Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জয়ের স্বপ্ন দেখছেন হাতুরুসিংহে

প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে অধিনায়ক খালেদ মেহমুদ সুজনের কান্না’র ছবি বার বার দেখেছে বাংলাদেশ। বাগে পাকিস্তানের মাঠে পাকিস্তানকে হারানোর স্বপ্ন খান খান করা ইনজামামের মহাকাব্যিক ইনিংস, কিংবা ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টে পন্টিংয়ের ক্যাপ্টেনস নক ইনিংসে বাংলাদেশের কান্না, ২০০৮ সালে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভেট্টরীর কাছে হারÑ এই ছবিটা এখন আর দেখতে চায় না বাংলাদেশ। বরং ২০০৯ সালে গ্রেনাডায় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান চেজ করে ৪ উইকেটে জেতার অতীত থেকে টনিক নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ২৮৬ তাড়া করে জয়ের স্বপ্নই এখন দেখাচ্ছে মুশফিকুররা।
টেস্টে চতুর্থ ইনিংস মনস্ত¡াত্তি¡ক যুদ্ধে যে কতোটা পরীক্ষায় ফেলে দিতে পারে ব্যাটসম্যানদের। ২২২৪টি টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে সাড়ে তিনশ’ চেজ করে মাত্র ৮টি জয়ই তার আদর্শ দৃষ্টান্ত। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসের পরীক্ষায় জয়ের সংখ্যা মাত্র ১টি, চতুর্থ ইনিংসের মহা পরীক্ষায় তীব্র প্রতিরোধে ড্র’র অতীতও সেখানে মাত্র ১টি। চতুর্থ ইনিংসে ৪১৩ স্কোর আছে বাংলাদেশের, তবে ২০০৮-৯ মওশুমে ঢাকা টেস্টে (শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম) শ্রীলংকার ৫২১’র সেই টার্গেটে ১০৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ দল। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম (জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম) টেস্টে ভারতের ৪১৫ চেজ করতে নেমে চতুর্থ ইনিংসে ৩০১, সে বছর হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ৪০৪ চেজ করতে নেমে ২৮২ পর্যন্ত স্কোর টেনে নিতে পেরেও কোন সুখবর দিতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
সেখানে এই প্রথম ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট নিয়ে অসম্ভব সাধনের লড়াইয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে এখন জয় থেকে বাংলাদেশ ৩৩ রান দূরে দাঁড়িয়ে। হাতে উইকেট অবশিষ্ট মাত্র ২টি। আজ সকালে ইংল্যান্ডের দু’টি ভাল ডেলিভারী কিংবা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ২টি ভুলই কাঁদাতে পারে। তবে এমন কিছু’র শঙ্কা নয়, বরং বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হাতুরুসিংহে দেখছেন দারুণ কিছু’র সম্ভাবনাÑ ‘আমাদের হাতে এখনও ৯০ ওভার রয়েছে। তাই তাড়াহুড়া করার কিছুই নেই। যতটা সময় বেশি ব্যাট করা যায়, ততোই মঙ্গল। যদি আমরা ১০-১৫ ওভার ব্যাট করতে পারি, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। আমরা খুব বেশি দূরে নই। আগামীকাল (আজ) তারা (ইংল্যান্ড) পত্র-পত্রিকা ভালভাবে পড়বে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের প্রথম ১০-১৫টি বল দেখতে হবে ভালভাবে, কারণ তারা উইকেট দু’টি নিতেই আসবে।’
শেষ ২ পার্টনারশিপের করণীয় উপায়ও বলে দিয়েছেন হাতুরুসিংহেÑ ‘সাব্বিরের সঙ্গে কেউ একজন থাকবে, এই আশায় ছিলাম। তাইজুল এবং শফিউল দুইজনই ব্যাট করতে পারে। এই উইকেটে ব্যাটিং করা ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মুশির ক্ষেত্রে বল যেভাবে লাফিয়ে উঠল, এমনটা হলে করনীয় কিছুই নেই। তাই বলের মেধা অনুযায়ী খেলতে হবে। যদি কোনো বল ভিন্ন আচরণ করে সেটা ভুলে গিয়ে পরবর্তী বলে মনোযোগ দিতে হবে।’
১৫ মাস পর টেস্ট প্রত্যাবর্তনে নিজেও শঙ্কিত ছিলেন কোচ। বাংলাদেশ বোলারদের পক্ষে ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট নেয়ার সামর্থ নেই বলে মিডিয়াকে তার মতামত জানিয়ে দিয়ে রক্ষণাত্মক অবস্থানেই ছিলেন হাতুরুসিংহে। সেই কোচই এখন বোলারদের কারিশমা দেখে অভিভুতÑ ‘বোলাররা নিজেদের প্রমাণ করেছে। আর আমরা এমন উইকেট পেয়েছি যা, আমরা মনে করি আমাদের সামর্থ্যরে সঙ্গে মানানসই। কৌশলগতভাবে আমরা ভালো একটি ম্যাচ খেলেছি। আমরা এই ধরনের উইকেটের জন্য সঠিক কম্বিনেশন পেয়েছি। আমি সত্যিই খুশি যে, ওরা ২০ উইকেট নিতে পেরেছে। এটা ইতিবাচক।’
প্রতিপক্ষের নাম ইংল্যান্ড বলেই চট্টগ্রাম টেস্ট এতোটা জমিয়ে তুলবে বাংলাদেশ দল, অতোটা আশা নাকি করেননি হেড কোচÑ ‘ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে ম্যাচের চতুর্থ দিনেও আমরা ম্যাচে আছি। এতেই আমি খুশি। আমার মনে হয় না, চারদিন আগেও আমাদের এমন সম্ভাবনার কথা কেউ ভেবেছিল। তবে আমাদের ব্যাটিং সত্যিই বুদ্ধিদীপ্ত, কন্ডিশনের সঙ্গে মানানসই। অন্য সব উইকেটে যেভাবে ব্যাট করা যায়, এখানে তেমনটা করা যায় না। বল নরম হলে ব্যাটসম্যানরা একটু থিতু হয়। আগের তিন ইনিংসেই এই ধারা দেখেছি। পরে রিভার্স সুইং ভূমিকা রাখে। তারপরও আমাদের ব্যাটসম্যানরা এই উইকেটের সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে নিতে পেরেছে।’
সাব্বির, ইমরুল এবং কায়েসকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন হাতুরুসিংহে। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯ রান করেও তামীমের ৩৬ মিনিটের ইনিংসের প্রশংসা করেছেন হাতুরুসিংহেÑ ‘সাব্বির, ইমরুলকে কৃতিত্ব দিতেই হবে, এমনকি তামিমকেও। ওর ৯ রান আমি মনে করি ৫০ রানের মতো মূল্যবান। এই উইকেটে প্রতিবারই নতুন বলে উইকেট পড়েছে। আজকে সেটা হয়নি। রিয়াদ, মুশফিক ও কিছু না কিছু না কিছু করেছে। ওরা এমন খেলেছে বলেই এখন আমরা এই অবস্থানে।’ বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হিসেবে আড়াই বছর পার করেছেন, তবে এই টেস্টকে বিশেষ কাতারে রেখেছেন হাতুরুসিংহেÑ ‘টেস্ট ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ ও সৌন্দর্যই এটি। আমার দেখা অন্যতম সেরা ম্যাচ এটি। দুই দলের পারফরম্যান্স দেখেই আমি মুগ্ধ।’ জীবনে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন ইংলিশ পেস বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড। ৯৯ টেস্ট খেলা সেই ব্রড পর্যন্ত চট্টগ্রাম টেস্টকে নিজের দেখা অন্যতম সেরা টেস্টের কাতারে রাখছেনÑ ‘কি চমৎকার একটি টেস্ট ম্যাচ এটি? পঞ্চম দিনে ৩৩ রানের মধ্যে আমাদের দুটি উইকেট নিতে হবে। ৯৯টি টেস্ট খেলেছি। তবে আমার ক্যারিয়ারে খেলা সেরা পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে এটিও একটি। দুই দলের খেলোয়াড়রাই তাদের দক্ষতা দেখিয়েছে। আমি ৬শ’ সাড়ে ৬শ’ রানের টেস্টে ম্যাচের চেয়ে ৩শ’ সাড়ে ৩’শ রানের টেস্ট পছন্দ করি। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ দল এমন পারফরমেন্সে গর্বিত, এই কন্ডিশনে আমরা যা করেছি, তাতে আমরাও গর্বিত। ’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জয়ের স্বপ্ন দেখছেন হাতুরুসিংহে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ