নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইংল্যান্ড ঃ ২৯৩ ও ২৪০
বাংলাদেশ ঃ ২৪৮ ও ২৬৩
ফল ঃ বাংলাদেশ ২২ রানে পরাজিত
শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : বাংলাদেশের লক্ষ্যটা যখন ৩৩, তখন ইংল্যান্ডের দরকার ২ উইকেট। দিনের শুরুটা প্রতিদিনই বিপর্যয়ে ফেলেছে ব্যাটসম্যানদের। তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের শেষ ৫টি উইকেট মাত্র ২৭ রানে উড়ে যাওয়ার অতীত তাই খুব একটা আশাবাদী করেনি। সমীকরণ মেলানোর পরীক্ষায় সাব্বির, তাইজুল, শফিউলদের দিকে ১৬ কোটি মানুষের চোখ ছিল নিবিষ্ট। চতুর্থ ইনিংসে ২১৫’র বেশি চেজ করে জয়ের অতীত নেই যখন, তখন ২৮৬ চেজ করবে কিভাবে? তবে ৪র্থ দিন শেষে ইংল্যান্ডের দিকে হেলেপড়া ম্যাচে বাংলাদেশকে ফিরতে হলে অতিদানবীয় কিছু করা ছাড়া উপায় ছিল না। ২ বছর আগে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ১০১ রান চেজ করে ৮ম জুটিতে তাইজুলের ৩২ মিনিটের লড়াইয়ের অতীত থেকে প্রেরণা পাবে বাংলাদেশ, এমন স্বপ্নে বুঁদ ছিল বাংলাদেশ সমর্থকরা। তবে ২টি ভাল ডেলিভারীর জন্য রাতটা নির্ঘুমই কাটানো ইংল্যান্ড পেস বোলার বেন স্টোকস রিভার্স সুইংয়ে বাংলাদেশের হৃদয়ে রক্ষক্ষরণ করেছেন। ৫ম দিনে মাত্র ২২ মিনিটেই শেষ বাংলাদেশ। এই প্রথম ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট নিয়েও হেরে গেছে ২২ রানে। এমন এক ম্যাচে দু’দলের ব্যবধান নির্ণিত করেছেন স্টোকস।
স্পিনারদের পুরস্কৃত করতে তৈরি করা হয়েছে যে উইকেট, সেই উইকেটে বাংলাদেশের তিন স্পিনার সাকিব, মিরাজ, তাইজুলের ১৮ উইকেটের বিপরীতে ইংল্যান্ড পেস বোলার বেন স্টোকসের শিকার সংখ্যা ৬ উইকেট! স্পিন ফ্রেন্ডলী উইকেটে পেস বোলারদেরও যে করণীয় কিছু আছে, তার দৃষ্টান্ত এর চেয়ে ভাল কি আর হতে পারে? পুরোনো বলে রিভার্স সুইং যে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কতোটা ভোগাতে পারে, তার দু’টি দৃষ্টান্ত খুঁজতে খুব পেছনে যেতে হবে না। চার বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ২৪৫’র টার্গেটে জয়ের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হৃদয়টা ভেঙে দিয়েছেন উইন্ডিজ পেস বোলার টিনো বেস্ট ভয়ংকর এক স্পেলে (৫-১-১২-৩)। চতুর্থ ইনিংস চেজ করে বেস্টে বন্দি বাংলাদেশের ৭৭ রানে সেই হারটাই ছিল এতোদিন টেস্টে সবচেয়ে কম রানে হার। সেই আক্ষেপটা এবার আরো ভারী হয়েছে। এই প্রথম ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট নিয়ে, দেশের মাটিতে ৪০ উইকেটের ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেছে ২২ রানে। চতুর্থ ইনিংস তাড়া করে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে হার। জানেন, রানের ব্যবধানে এটা আবার ৯ম সর্বনিম্ন জয় ইংল্যান্ডের। ৪ বছর আগের টিনো বেস্ট হয়েই যেনো হাজির বেন স্টোকস জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের লিডের সম্ভাবনায় ধাক্কাটা দিয়েছেন এই ইংলিশ পেসার। লিড থেকে ৭২ রান দূরে দাঁড়িয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করতে নেমে মাত্র ৬৬ মিনিটে তাসের ঘরের মতো উড়ে গেছেÑ ২৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ শেষ ৫ উইকেট! তৃতীয় দিনে ইংলিশ এই পেসারের এই এক স্পেলেই (৬-২-৯-৩) ৪৫ রানে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ! পঞ্চম দিনে জয় থেকে ৩৩ রান দূরে থেকে স্বপ্নটা যেখানে ছুঁয়েছে আকাশ, সেখানেও বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে খান খান করে দিয়েছেন এই ইংলিশ পেস বোলার। তার ৯ বলের একটি স্পেলেই (১.৩-০-৫-২) ২২ মিনিটে শেষ বাংলাদেশ।
ম্যাচে ৫ উইকেটের পাশে ১০০Ñউপমহাদেশে এমন কৃতিত্ব ইতোপূর্বে ইংল্যান্ড অল রাউন্ডারদের মধ্যে ছিল ১৯৮০ সালে ওয়াংখেড়েতে ভারতের বিপক্ষে ইয়ান বোথাম, ১৯৬১-৬২ মওসুমে করাচী টেস্টে টেড ডেক্সার এবং ১৯৭২-৭৩-এ লাহোর টেস্টে টনি গ্রেগের। চট্টগ্রাম টেস্টে দুই ইনিংসে ব্যাটিংয়ে ১৮ ও ৮৫ রান এবং বোলিংয়ে ৪/২৬ ও ২/২০-এ ওই তিন গ্রেটের পাশে স্টোকস। চট্টগ্রাম টেস্টে দু’দলের মধ্যে ব্যবধান স্টোকসের অল রাউন্ড পারফরমেন্স। এক মওসুমে তিন তিনবার ম্যান অব দ্য ম্যাচে নতুন ইতিহাসেও লিখিয়েছেন নাম স্টোকস। পুরোনো বলে স্টোকস, ব্রডের রিভার্স সুইং দেখে আমাদের পেস বোলারদের শেখার অনেক কিছুই আছে বলে মনে করছেন মুশফিকÑ‘স্টোকস, ব্রড গত ৮-১০ বছর ধরে এই কাজটা করে আসছে। তাদের জন্য কতটা সহজ আর আমাদের জন্য কতটা কঠিন। পুরনো বলে যেভাব রিভার্স করা যায়, এটা আমার মনে হয় তারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। আশা করি এখান থেকে তারা এই শিক্ষাটা নেবে।’
শুধু বোলিংয়েই নয়, দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোরশিটে ৬২/৫ থেকে ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে ২৮৬’র টার্গেট দিতে পেরেছে, সেখানেও বেন স্টোকসের ১৮৮ মিনিটের ইনিংসে ৮৫ রান, ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১২৭ রানের পার্টনারশিপ দু’দলের মধ্যে গড়ে দিয়েছে ব্যবধান। তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক নিজেওÑ‘আমার মনে হয় ওই রানই বড় ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। বলতে পারেন দ্বিতীয় ইনিংস বেন স্টোকস-জনি বেয়ারস্টোর জুটির কথা। লিড নিতে না পারলেও আমরা যদি ২৯০ বা ২৮০ রানও করতাম, তাহলে ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারতো। ওরা দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ করেছে, আমরা সেখানে ২৬৩ রান করেছি। সেদিক থেকে বলব স্টোকসের ওই রানটাই এই টেস্টে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মেজাজটা শুরুতেই বিগড়ে দিয়েছেন বেন স্টোকস। ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে তামীমের এগিয়ে দেয়া হাতে হাত না মিলিয়ে উল্টো অক্রিকেটীয় আচরণে তামীমের সঙ্গে করেছেন দুর্ব্যবহার। মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের পর্যুদস্ত করতে সেই যে শুরুটা করেছেন স্টোকস, সেই স্টোকসেই চট্টগ্রাম টেস্টে ভেঙেছে বাংলাদেশের হৃদয়।
পুরোনো বলে এতোটা ভয়ংকর বল করলেন কিভাবে? কিভাবে ৮২তম ওভারেও চকচকে থাকলো বল? এতোটা রিভার্স সুইং পেলেন কিভাবে? এটাই প্রশ্ন। তাহলে কি বল টেম্পারিংয়ের মতো কিছু একটা কি করেছেন স্টোকস? এমন অভিযোগ নাকি উঠেছে খেলা চলাকালেই!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।