পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সবই ঠিক আছে; ঠিক নেই কেবল ডা. মুরাদ হাসান। সংবিধান থেকে এসব পরিবর্তনের হুংকার, নারীর প্রতি হিংস্রতা এবং একজন নায়িকাকে ধর্ষণের ঘোষণা দেয়ায় তিনি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ মানুষের ঘৃণা ও নিন্দা থেকে রক্ষা পেতে দেশ ছেড়ে কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কানাডা তাকে ঢুকতে দেয়নি। অতপর সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হন। মাথানত করে মুখ লুকিয়ে বিদেশ যান; কোথাও জায়গা না পেয়ে আবার গতকাল মাথানত করে দেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছেন। মাঝখানে তিন দিন তিনি বিভিন্ন দেশের প্রবেশের চেষ্টা করেন। বিমানবন্দরে চেয়ারে বসে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তবে এর মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য এবং নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে মামলা দায়েরের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এর আগেই তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় জিডি করেছেন।
সবার দৃষ্টি গতকাল ছিল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে। বিতর্কিত মুরাদ বিদেশে কোথাও জায়গা না পেয়ে দেশে ফিরে আসছেন; এ খবর শোনা ও দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলেন কোটি মানুষ। মুরাদের দেশে ফেরার দৃশ্য দেখার জন্য কেউ বিমানবন্দরে হাজির হন। মিডিয়াকর্মীরা যান খবর সংগ্রহ করতে। আর কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ যান তার দেশে প্রবেশ ঠেকাতে মানববন্ধন করতে। বিতর্কিত ডা. মুরাদ হাসানের ধারণা ছিল, কানাডায় তিনি ‘ভিভিআইপি’ মর্যাদা পাবেন। কিন্তু টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে বাইরে বের হতে দেয়া হয়নি। কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ থেকে তাকে দুবাইগামী বিমানে ফেরত পাঠানো হয়। কানাডার পর দুবাইয়ে এসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢুকতে দেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হন। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরো কয়েকটি দেশে ঢোকার তদরিব করেন। সবখানে ব্যর্থ হন। ইসলামবিদ্বেষী, ধর্ষণের হুমকি দাতা এবং নারীর প্রতি অশালীন কথাবার্তায় অভ্যস্ত মুরাদকে কোনো দেশ জায়গা দিতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। গতকাল রোববার অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। মাথানিচু করে মুখ ঢেকে তিনি বিশেষ প্রহরায় বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
সারা বিশ্বে বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ‘ফ্লাইটস্টারস’-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দুবাই বিমানবন্দর থেকে রোববার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেয় মুরাদ। দুবাই থেকে ৪ ঘণ্টা ২১ মিনিটের যাত্রা শেষে এটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। অবতরণের নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিট হলেও ৫টা ৭ মিনিটের দিকে ঢাকায় নেমেছে।
অশালীন বক্তব্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানোর পর গত ৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১টা ২০ মিনিটে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মুরাদ হাসান। অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইকে ৮৫৮৫-এ তিনি প্রথমে দুবাই যান; এরপর সেখান থেকে আরেকটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন। টরেন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছিলেও তাকে ঢুকতে দেয়নি কানাডীয় কর্তৃপক্ষ।
মুরাদ হাসান কানাডা আসছেন, খবর পেয়ে তার বিরুদ্ধে সে দেশের বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কাছে ইমেইলে প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি অভিযোগ জানায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে কানাডায় আসছেন। তিনি বাংলাদেশের কয়েকজন নারীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর, বিদ্বেষপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করেছেন এবং তিনি একজন অভিনেত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন। এতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে পদত্যাগ করতে বলেছেন এবং পদত্যাগের পর তিনি কানাডায় আসছেন। আমরা বিশ্বাস করি, কানাডা সম্ভাব্য ধর্ষক এবং অপরাধীদের জন্য জায়গা হওয়া উচিত নয়। তিনি সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করছেন, তবে তিনি একবার প্রবেশের পর কানাডা ছেড়ে নাও যেতে পারেন। টরেন্টোতে থাকা বাংলাদেশিরা জানিয়েছিল, সিবিএসএতে একই কারণ উল্লেখ করে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে অন্তত ১৭০টি অভিযোগ করা হয়েছে।
উত্তর আমেরিকার ‘নতুন দেশ’ নামের একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি দেশটির বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ)। অভিবাসী বাংলাদেশের আপত্তির মুখেই কানাডার সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণেই মুরাদকে কানাডার ইমিগ্রেশন ফিরিয়ে দেয়।
কানাডা থেকে বিতারিত হয়ে ডা. মুরাদ হাসান দুবাই বিমানবন্দর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিসা না থাকায় দুবাইয়ে ইমিগ্রেশনও আটকে দেয়। দুবাইয়ে প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার পর শুরুতে অ্যামিরেটসের ইকে ০৫৮২ ফ্লাইটে ঢাকা ফেরার প্রস্তুতি নেন মুরাদ হাসান। এর টিকিটও তিনি কেনেন। ওই ফ্লাইটে এলে গতকাল সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু তিনি ওই ফ্লাইটে আসেনি। ফ্লাইট পরিবর্তন করে ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন মুরাদ।
ডা. মুরাদ এখন টক অব দ্য কান্ট্রি থেকে টক অব দ্য বিশ্ব হয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বøগ, টুইটার, ইউটিউব খুললেই মুরাদ হাসানকে নিয়ে বিতর্ক। নানাভাবে তাকে নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। তার বিভিন্ন ডিডিও এবং তাকে নিয়ে অন্যদের তৈরি নানা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে নেট দুনিয়ায়।
কানাডা, দুবাই জায়গা দেয়নি, ফলে বাধ্য হয়েই মুরাদ হাসান দেশে ফিরছেন এ খবর গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে যায়। অ্যামিরেটসের ইকে ০৫৮২ ফ্লাইটে রোববার সকাল ৮টার ঢাকায় নামছেন; এমন খবরে গণমাধ্যমকর্মীরা আগেই হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবস্থান নেন। বিক্ষুব্ধ এবং উৎসুক জনতাও বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হন। পরে অ্যামিরেটসের অফিস থেকে জানানো হয় টিকিট কাটলেও যাত্রীদের তালিকায় মুরাদ হাসানের নাম নেই। উৎসুক জনতা ও গণমাধ্যমকর্মীরা সাময়িক হতাশ হলেও পরবর্তীতে খবর আসে তিনি বিকেলে ফিরছেন। মুরাদ ফিরছেন সে কারণে মিডিয়াকর্মী ও জনতার ভিড় ঠেকাতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিমানবন্দরে বিক্ষোভ : এদিকে মুরাদ হাসান যাতে দেশে ফিরতে না পারেন, সেজন্য বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করেন কিছু মানুষ। বিমানবন্দর এলাকার মূল ফটকের বাইরের সড়কে প্রায় অর্ধশত বিক্ষুব্ধ মানুষ নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে মুরাদকে রুখে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিএম জহিরুল নামে একজন বলেন, মুরাদ বেশ কিছুদিন বিকৃত কথাবার্তা বলছিল। ইসলাম ও নারীবিদ্বেষী মুরাদ প্রতিনিয়ত দাবি করত, তার এসব বেফাঁস কথাগুলোর বিষয়ে নাকি প্রধানমন্ত্রীও অবগত আছেন। তার এ মন্তব্য নারী সমাজকে অপমান করেছে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে বিব্রত করেছে। আমরা চাই তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হোক। তাকে দেশের ভেতরে ঢুকতে দেব না। আবদুল্লাহ আল নোমান নামে একজন বিক্ষোভকারী বলেন, মুরাদ বাংলাদেশের নারীদের বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নারী নেতৃত্ব নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন। আমরা তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছি। মুরাদকে যেহেতু কানাডা ও দুবাই থাকতে দেয়নি, আমরা চাই এমন লোক যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। মুরাদকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মাত্র গ্রেফতারের দাবিতে আমরা এখানে মানববন্ধন করেছি।
৫ বিভাগে মামলার আবেদন : ইসলামবিদ্বেষী বিতর্কিত ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নেয়ার আবেদন করা হয়েছে ঢাকা, রাজধানী, চট্টগ্রাম ও খুলনায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ভাষায় নারী বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের অভিযোগে আদালতে মামলার এ আবেদন করা হয়। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী। ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছুটিতে থাকায় আজ সোমবার শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে। মামলার অপর আসামি হলেন ইউটিউব অনুষ্ঠানের উপস্থাপন মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ।
ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, মামলা ফাইলিং হয়েছে। তবে বিচারক ছুটিতে থাকায় সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলাটি করা হয়। আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ইসমত আরা জানান, রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিএনপির বগুড়া জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম মামলাটি করেন। মুরাদ হাসান ছাড়াও টকশো উপস্থাপক মহিউদ্দিন হেলালকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। ইসমত আরা বলেন, ‘আদালত অবশ্য মামলা দায়েরের বিষয়ে আদেশের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও উপস্থাপক মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদের বিরুদ্ধে খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করা হয়েছে। খুলনা সাইবার ট্রাইব্যুনালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম খুলনার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোল্লা গোলাম মওলা মামলার এ আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে ১৪ ডিসেম্বর আবেদনের শুনানির দিনধার্য করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আনিসুর রহমান খান।
মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসকে এম তোফায়েল হাসানের আদালত মামলার আবেদন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রাম ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার।
মামলার বাদী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩০, ৩১ ধারায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে আদেশের জন্য রেখেছেন।
এদিকে গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মুরাদ হাসানের বক্তব্যে রাষ্ট্রক্ষুব্ধ নয় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তারা কোনো মামলা করবে না। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তাদের মামলা করার অধিকার আছে। আপনি যদি সংক্ষুব্ধ হন, তবে আপনি মামলা করতে পারেন।
এ ছাড়াও সিলেটে ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছে। সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তানভীর আক্তার খান। মামলা অপর আসামি করা হয়েছে নাহিদ রেইনসকে। সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবুল কাশেমের আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। পরে আদালত ২০০ ধারায় মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আনভীর আক্তার খানের বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং আগামী বুধবার আদেশের দিন ধার্য করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা বারের সভাপতি এ টি এম ফয়েজ বলেন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য তানভীর আক্তার খান বাদী হয়ে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলা করেছেন। ৬০-৭০ জন আইনজীবীদের উপস্থিতিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত ২০০ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করে আগামী ১৫ ডিসেম্বর আদেশ দেবেন মর্মে মামলা গ্রহণ করেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী শাহবাগ থানায় মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে জিডি করেন।
সবই হারাচ্ছেন : ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষ তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার দাবি করেন। কয়েকশ’ চিকিৎসক তার বিএনডিসির সনদ বাতিলের দাবি জানান। তাদের বক্তব্য এমন চরিত্রহীন ব্যক্তি ডাক্তার সমাজের কলঙ্ক। সব পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দার মুখে মুরাদ হাসান ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যান। এরপর গত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। পরদিন মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগের পর মুরাদ হাসান সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন এবং তাতে তিনি লিখেছিলেন, যদি তার কোনো ভুল হয় তাহলে যেন ক্ষমা করা হয়। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে বাদ পড়ার পর একই দিন ৭ ডিসেম্বর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় পরদিন বুধবার তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে মুরাদ। দলীয় পদ হারানোর পর সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার আবেদন করা হয়েছে আদালতে।
বিমানবন্দর থেকে কোথায় গেলেন : ডা. মুরাদ হাসান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে একটি প্রাইভেটকারযোগে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যান। তবে তার বর্তমান ঠিকানা রাজধানীর ধানমন্ডির বাড়িতে যাননি। ধানমন্ডির নতুন ১৫ নম্বর রোডের বাড়িতেই সপরিবারে বসবাস করেন মুরাদ হাসান। বিমানবন্দর থেকে একটি সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে নিয়মমাফিক কাজ শেষ করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি প্রাইভেটকারে চড়ে বেরিয়ে যান।
মুরাদ হাসান বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটের সামনে এলেও সাংবাদিকদের দেখে ভেতরে চলে যান এবং বিমানবন্দরের ভেতর দিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যান। সেখানে বাইরে তার জন্য হোন্ডা সিআরভি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি প্রস্তুত ছিল। দেশে ফেরার সময় মুরাদ হাসানের পরনে ছিল নীল রঙের জিন্স প্যান্ট ও হুডি জ্যাকেট। মাথা নিচু করে ও মুখ ঢেকে গাড়িতে চড়েন তিনি।
ধানমন্ডির বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মো. সুমন আলী বলেন, স্যার বাংলাদেশে এসেছেন জানতে পেরেছি। তবে তিনি বাসায় এখনও আসেননি। বাসায় তার পরিবারের সদস্যরা আছেন। এই নিরাপত্তাকর্মী আরও জানান, গত সপ্তাহের সোমবার ধানমন্ডির বাসা থেকে তিনি বেরিয়ে যান। তারপর আর বাসায় ফেরেননি।
নারীবিদ্বেষী, অশালীন ও অবমাননাকর বক্তব্যের জেরে গত ৭ ডিসেম্বর মুরাদ হাসান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।