পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.মুরাদের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। তাই শুধু মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করা নয়, সেই সাথে জাতীয় সংসদ থেকেও বহিষ্কারপূর্বক তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার ডা. মুরাদের পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শাহবাগ থানায় ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন এক শিক্ষার্থী। শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুলিয়াস সিজার তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। ওসি বলেন, অভিযোগটি সাইবার ক্রাইম ও রাজনৈতিক হওয়ায় আমরা এটি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠিয়েছি। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সমালোচনার মুখে পড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল অডিও ক্লিপস ছড়িয়ে পড়ায় আরও বেকায়দায় পড়েন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নারী নের্তৃত্ব, বিএনপি, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। গত সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ ও গলায় জুতা পরিয়ে জুতা মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। গতকালও দফায় দফায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মানববন্ধনের মাধ্যমে মুরাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের সংগঠক জুলিয়াস সিজার তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য একমাত্র ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ অপরিহার্য। এছাড়া কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই অপরিহার্য নয়। প্রতিমন্ত্রী মুরাদের মতো একজন কুরুচিপূর্ণ ও বিকৃত চরিত্রের লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে এসব মন্তব্য করে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চূড়ান্ত স্খলনের উদাহরণ দেখালো মাত্র। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে, তার তুলনায় মুরাদ তো রাজনীতির নর্দমার একটা ‘নেড়ি কুত্তা’। ওকে শায়েস্তা করতে আমাদের ২ মিনিট লাগবে।
ঢাবি শিক্ষার্থী মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ বলেন, ডা. মুরাদের মতো বদ্ধ উন্মাদ সংসদের মতো পবিত্র জায়গায় থাকতে পারে না। তার কথাবার্তা, আচরণ ভাব-ভঙ্গিতে খুব সহজেই বোঝা যায় জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা তার নেই। তাকে অচিরেই সংসদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাই। লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সারোয়ার সাইদ বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যেই বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শুধু বহিষ্কার নয় আইনের আওতায় এনে ডা. মুরাদকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
শুধু পদত্যাগ নয়, গ্রেফতারও দেখতে চাই জানিয়ে রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীদের ব্যাপারে এমন জঘন্য কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য টাকলা মুরাদকে মেয়েদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ এরকম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, মন্ত্রী পরিষদ থেকেই বহিষ্কার করা যথেষ্ট নয় বরং তাকে সংসদ সদস্য থেকেও বহিষ্কার করতে হবে। সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নিয়ে দ্রæত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মুরাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। মানববন্ধনে ডা.মুরাদকে লাগামহীন পাগলা ঘোড়া উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মন্তব্য করার আগে নিজের কলিজা মেপে দেখার আহ্বান জানান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
তিনি বলেন, ডা.মুরাদ সম্প্রতি এমন ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে আসছেন যেন একটা লাগামহীন পাগলা ঘোড়া। প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ডা.মুরাদ হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কোনো মন্তব্য করার আগে একবার আপনার বুকের কলিজাটা মেপে দেখবেন। কাকে নিয়ে আপনি মন্তব্য করছেন!
মুরাদের বিচার চেয়ে বিন ইয়ামিন বলেন, মন্ত্রীসভা থেকেই তাকে বহিষ্কার করলে হবে না, তাকে সংসদ সদস্য থেকে ও বহিষ্কার করতে হবে। তাকে সংসদ সদস্য থেকে বহিষ্কার করা না হলে এদেশের ছাত্র সমাজ ঘরে বসে থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, যারা ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসে তারা এই দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ কীভাবে বুঝবে? ক্ষমতায় থাকতে থাকতে তারা একেকটা দানবে পরিণত হয়েছে। আজকে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন শুধু ছাত্রদের প্রাণ নিয়েই ক্ষান্ত হয়নাই। তারা কুয়েটে শিক্ষকের প্রাণ পর্যন্ত হরণ করেছে।
সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মুরাদ যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে এটা শুধু মুরাদের বক্তব্য নয়, এটা একটি পঁচে যাওয়া রাষ্ট্রের বক্তব্য। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মুরাদকে শুধু অপসারণ করলে হবে না, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
সংগঠনটির ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, ডা.মুরাদ শুধু নারীদের নিয়ে কথা বলেনি, তার এ বক্তব্যে সম্প‚র্ণ বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আজকে নারীদের সম্মান যখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে ঠিক এমন মূহুর্তে এসে তিনি সারাদেশের নারী সমাজকে অপমান করেছে। তাই আমরা মুরাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি যাতে আর কোনো মুরাদের জন্ম এই দেশে না হয়। কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছে বলে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, একটি স্বাধীন পতাকা পেয়েছি সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ডা.মুরাদের এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের কারণে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুরাদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মানববন্ধন শেষ করেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।