Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর ছিনতাইয়ে সক্রিয় ৮টি গ্রুপ : বাধা দিলে খুন

প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে সক্রিয় ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্র। এরা রাতের আঁধারে অটোরিকশা আর মোটরসাইকেলে রীতিমতো টহল দেয়। অটোরিকশায় ফাঁদ পেতে যাত্রী তুলে তার সর্বস্ব কেড়ে নেয়। বাধা দিলে ছুরিকাঘাত কিংবা শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি নগরীর খুলশী থানার দু’টি এলাকায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এ চক্রের নির্মম শিকার হন দুইজন। তাদের একজন প্রবাস ফেরত অপরজন চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানার কর্মকর্তা।
এ দুু’টি খুনের ঘটনায় ৬ জনকে পাকড়াও করা হয়। এ ৬ জন পৃথক দু’টি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। পুলিশ বলছে, মহানগরীতে এ ধরনের ৮টি ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। এ চক্রের সাথে জড়িত আছে তালিকাভুক্ত ৫৭ জন। এদের মধ্যে কয়েকজন কারাগারে থাকলেও বাকিরা ছিনতাইয়ে সক্রিয় রয়েছে। অনেকে কারাগার থেকে বের হয়ে ফের ছিনতাইয়ে নেমে পড়ছে।
গত ১৩ অক্টোবর রাতে নগরীর জাকির হোসেন সড়কে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের অদূরে খুন হন নাসির উদ্দিন (৩০)। পরদিন সকালে সড়কের পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় নাসিরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর দু’দিন পর নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নাসিরের খুনের ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতার দু’জন হলো- ইমরান হোসেন বাপ্পি (২১) ও মোহাম্মদ সুমন (৩০)। এরা দু’জন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী গ্রæপ ইসমাইল হোসেন ‘টেম্পু বাহিনীর’ সদস্য বলে জানিয়েছেন পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা। নাসিরকে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে দুই ছিনতাইকারী। স্বীকারোক্তিতে তারা জানায়, ওই রাতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে তারা পাঁচজন ছিনতাই করতে বেরিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখিত দুই ছিনতাইকারীও ছিল। পাহাড়তলী চক্ষু হাসাপাতাল এলাকায় ছিনতাইকারীরা নাসিরকে পায়।
জবানবন্দীতে ইমরান ও সুমন জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের সময় নাসির প্রথমে বাধা দেয় এবং চিৎকার শুরু করেন। এ সময় দুই ছিনতাইকারী নাসিরের মুখ চেপে ধরে। এতেই নাসির নিথর হয়ে যায় বলে তারা জানায়। এরপর একপর্যায়ে হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। একই সময়ে তার ঊরুতে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে নালায় ফেলে দেয় তারা। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এসময় তারা মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই গ্রেফতার হয় দুই ছিনতাইকারী। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য সুমনের বাসা মোহাম্মদপুরে। সেখানে তার একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান আছে। পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশায় করে এ ছিনতাইকারী চক্রটি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে।
একই রাতে নগরীর খুলশী থানার আমবাগান ভাঙাপুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেডে সি-টেক্স নামের একটি গার্মেন্টসের সহকারী স্টোরকিপার জাহাঙ্গীর আলমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে খুনের অভিযোগে ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইকৃত মোবাইল, দুই প্যাকেট গুঁড়ো দুধ ও একটি পুতুল। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ মো: নাছির (২৮), নূর হোসেন (৩২), মো: সোহেল (২৬) ও মহিন উদ্দিন (২২)।
গ্রেফতারকৃতরা জানায়, গ্রামের বাড়ির পথে জাহাঙ্গীর বাসের জন্য নিমতলা বিশ্বরোড থেকে অলংকার যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তারা যাত্রীবেশে জাহাঙ্গীরকে অটোরিকশায় তুলে নেয়। পথে তার কাছ থেকে মোবাইল ও সঙ্গে থাকা মালামাল ছিনিয়ে নেয় এবং ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে জাহাঙ্গীরকে গলা টিপে হত্যা করে। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে আমবাগান ভাঙাপুল এলাকায় তার লাশ ফেলে দেয়। গ্রেফতারের পর নাসির ও নূর হোসেন হত্যাকাÐের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো: নোমানের আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে।
বিগত ২০০৫ সাল থেকে অটোরিকশায় ফাঁদ পেতে ছিনতাই শুরু হয়। ভয়ঙ্কর গামছা পার্টি হিসেবে নগরজুড়ে আতঙ্ক ছড়ায় ওই চক্রটি। তখন একাধিক গ্রæপ মহানগরীতে সক্রিয় ছিল। এ ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে কয়েক বছরে অন্তত ২০ জন নির্মমভাবে খুন হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রবাসী ব্যবসায়ী, প্রবাস ফেরত ছাত্র, বিআরটিএর কর্মকর্তা, কাস্টম কর্মকর্তাসহ অনেকে।
২০০৭ সালে এরকম একটি চক্রের সন্ধান পায় ডিবি পুলিশ। তাদের হাতে ধরা পড়ার পর তারা এভাবে অটোরিকশায় যাত্রী তুলে খুনের কথা স্বীকার করে। তার আগ পর্যন্ত পুলিশ এসব খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারছিল না। এরপর পুলিশি অভিযানে সাইলেন্ট কিলারখ্যাত কয়েকটি চক্রের অন্তত ২০ জন সদস্য ধরা পড়ে। তাদের স্বীকারোক্তিতে প্রায় ১০টি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়। ওই অভিযানের পর দু-এক বছর এদের তৎপরতা বন্ধ ছিল। এরপর এ চক্রটির তৎপরতা ফের শুরু হয়। সম্প্রতি নগরীতে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে।
ওই দু’টি খুনের ঘটনার পর দু’টি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের পাকড়াও করে তাদের সহযোগীদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের তালিকা ধরে শিগগির সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর ছিনতাইয়ে সক্রিয় ৮টি গ্রুপ : বাধা দিলে খুন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ