পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গবেষণা কার্যক্রমে মনোযোগ নেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। গবেষণা দুর্নীতি প্রতিরোধের অন্যতম কার্যক্রম হলেও এ বিষয়ে দেড় দশকেও প্রতিভাত হয়নি দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি।
দাতা সংস্থা, এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপের ওপর ভিত্তি করে কার্যক্রম চালাচ্ছে দুদক। তবে যখন যে সরকার থাকে, সেই সরকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এসব জরিপ প্রতিবেদন গ্রহণ কিংবা বর্জন করছে সংস্থাটি।
কিছু জনবলের পদায়ন, বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের বৈধতা প্রদান ছাড়া কার্যত : তেমন কিছুই করতে পারেনি দুদক সংস্থাটি। অপেশাদার, অনভিজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টতাহীন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে কুক্ষিগত হয়ে আছে দুর্নীতি বিষয়ে গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ১৭ (চ) ধারায় ‘কমিশনের কার্যাবলী’তে ‘গবেষণা’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়ে গবেষণা পরিকল্পনা তৈরি করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে করণীয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ পেশ করা। ’
‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ বিলুপ্ত হয়ে ২০০৪ সালে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৭ বছরে আইনের ১৭(চ) ধারার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি সংস্থাটির কার্যক্রমে। দুদক প্রতিষ্ঠার পর আইনের ২৯(২) ধারাটি কয়েক বার মাত্র প্রতিপালনের (রাষ্ট্রপতির কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিলের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু একটি বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয় মাত্র। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে ১৭ (চ) ধারার কোনো অর্জন দুদক তুলে ধরতে পারেনি।
কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিষয়টির প্রতি কমিশনের মনোযোগহীনতা, দক্ষ জনবল না থাকা, বিশেষজ্ঞের অভাব এবং পদায়নকৃত জনবলের অদক্ষতা, ভুল এবং অপ্রয়োজনীয় পদায়নের কারণেই দুদকের কোনো অর্জন নেই গবেষণায়।
একজন মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে চলছে ‘প্রতিরোধ ও গবেষণা’ বিভাগ। প্রেষণে আসা প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিবকে (মহাপরিচালক একেএম সোহেল) দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে দিয়ে রাখা হয়েছে ‘প্রতিরোধ ও গবেষণা’ কার্যক্রম। ফলে তিনি তার মূল দায়িত্ব পালনের পর হাতে সময় থাকলেই কেবল গবেষণা অনুবিভাগকে সময় দিচ্ছেন।
উক্ত কর্মকর্তাও দুদকের নিজস্ব কোনো অফিসার নন। তিনি দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান করেননি। মামলার তদন্ত করেননি। বিচার পরিচালনার অভিজ্ঞতাও নেই।
অর্থাৎ দুর্নীতি সম্পর্কে বিশেষ কোনো পারদর্শিতা কিংবা অভিজ্ঞতার মানদন্ডে তাকে এ পদে বসানো হয়নি। বরং ‘গবেষণা’ নামক বিষয়টি দুদকে উপেক্ষিত বলেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্টতাহীন একজন কর্মকর্তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ঢাকায় অবস্থানের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় অনেকটা কার্যক্রমহীন এ শাখায় স্বস্তিদায়ক একটি পদে পদায়ন করা হয় এখানকার কর্মকর্তাদের। দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তা যদি কাউকে এই টিমে পদায়ন করা হয় সেটিও স্বস্তিস্বরূপ। এ টিমে রয়েছেন একজন পরিচালক, দু’জন উপ-পরিচালক ও কয়েকজন সহকারী পরিচালক। সহায়তার জন্য রয়েছেন ডাটা অ্যান্ট্রি অপরাটের, ইউডি উচ্চমান সহকারী এবং একজন কনস্টেবল।
অর্গানোগ্রামে ৪ জন সহকারী পরিচালকের পদ থাকলেও কার্যত রয়েছেন ২ জন। ১০ জনবলের অনুবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা যায় হয় অনেকটা কর্মহীন সময় কাটাতে। কখনো বা তার ঊর্ধ্বতন কর্তার সন্তুষ্টি বিধানে ছোটাছুটি করতে। ‘প্রতিরোধ’ কার্যক্রমের ‘সংযুক্ত’ বিষয়টি হিসেবে এটি রাখা হয়েছে। ফলে সারাবছর প্রতিরোধ কার্যক্রমের পেছনেই পুরো ইউনিটকে সময় দিতে হয়।
গবেষণার জন্য সুনির্দিষ্ট এবং নিবেদিত কোনো কর্মকর্তা পদায়ন করা হয় না। অদক্ষ, দুর্বল, ধীরগতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাম্পিং পোস্টিং দেয়া হয় দুদকের গুরুত্বপূর্ণ এ শাখায়। সূত্রমতে, সুনির্দিষ্টভাবে শুধু ‘গবেষণা’র জন্য পর্যাপ্ত তহবিলও নেই। যা রয়েছে তা শুধু ‘প্রতিরোধ’ কার্যক্রমে ব্যয়ের জন্য। ‘প্রতিরোধ’ অনুশাখার তৎপরতা বেশ লক্ষণীয়। এখানে তহবিল আছে। রয়েছে তহবিল খরচেরও বিভিন্ন খাত। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, র্যালি, সমাবেশ, সেমিনার, গোলটেবিল বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পোস্টার ও কার্টুন প্রদর্শনী, মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হয় এ বিভাগ থেকে। অনু-শাখাটিতে রয়েছে ব্যাপক অর্থ প্রবাহ।
‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ মতে, দুর্নীতি বিষয়ে গবেষণা দুদকের আইনি দায়িত্ব। কারণ, শুধু দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার পর দুর্নীতিবাজদের ধরে বিচার এবং কারাগারে নিক্ষেপ করলেই দুর্নীতি দূর হয়ে যাবে না। দুর্নীতি কেন হচ্ছে- তার কারণ উদ্ঘাটন, দুর্নীতির বিস্তার, প্রক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, প্রভাব, মাত্রা, মাত্রিকতা, দমন, প্রতিরোধ, প্রতীকার, দুর্নীতিবিরোধী কর্মপদ্ধতি- এসব কিছুই নির্ণীত হতে পারে গবেষণার মধ্য দিয়ে। দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাদের মতে, সুনির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র দুর্নীতি নিয়ে গবেষণার জন্য পৃথক একটি উইং থাকা প্রয়োজন। দরকার হলে দুদক ‘আউট সোর্সিং’র আওতায় দুদকের অভিজ্ঞ ও অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের গবেষণায় যুক্ত করতে পারে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, দুদক দু’ধরনের কাজ করছে। প্রসিকিউশন (বিচার) এবং প্রিভেনশন (প্রতিরোধ)। প্রতিরোধের অংশ হিসেবে গবেষণার বিষয়টি রাখা হয়েছে। গবেষণা প্রতিরোধের জন্য সহায়ক। তবে গবেষণায় দুদকের অর্জন বলতে কিছু নেই।
‘টিআইবিও দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা করছে। কিন্তু টিআইবি সব সময় ধারণাভিত্তিক জরিপ প্রকাশ করে। এতে তথ্য থাকলেও দালিলিক প্রমাণ থাকে না। এ কারণে দুদক এ নিয়ে কাজ করতে পারে না’ এমন প্রশ্নে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, এটি একটি ঢালাও অভিযোগ। দুদক প্রতিষ্ঠায় টিআইবি’র ভ‚মিকা রয়েছে। টিআইবি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ধারণাসূচক নিয়ে টিআইবি জরিপ করে অস্বীকার করি না। কিন্তু এ গবেষণা মানুষের অভিজ্ঞতাভিত্তিক। দুদক যদি আমাদের গবেষণা প্রতিবেদন গ্রহণ না করে তাহলে পাল্টা গবেষণা করে দেখিয়ে দিক যে আমাদেরটি ভুল। তাতে আমরা স্বাগত জানাব।
দুদকের গবেষণা শাখার অর্জন কি? এ শাখাটির প্রতি কেন অবজ্ঞা’? জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান এ বলেন, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দুর্নীতি নিয়ে গবেষণার আইনগত একটি অবলিগেশন আমাদের রয়েছে। আমি যোগদানের পর দেখেছি গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া আছে। কিন্তু এ পর্যন্ত গবেষণার বিষয়ে সন্তোষজনক কিছু চোখে পড়েনি। আমরাও মনে করি গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। কারণ আমরা যে কাজগুলো করছি- সেগুলোর জনমত যাচাই হওয়া প্রয়োজন। আমাদের মূল্যায়ন আমরা করলে তো হবে না। দুর্নীতির বিস্তার বাড়ছে। সাইবার করাপশন হচ্ছে। এগুলো নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের মতো ২/৩টি প্রজেক্ট রয়েছে। সেটির আওতায়ও গবেষণা আসতে পারে। দুদক কার্যক্রমের গুণগত মান কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা চালানো উচিৎ।
‘অনেক প্রতিষ্ঠানেই আউট সোর্সিং’র আওতায় নিজ প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গবেষণায় কাজে লাগানো হয়। তাদের কর্মজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তারা গবেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু দুদকে সেই সুযোগ নেই।’ এ প্রসঙ্গে দুদকের এই কমিশনার বলেন, এটি উত্তম প্রস্তাব। মন্ত্রণালয়সহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেই এমনটি আছে। এমনকি আমি নিজেও এটির পক্ষে মতামত দিয়েছি। দুদকেও সেটি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুধু দুদকের অভিজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিই শুধু নন- অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যেমন ধরুন, গণমাধ্যম কর্মীরাও যারা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করেন, ভাবেন তাদেরও সম্পৃক্ত করা যায়।
ড. মোজাম্মেল হক খান আরও বলেন, আমাদের আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে। সরকার আমাদের সবধরনের সহযোগিতা করছে। এ ক্ষেত্রে যে আমরা সরকারের আরও সহযোগিতা চাইব- তেমন লাগসই প্রস্তাব আমরা দিতে পারিনি। আমাদের গবেষণা কার্যক্রম নড়বড়ে। একটি গতানুগতিক বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা ছাড়া তেমন কার্যক্রম নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।