সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
আব্দুস সালাম
দুষ্টু বাঘের অত্যাচারে বনের পশুপাখিরা অতিষ্ঠ ছিল। তারা খুব ভয়ে ভয়ে থাকত। তারা ভাবত এই বুঝি বাঘ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শিয়াল ব্যতীত বনের সব পশুপাখির মাংসের স্বাদ বাঘটি গ্রহণ করেছিল। তার লক্ষ্য ছিল শিয়ালের মাংস খাওয়া। সে যে কোনোভাবেই হোক শিয়াল শিকার করতে চেয়েছিল কিন্তু বনের শিয়ালগুলো ছিল খুবই ধূর্ত। বাঘ শত চেষ্টা করেও কোনো শিয়ালকে ধরতে পারল না। তাই সে মনে মনে একটা পরিকল্পনা করল, শিয়ালগুলো যে রাস্তায় চলাফেরা করে সেই রাস্তার ওপর একটি ফাঁদ পেতে রাখবে। তাহলেই তার উদ্দেশ্য সফল হবে।
বাঘ বেশ কিছু দিন ধরে শিয়ালদের গতিবিধি লক্ষ্য করছিল। সব কিছু দেখেশুনে সে ফাঁদ পাতার একটা উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করল। ফাঁদ নির্মাণের জন্য বন থেকে বড় একটি গাছের গুঁড়ি আর একটা বড় রশি সংগ্রহ করল। তারপর গাছের গুঁড়িটি রশি দিয়ে বেঁধে একটি গাছের ডালে রেখে দিল। আর রশির অপরপ্রান্ত দিয়ে ফাঁদ তৈরি করল। শিয়ালের চলার পথে রশিটি এমনভাবে স্থাপন করা হলো যাতে বাইরে থেকে ফাঁদটি কারও চোখে না পড়ে। ফাঁদের মাঝে পা পড়লেই রশির টানে গুঁড়িটি গাছের ডাল থেকে নিচে পড়ে যাবে। আর তাতে শিয়ালের পা আটকে গিয়ে গাছের নিচে ঝুলতে থাকবে। এই সুযোগে বাঘ শিয়ালকে ধরে ফেলবে।
গাছের গুঁড়ি আর রশি সংগ্রহ করা দেখে বনের অনেক পশুপাখি বুঝতে পারছিল যে, বাঘ এগুলো দিয়ে কিছু একটা করবে, যা আমাদের জন্য শুভ হবে না। আর শিয়ালগুলো এসব জানতে পেরে খুব সতর্কভাবে চলাফেরা করছিল। সে তার চলার পথ পরিবর্তন করে ভিন্ন পথে হাঁটছিল। বাঘ মাঝে মাঝে খোঁজ নিতে যাচ্ছিল শিয়াল ফাঁদে ধরা পড়ল কিনা তা দেখার জন্য। না কোনো শিয়াল ধরা পড়েনি। এভাবে আরও কয়েক দিন চলে গেল। কিন্তু কোনো শিয়ালই ফাঁদে আটকা পড়েনি। বাঘ বুঝতে পারল যে, ফাঁদ দিয়েও শিয়ালকে ধরা যাবে না। তাই বাঘের মনটা একটু খারাপ হলো। যাহোক, কয়েক দিন পর বাঘ ফাঁদের কথা ভুলে গেল। কোথায় ফাঁদটি পেতে রেখেছিল তাও তার মনে ছিল না।
একদিন বাঘটি কোনো প্রাণী শিকার করতে পারল না। ক্ষুধায় সে কাতর ছিল। ক্লান্ত হয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছিল। নিকটেই ছিল তার পাতা সেই ফাঁদটি। বাঘ বুঝতে পারেনি। ফাঁদের উপর পা পড়তেই দড়িতে টান লাগল। আর তৎক্ষণাৎ গাছের ডাল হতে গুঁড়িটি নিচে পড়ে গেল। বাঘের পা ফাঁদে আটকে গেল। সে গাছের নিচে ঝুলতে থাকল। তখন বাঘ বুঝতে পারল যে, তার নিজের পাতা ফাঁদেই সে ধরা পড়েছে। ফাঁদ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য খুব চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। সে গাছের নিচে ঝুলতে থাকল। এভাবে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলো। একদিকে ফাঁদে আটকা পড়ার যন্ত্রণা অপরদিকে ক্ষুধার যন্ত্রণা। সবমিলে বাঘ যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকল। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। সারা রাত বাঘ একইভাবে ঝুলতে থাকল। সকাল হয়ে গেল তবু কেউ তাকে মুক্ত করতে এলো না। আর আসবেই বা কে? বাঘকে তো আর কেউ পছন্দ করে না। তখন তার মহাবিপদ। তার জান যায়যায় অবস্থা।
দূর থেকে শিয়াল বাঘকে ঝুলতে দেখল। সে চুপি চুপি বাঘের নিকটে গেল। শিয়ালকে দেখেই বাঘ অনুনয় বিনয় করে বলল : আমাকে বাঁচাও। আমি আর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছি। শিয়াল বলল : তা না হয় বুঝলাম, তুমি খুব যন্ত্রণায় ছটফট করছ। তো তোমার এ অবস্থা হলো কী করে তা একটু শুনি। শিয়ালের দয়া পাওয়ার জন্য বাঘ বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতে শুরু করল। শিয়াল বলল : না না মিথ্যা বোলো না। আমি এখন বুঝতে পারছি যে, তুমি আমাদের কাউকে ধরার জন্যই এই ফাঁদ পেতেছিলে। কারণ এই পথে তো অন্য প্রাণী যাতায়াত করে না। তোমাকে মুক্ত করে তো খাল কেটে কুমির আনতে পারব না। তুমি বরং মরলে আমরা খুশি হব। বনের সকল পশুপাখি খুশি হবে। আমরা একটু শান্তিতে বাস করতে পারব। এই কথাগুলো বলে নিজের কাজে হাঁটা দিল।
এদিকে ফাঁদে বাঘের আটকা পড়ার কথাটি বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। অনেক পশুপাখি বাঘকে দেখতে এলো। বাঘের তখন কোনো শক্তি ছিল না যে তাদের সাথে কথা বলবে। সে শুধু মরার মতো ঝুলে ছিল। আর মনে মনে আফসোস করতে থাকল, কেন যে ফাঁদ পাততে গিয়েছিলাম। কেন যে শিয়ালের মাংস খাওয়ার লোভ করতে গেলাম। যদি এসবের লোভ না করতাম, তাহলে আমার আজ এই অবস্থা হতো না। আমি তো ভালোভাবেই জীবনযাপন করছিলাম...। এভাবে আবার বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সারা রাত বাঘ একইভাবে ঝুলে থাকল। পরের দিন সকালে বনের পশুপাখিরা বাঘের কাছে গিয়ে দেখল যে, তার মৃত্যু হয়েছে। বাঘের মৃত্যুর সংবাদে বনের পশুপাখিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।