Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্রিসমাস উদযাপন বাতিল ভারতের গির্জাগুলোর

আরএসএসের হুমকি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের অনেক গির্জা উগ্রবাদীদের হুমকির পরে তাদের বড়দিনের উদযাপন বাতিল করেছে, কারণ ‘গেরুয়া গুন্ডা’ তাদের হিন্দুত্ব মতাদর্শ অনুসরণ করার জন্য সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে চলেছে। ভারত তাদের অধিকার রক্ষার জন্য তথাকথিত রেজোলিউশনের মাধ্যমে গতকাল সংখ্যালঘু অধিকার দিবস পালন করেছে। বাস্তবতা হল যে, দেশের অনেক অংশে খ্রিস্টানরা এমনকি তাদের রোববারের প্রার্থনাও করতে অক্ষম। গোকাকের একটি স্বাধীন চার্চের প্রধান যাজক ইয়েল্লাপ্পা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান কনসার্নকে (আইসিসি) বলেছেন, ‘আমরা একটি সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে আছি।

কর্ণাটক রাজ্যের বেলাগাভি জেলার বাসিন্দা যাজক ইয়েল্লাপ্পা বলেন, হিন্দু মৌলবাদীদের কাছ থেকে একাধিক হুমকি পাওয়ার পর তার বাড়িওয়ালা তার বাড়ির চার্চ বন্ধ করতে বাধ্য হন। মৌলবাদীরা বাড়িওয়ালার ওপর চাপ সৃষ্টি করে’।
যাজক ইয়েল্লাপ্পা বলেন, ‘আমি গত নয় বছর ধরে যে কাজটি তৈরি করছি তা ছেড়ে দিয়েছি। গত নয় বছরে তিনি বহুবার আক্রান্ত হয়েছেন এবং তিনবার গ্রেফতার হন। স্থানীয় গির্জার নেতা বলেন, ‘বেশ কিছু বাড়ির চার্চ বড়দিনের কোনো অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’। ‘জেলার প্রায় ৩০০ চার্চের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভয় এবং আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গেছে। এটি ক্রিসমাস পর্যন্ত আরো খারাপ হতে পারে। আমাদের প্রার্থনা দরকার’।

স্থানীয় মৌলবাদীরা ধর্মান্তরের প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করছে। এ র‌্যালি কেবল তাদেরই উৎসাহিত করবে যারা পাদ্রী আন্দানির গির্জা স¤প্রদায়কে ভয় দেখায়। এ বছরের প্রথম নয় মাসে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ৩০০টিরও বেশি আক্রমণের মাধ্যমে মৌলবাদীরা নির্বিচারে ভারতীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে, যা দেশটিকে স¤প্রদায়ের বসবাসের জন্য সবচেয়ে খারাপের মধ্যে একটি করে তুলেছে।

মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান বা দলিতই হোক না কেন, হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা সমস্ত অ-হিন্দু স¤প্রদায়কে শুধুমাত্র নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমেই নয়, আরএসএস গুন্ডাদের মাধ্যমে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেও নির্মূল করার জন্য প্রস্তুত। এ বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় যুদ্ধাপরাধের ওপর একটি ১৩২ পৃষ্ঠার ডসিয়ার জারি করেছিল যাতে ৩২টি মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার রিপোর্ট এবং পাকিস্তানের ১৪টি প্রতিবেদন রয়েছে।

নথি অনুসারে, ১৯৮৯ সাল থেকে বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকান্ডের ৯৬ হাজার, নির্বিচারে গ্রেফতার এবং নির্যাতনের প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার মামলা, ২৫ হাজার পেলেট বন্দুকের আঘাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। তাছাড়া ১১ হাজার ২৫০ জন নারী ধর্ষিত হয়েছে, প্রায় ২৩ হাজার বিধবা এবং ১ লাখ ৮ হাজার শিশু এতিম হয়েছে। নথিতে ৮ হাজার ৬৫২টি অচিহ্নিত গণকবরের বিবরণও দেয়া হয়েছে যা অধিকৃত কাশ্মীরের ৮৯টি গ্রামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রিলিজিয়াস লিবার্টি কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে এ বছরের প্রথম নয় মাসে খ্রিস্টানদের ওপর ৩শ’টিরও বেশি হামলা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৩২টি কর্ণাটকে।
চারটি উত্তর ভারতীয় রাজ্য তাদের মধ্যে ১৬৯টির মতো নিবন্ধিত: বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশে ৬৬টি, কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়ে ৪৭টি, উপজাতি অধ্যুষিত ঝাড়খন্ডে ৩০টি এবং বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ৩০টি।
খ্রিস্টানদেরকে হিন্দুদের খ্রিস্টানে রূপান্তরিত করার জন্য দায়ী করা হয় এবং এটি ভারতের চরিত্রের পরিবর্তন বলেও মনে করা হয়। ছত্তিশগড়সহ অন্তত নয়টি ভারতীয় রাজ্য ধর্মান্তর বিরোধী আইনের পরিকল্পনা করেছে, যেটিকে ভারতে খ্রিস্টান-বিরোধী ঘৃণার জন্য একটি ‘নতুন পরীক্ষাগার’ বলা হয়। ১ ডিসেম্বর হোসাডুগা তহসিলদার ওয়াই থিপ্পেস্বামী একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন, বলেছেন যে, চিত্রদুর্গ জেলায় অবস্থিত শহরে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো উদাহরণ নেই। এ রিপোর্টে অনেক বিজেপি নেতা ধর্মান্তরবিরোধী আইনকে সমর্থন করেছেন। প্রতিবেদন দাখিলের কয়েকদিনের মধ্যেই থিপ্পেস্বামীকে তার সরকারি পদ থেকে বদলি করা হয়।
২০১৪ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে খ্রিস্টান এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন সারা দেশে বেড়েই চলেছে এবং আজ এটি খ্রিস্টান হওয়ার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশগুলোর মধ্যে একটি।

‘ওপেন ডোর’ এর ওয়ার্ল্ড ওয়াচ লিস্ট বলে: ‘ভারতে কিছু খ্রিস্টানের জন্য বাইবেল অ্যাক্সেস করা কঠিন হতে পারে। কিছু খ্রিস্টান পড়তে পারে না এবং অন্যরা এমন জায়গায় বাস করে যেখানে প্রকাশ্যে বাইবেল পড়া আক্রমণ বা ভারী নিপীড়নের কারণ হতে পারে’। ২০১৯ সালের পর এটি তৃতীয় বছর যে ভারত ওয়ার্ল্ড ওয়াচ-এর তালিকার শীর্ষ ১০-এ স্থান পেয়েছে।

ভারতের শিখবিরোধী নীতি এবং ধর্মীয় পক্ষপাত স¤প্রদায়কে একটি পৃথক স্বদেশ ‘খালিস্তান’ চাইতে বাধ্য করেছে। স¤প্রতি যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত খালিস্তান গণভোট শিখদের প্রতি বৈষম্যের অবসানের জন্য ভারতীয় সংস্থার কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। ভারত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি ঘোষণার একটি পক্ষ, কিন্তু দেশটি পৃথক হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের শিখ সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানো এবং সন্ত্রাস করার অনুমতি দিয়ে চলেছে। তাছাড়া হিন্দু দলিতদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আন্তঃবিবাহে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং প্রায়ই নিম্ন-গ্রেডের চাকরি খোঁজার জন্য চাপ দেয়া হয়।

সামাজিক বর্জনের একটি বলিষ্ঠ উদাহরণ ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর যখন এক বৃহৎ আকারের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দলিতরা। সেসময় সুনামিতে ১০ হাজার জনেরও বেশি নিহত এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার জন বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। মোদির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদে ভারতের হিংসাত্মক রাজনীতির অংশ হিসেবে গো-রক্ষকগণ প্রসিদ্ধি লাভ করে। ২০১৪ সাল থেকে তার প্রথম এবং এখন দ্বিতীয় মেয়াদের সাত বছরে, গরুর মালিকানা এবং খাওয়া নিয়ে সহিংসতা এমন একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এটি আর কমই দেখা গেছে।

ভারতীয় রাষ্ট্র মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘনকারী হয়ে উঠেছে যা ইউডিএইচআর-এ নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে যেখানে মানবাধিকার এবং ‘সমতা’ একটি দূরবর্তী ধারণা হয়ে উঠেছে। প্রায়শই মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করা পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের স্বার্থের কারণে ভারতকে তার খারাপ মানবাধিকার রেকর্ডের জন্য জবাবদিহি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিসমাস উদযাপন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ