Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উন্নয়ন ভোগান্তি

সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অসময়ে দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজধানীর অনেক সড়ক। এতে গতকাল রাজধানীবাসীকে ভয়াবহ যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থেকে অনেককে দুর্বিষহ সময় পার করতে হয়েছে। বিশেষ করে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি ছিল সব চেয়ে বেশি। বিভিন্ন সড়কে পানি জমে তৈরি হওয়া যানজটের, পাশাপাশি যানবাহন সঙ্কটে পরীক্ষার্থীরা সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সড়কে সিএনজি বা রিকশাও ছিল অনেক কম। তাই দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া গুনে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়েছে। যানজটের কারণে অনেকের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরিও হয়েছে।

এছাড়া অনেক রুটে বাস, অটোরিকশাসহ অন্যান্য গণপরিবহনের ছিল তীব্র সঙ্কট। তাই অনেক কর্মজীবীকে হেঁটেই কাকভেজা হয়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়েছে। চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তি মাথায় নিয়েই গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের। অনেক এলাকায় যানবাহনের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে।
নগরীর বেশিরভাগ সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজের জন্য বছরের বেশিরভাগ সময় সড়কে চলে খোড়াখুড়ি। কোন প্রকার নিয়ম না মেনেই দিনের পর দিন চলে এসব কাজ। রাজধানীর বড় সড়ক থেকে শুরু করে ছোট রাস্তা বা অলিগলিতেও চলে এসব উন্নয়নের কাজ। এতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। এই কাটাকাটি বা খোঁড়াখুড়িতে সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে নগরবাসীকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সরজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, মগবাজার, শাহবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, কাকরাইল, শান্তিনগর, শ্যামলী, বাংলামোটর, আজিমপুর, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত এলাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। গণপরিবহনের সংখ্যা কম হলেও বেশির ভাগ ছিল প্রাইভেটকার। যাত্রীবাহী বাসের সঙ্কটের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অফিসগামী যাত্রীরা। গণপরিবহন সঙ্কট ও সড়কে যানজট ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরাও এই দুর্ভোগে পড়েছেন। রাজধানীতে সাধারণ সময়ে প্রায় ছয় হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে গাড়ির জটলা থাকলেও বৃষ্টির কারণে এদিন সকাল থেকে সড়কে বাস ও মিনিবাস কম চলাচল করতে দেখা গেছে। বরং উল্টো বেশ খানিক সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্খিত পরিবহন পাচ্ছেন না যাত্রীরা। বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন যাত্রীকেই ছাতা মাথায় বা রেইনকোট পরে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে।

রাজধানীর মিরপুরে বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুর রশিদ বলেন, অফিসে যাব কিন্তু বাস পাচ্ছি না। যে দুই-একটা বাস আসছে সেগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হয়ে আসায় ওঠা যাচ্ছে না। রাস্তায় পরিবহন কম দেখা দিয়েছে। যেসব গাড়ি চলছে সেগুলোও রাস্তায় থেমে থাকে। বাসে উঠেও কোন লাভ নেই। দীর্ঘ যানজটে গাড়ি সামনে যাচ্ছে না।

নাইম নামের আরেক যাত্রী বলেন, উত্তর বাড্ডায় দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে বাসে উঠেছি। কুড়িল, এয়ারপোর্ট রোড, কালশি সব জায়গাতেই অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় তীব্র যানজট হলেও গণপরিবহের সংখ্যা অনেক কম। কালশি, মিরপুরসহ বিভিন্ন সড়কে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণেও যানজট আরো বেড়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হতাম না। অতিরিক্ত যানজটে আমার মতো অনেকেই খুব ভোগান্তিতে পড়েছেন।
নুরুল আমিন নামের এক যাত্রী বলেন, বাসা থেকে সকাল ৮টায় বের হয়ে এক ঘণ্টায় গন্তব্যে যেতে পারিনি। অন্যদিন যে পথ যেতে সময় লাগে ১০ মিনিট। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেকে নিয়ে কলেজে যেতে হচ্ছে যানজট ঠেলে। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার গাড়িও কল করে পাওয়া যাচ্ছে না।

আরেক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, যাত্রীরা বাস ও অটোরিকশার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর শ্যামলী যাওয়ার জন্য অটোরিকশা পাই, ভাড়া দিতে হয় ২৫০ টাকা। যা অন্যান্য দিনের চেয়ে দ্বিগুণ। দুপুর গড়াতেই কোনো কোনো রুটে বাস সঙ্কট যেন আরো বেড়েছে। দীর্ঘ সময় পর গন্তব্যের বাস পেলেও তাতে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। আর এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এক কর্মকর্তা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে নগর পরিবহনের অর্ধেক বাস ও মিনিবাস রাস্তায় নামেনি। বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে থাকায় এসব পরিবহন নির্দিষ্ট গতিসীমায় চলতে পারছে না। মহাখালী-আব্দুল্লাহপুর সড়কেও সকালে তীব্র যানজট ছিল। বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। এজন্য গাড়ি চালকদের সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের এয়ারপোর্ট শাখার এসি মো. সাইফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বৃষ্টির কারণে গতকাল সকালে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে স্বাভাবিক হয়। তবে গাজীপুর এলাকায় রাস্তায় উন্নয়ন কাজ চলছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন কাজের জন্য মাঝে মাঝে গাজীপুর রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এ সময় বেশি যানজট সৃষ্টি হয়। তবে গাজীপুর রাস্তায় যান চলাচল শুরু হলে যানজট কমে যায়।
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের ডিসি মো. সাইফুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বৃষ্টির কারণে গাড়ি চলাচলে একটু ধীরগতি রয়েছে। এছাড়াও আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর রাস্তায় উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। গাজীপুরেও রাস্তায় উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যানজট মুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশ বাড়তি দায়িত্ব পালন করছে। তারপরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ