নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রায় দুই মাস আগের ঘটনা। গত নভেম্বরে স্প্যানিশ লা লিগায় বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে আলাভেসের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। মাঠে হঠাৎ বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ার পর শোনা গিয়েছিল, তার হৃদযন্ত্রে অনিয়মিত স্পন্দনের পুরোনো সমস্যাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরপর থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন আগুয়েরো। কেউ কি ঘুণাক্ষরেও তখন ভেবেছিলেন, সেই ম্যাচটিই হয়ে থাকবে আর্জেন্টিনার এই ফুটবলারের পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ? তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার আর ফুটবলে ফিরতে না পারার গুঞ্জনের কথাও শোনা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনটা সত্যি হলো। বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যুতে এক সংবাদ সম্মেলনে কান্নাভেজা চোখে গতকাল অসহায় আগুয়েরো জানিয়ে দিলেন, আর পেশাদার ফুটবল খেলা হচ্ছে না তার। ৩৩ বছর বয়সেই বুটজোড়া তুলে রাখতে হচ্ছে তাকে।
নতুন স্বপ্ন নিয়ে গত গ্রীষ্মের দলবদলে ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে ফ্রি ট্রান্সফারে বার্সেলোনা যোগ দেন আগুয়েরো। নতুন ঠিকানায় শুরুতেই ধাক্কা খান তিনি, ছিটকে পড়েন চোট পেয়ে। অবশ্য ওই চোট কাটিয়ে দ্রুতই বার্সেলোনার শুরুর একাদশে জায়গা করে নেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। দলটির হয়ে লা লিগায় চারটি এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একটি ম্যাচ খেলেন তিনি। গোলের খাতাও খোলেন তিনি; একমাত্র গোলটি তিনি করেন ক্লাসিকোয় বদলি হিসেবে নেমে।
বিপত্তিটা বাঁধে গত ৩০ অক্টোবর লা লিগায় আলাভেসের বিপক্ষে বার্সেলোনার ১-১ ড্র ম্যাচে; হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় মাঠ ছেড়ে যান আগুয়েরো। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ে, হৃদযন্ত্রের স্পন্দন জটিলতা সংক্রান্ত অ্যারিথমিয়া রোগে ভুগছেন তিনি।
ওই সময়ই তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠে। স্পেনের মার্কা ও আর্জেন্টিনার টিওয়াইসি স্পোর্টসসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তখন বলা হয়, অসুস্থতার কারণে আগেভাগে বুটজোড়া তুলে রাখতে হতে পারে আগুয়েরোকে। তবে বার্সেলোনার পক্ষ থেকে তিন মাস পর আগুয়েরোর মাঠে ফেরার সম্ভাবনার কথা বলা হয়। ক্লাবটির কোচ হিসেবে যোগ দিয়ে গত মাসে ওই সব খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন শাভি এরনান্দেস। বলেন, আগুয়েরোর মাঠে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তবে সব আশাই নিরাশায় রূপ নিল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ক্যাম্প নউয়ে হাজির হন আগুয়েরো। শুরুতে মনের কষ্ট চেপে রাখতে পারেননি তিনি, কেঁদে ফেলেন। একটু পরই নিজেকে সামলে নেন। শোনান, রোগ ধরার পড়ার পর থেকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ের কথা, ‘শারীরিকভাবে ভালো থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎকরা আমাকে বলেছেন যে খেলা বন্ধ করাই সবচেয়ে ভালো হবে। আর তাই আমি বার্সা ছেড়ে যাচ্ছি এবং ফুটবল থেকে বিদায় নিচ্ছি। এই কনফারেন্স ডাকা হয়েছে এটা জানানোর জন্য যে আমি ফুটবল খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব কঠিন মুহূর্ত।’
ক্লাব পর্যায়ে বার্সার পাশাপাশি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির প্রতিনিধিত্ব করেন আগুয়েরো। আর জাতীয় দল আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেড় দশক মাঠে আলো ছড়ান তিনি। সাফল্যম-িত ও বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ার নিয়ে গর্ব হয় তার, ‘আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে গর্বিত। পাঁচ বছর বয়সে প্রথমবার বলে পা ছোঁয়ানোর পর থেকে আমি সবসময় একজন পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।’ পুরনো দুই ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি ‘কুন’ নামে খ্যাত এই ফরোয়ার্ড, ‘আমি আতলেতিকো মাদ্রিদকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমাকে খেলার সুযোগ দিয়েছিল, যখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। আর ম্যানচেস্টার সিটিকে। সবাই জানে সিটির ব্যাপারে আমি কী অনুভব করি এবং তারা কতটা ভালোভাবে আমার দেখাশোনা করেছে।’
চলতি মৌসুমের শুরুতে বিনা ট্রান্সফার ফিতে ইংলিশ ক্লাব সিটি ছেড়ে বার্সেলোনায় নাম লেখান আগুয়েরো। চোট সঙ্গে করেই স্পেনে এসেছিলেন তিনি। মাংসপেশির ওই চোটে প্রথম দুই মাস খেলা হয়নি তার। সেই চোট থেকে সেরে মাঠে ফিরলেও হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়ায় থমকে গেল তার পেশাদার ক্যারিয়ারই। কাতালানদের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫ ম্যাচে ১ গোল করেন তিনি। সেই গোল এসেছিল বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে।
নিজ দেশের ক্লাব ইন্দিপেন্দিয়েন্তের হয়ে নজর কাড়ার পর ২০০৬ সালে অ্যাটলেটিকোতে পাড়ি জমান আগুয়েরো। লা লিগায় পাঁচ মৌসুমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যান সিটিতে যোগ দেন তিনি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে এক দশক কাটিয়ে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও দলীয় সাফল্য উপভোগ করেন তিনি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৬০ গোল করে সিটিজেনদের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড নিজের করে নেন আগুয়েরো। প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোল করা বিদেশি খেলোয়াড়ের কীর্তিও তার দখলে। ১৮৪ গোল নিয়ে ইংল্যান্ডের শীর্ষ ফুটবল আসরে এক ক্লাবের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়েন তিনি।
আর্জেন্টিনার হয়ে ১০১ ম্যাচে আগুয়েরো করেন ৪১ গোল। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে রানার্সআপ হওয়া স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে তার শিরোপা জয়ের অপেক্ষা শেষ হয় গত জুলাইতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে কোপা আমেরিকার মাটিতে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।
বার্সেলোনার ভক্ত-সমর্থক ছাড়াও আগুয়েরোর বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তার সাবেক ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা। তাদের মধ্যে ছিলেন ম্যান সিটির বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলাও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।