Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাসে দ্বিগুণ ফেরতের লোভে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৫৩ পিএম

অনলাইন এমএলএম সাইটে ১ হাজার ৮৫০ টাকা দিয়ে সদস্য হতে বলে চক্রটি। এ ক্ষেত্রে ১৫ অথবা ৩০ দিনে দ্বিগুণ টাকা ফেরতের প্রলোভন দেওয়া হতো।পরবর্তীতে ধাপে চক্রটি সদ্য সদস্যদের বলে আরও নতুন সদস্য নিয়ে আসতে।

প্রতিজন নতুন সদস্যদের জন্য তারা ৫০ টাকা করে পাবেন বলে জানানো হয়। আর যিনি ১৫০ জন নতুন সদস্য নিয়ে আসতে পারবেন, তিনি হবেন স্টার সদস্য। আর এই স্টার সদস্যকে আইফোন, গাড়ি ও বিদেশে ভ্রমণের দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো।

এসব প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে ভুক্তভোগীরা হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। এভাবে চক্রটির অনলাইনভিত্তিক চারটি এমএলএম কোম্পানিতে ৫-৬ লাখ সদস্য সংগ্রহ করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৪০-৫০ কোটি টাকা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটির সাতজন সদস্যকে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সাভারের আমিন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতাররা হলেন- মো.আবুল হোসেন পুলক (৪০), মো.মাহাদী হাসান মল্লিক (৩৫), মো.মিজানুর রহমান ওরফে ব্রাভো মিজান (৫৫), মো.মহি উদ্দিন জামিল (৩৮), মো.সাইফুল ইসলাম আকন্দ (৪২), মো.কভেজ আলী সরকারভ (৩৫) ও মো.শাহানুর আলম শাহীন (৪২)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৯টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বই, একাধিক ব্যাংকের এটিএম কার্ড, বিভিন্ন অবৈধ এমএলএম কোম্পানির বিজন্স প্লানের কাগজপত্র ও ৬২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, চক্রটির সদস্যরা চড়তেন দামী গাড়িতে, পরতেন দামি পোশাক। চলাফেরা করতেন অভিজাত সব জায়গা অথবা হোটলে। এভাবে প্রথমে ভিকটিমদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে চক্রটি।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।

তিনি বলেন, চক্রটি প্রথমে একটি অনলাইন গ্রুপ খোলে তাদের ব্যবসার বিষয়ে প্রচারণা শুরু করে। চক্রটির সদস্যরা মানুষদের বলত, তাদের এখানে টাকা বিনিয়োগ করলে তারা ১৫ দিনে অথবা ৩০ দিনে তাদের টাকা দ্বিগুণ করে দেবেন। মাত্র ১ হাজার ৮৫০ টাকা জমা দিয়ে তাদের কোম্পানির সদস্য হওয়া যাবে বলে চক্রটি প্রচারণা চালায়।

এছাড়া তারা সদস্যদের আকৃষ্ট করার সময় নিজেরা খুব বিলাসী জীবনযাপন করত। বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি এবং হোটেলে বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন করত চক্রটির সদস্যরা। তখন আবার যারা বেশি সদস্য এনে দিতে পারত, ওইসব সদস্যদের বিভিন্ন রেটিং করে চক্রের সদস্যরা তাদের নিয়ে বিশাল বিশাল প্রোগ্রাম আয়োজন করত, যেন আরও সদস্য আনা যায় এসব প্রোগ্রাম দেখিয়ে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক সদস্যদের বলা হতো নতুন সদস্য নিয়ে আসতে। সে ক্ষেত্রে তারা প্রতি নতুন সদস্যের জন ৫০ টাকা করে পাবেন বলে জানানো হয়। আর ১৫০ জন সদস্য আনতে পারলে স্টার সদস্য হতে পারবে। আর এই স্টার সদস্যকে আইফোন, গাড়ি ও বিদেশ ভ্রমণের প্রলোভন দেখাতো। এসব প্রলোভনে একেকজন ২-৩ হাজার নতুন সদস্য নিয়ে আসে। আবার আরও বেশি সদস্য আনার জন্য কিছু কিছু স্টার সদস্যকে নিয়ে দেশ ও বিদেশে নানা প্রোগ্রাম আয়োজন করত তারা।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের হোতা আবুল হোসেন পুলক ও মাহাদী হাসান মল্লিক। তারা দুজন ডেসটিনিতে আগে কাজ করতো। ডেসটিনির থেকে এমএলএম ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তারা এখন অনলাইনে এই প্রতারণা করে আসছেন। যদিও চক্রটির সদস্যরা এটাকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বলেন।

তিনি বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে এক মাসে বা ১৫ দিনে কোনোভাবে টাকা দ্বিগুণ করা সম্ভব নয়। আমরা এই চক্রের প্রতারিত ভিকটিমদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি যাদের অধিকাংশই নারী। তারা ঘরে বসে কিছু অর্থ আয় করার লোভে এই চক্রের ফাঁদে পা দেয়।

তিনি বলেন, চক্রটির চারটি অনলাইন এমএলএম কোম্পানি আছে। চারটি কোম্পানির মাধ্যমে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় লাখ লোককে তারা প্রতারিত করেছে। এভাবে তারা ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার এখতিয়ার আমাদের নেই, তবে আমরা এ বিষয়ে সুপারিশ করব। তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকাগুলো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে নিয়েছে। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকার মধ্যে কিছু তারা বিনিয়োগ করেছে, আবার কিছু টাকা দিয়ে বিশাল বিশাল প্রোগ্রাম আয়োজন করতে খরচ করেছে। আর কিছু টাকা ব্যাংকে রেখেছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের আমরা রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠাব। তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পেলে টাকাগুলো আসলে কোথায় তারা কীভাবে রেখেছে বা খরচ করেছে—এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতারণা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ