিত করছেন। রাষ্ট্রদূতরা, যারা কাবুলে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং স্থল বাস্তবতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত তারা বাইডেন প্রশাসনকে এর নীতি পর্যালোচনা করার জন্য তাদের ওপেডে লিখেছেন’, তিনি বলেন।
কোরেশি বলেন যে, পাকিস্তান বিশ্বকে কোনো উদাসীনতা না দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক কণ্ঠ এতে যোগ দিচ্ছে। ‘প্রায় ৩৯ মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিøঙ্কেনকে একটি চিঠি লিখেছেন, বলেছেন যে, [আফগানিস্তানে] মানবিক সঙ্কট এড়ানো আমাদের দায়িত্ব এবং নৈতিক দায়িত্ব। নতুন চিন্তার উদ্ভব ঘটছে এবং এটাই এ অসাধারণ সম্মেলনের উদ্দেশ্য’, তিনি বলেন।

কুরেশির মতে, অন্তত ৪৩৭ জন প্রতিনিধি এ বিতর্কের অংশ হতে নিজেদের নিবন্ধন করেন এবং বিপুল সংখ্যক বিদেশী এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদে আসতে শুরু করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অসাধারণ আলোচনার এক দিন আগে গতকাল শনিবার ওআইসি দেশগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করার কথা। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সফররত প্রতিনিধিরা ওআইসি বৈঠকের ফাঁকে তার এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গেও দেখা করবেন। এর আগে, এফএম কোরেশি ওআইসি মুটের জন্য আয়োজন পর্যালোচনা করেন। মন্ত্রী সংসদ ভবনের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এদিকে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ঐতিহাসিক এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে রেডিও পাকিস্তান। মালয়েশিয়া ও বসনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাজধানীতে পৌঁছেছেন। তাদের স্বাগত জানান প্রতিরক্ষা উৎপাদন মন্ত্রী জুবাইদা জালাল।
বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ ওআইসির অসাধারণ অধিবেশনকে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী’ বলে অভিহিত করেছেন। বসনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. বিসেরা তুর্কোভিচ আস্থা প্রকাশ করেছেন যে, ওআইসি মুট যৌথভাবে আফগান জনগণের জন্য সর্বোত্তম সমাধান নিয়ে আসবে।

ওআইসি বৈঠকে যোগ দিতে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিও ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আলী মুহাম্মদ খান। মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় মুত্তাকি বলেন, একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তালেবান নেতা আশ্বস্ত করেছেন যে, আফগান ভ‚মি অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে দেয়া হবে না।

কাজাখস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী নুরিশেভ শাখরাত এবং কিরগিজস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইবেক আরতিকবায়েভও ইসলামাবাদ পৌঁছেছেন। ওমানের পররাষ্ট্র সচিব আল-শেখ খলিফা বিন আলী আল হারথিও এসেছেন। এছাড়া ওআইসি মহাসচিব, সউদী রাষ্ট্রদূতসহ বহু প্রতিনিধি একদিন আগে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন।

পাকিস্তান আজ ইসলামাবাদে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আয়োজন করতে প্রস্তুত। ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে সউদী আরবের উদ্যোগে অধিবেশনটি আহ্বান করা হচ্ছে। পাকিস্তান এ আহ্বানকে স্বাগত জানায় এবং অধিবেশন আয়োজনের প্রস্তাব দেয়।
ওআইসি সদস্য দেশ গুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পর্যবেক্ষক ছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং ইইউসহ কয়েকটি অ-সদস্য রাষ্ট্র থেকে বিশেষ আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও থাকবেন।

আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক ডাকা হচ্ছে। অধিবেশনটি আফগান জনগণের মানবিক চাহিদা মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্য ব্যবহারিক এবং দৃঢ় পদক্ষেপ বিবেচনা করার একটি সুযোগ প্রদান করবে। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ