মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিগত শতাব্দীতে তেল সম্পদ যদি ভ‚-রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়ে থাকে, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে বিশ্বরাজনীতির চাবিকাঠি হবে খনিজ সম্পদ, যা দূষণমুক্ত পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয় সবুজ প্রযুক্তির চালিকাশক্তি। গøাসগোতে সাম্প্রতিক জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (সিওপি২৬)-এ আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) উল্লেখ করেছে যে, যদি প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্য পূরণ করতে হয়, দেশগুলিকে সবুজ জ¦ালানীতে অভ্যস্ত হতে হবে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা বলছে যে, জ¦ালানী শক্তির চাহিদা কয়লা এবং জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে লিথিয়াম, কোবাল্ট এবং তামার মতো খনিজগুলিতে স্থানান্তরিত হবে এবং ফলস্বরূপ, এই খনিজ সম্পদের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। যেমন, লিথিয়ামের চাহিদা প্রায় ৪০ গুণ বাড়বে, যখন গ্রাফাইট, কোবাল্ট এবং নিকেলের চাহিদা প্রায় ২০ থেকে ২৫ গুণ বেড়ে যাবে। চীন ইতিমধ্যেই এই পরিবর্তনের পথে বিনিয়োগ শুরু করেছে, বিশেষ করে, বিশ্বের এমন কিছু অংশে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র এখন পিছিয়ে রয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন দেশীয় কয়লা শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশাসন বিশ্বজুড়ে কৌশলগত খনিজ মজুদ নিয়ন্ত্রণকারী ক্ষমতার দালালদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যস্ত ছিল। এই লক্ষ্যে বেইজিং ২০১৫ সালে ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ কার্যক্রম চালু করে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পে আধিপত্য বিস্তার। এরপর শীঘ্রই চীন কৌশলগত খনিজ সম্পদগুলির জন্য বিশ্বব্যাপী সরবরাহ লাইনগুলি সুরক্ষিত এবং সম্পদ সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল বিশ্বের খনি শিল্পকে হাত করতে শুরু করে।
ভ‚-রাজনীতি চীনকে শুধুমাত্র সাহায্য করেছে, বিশেষ করে, আরও অস্থিতিশীল, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলিতে। যেমন, আফগানিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের মতে দেশটি ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদের ভান্ডারে বসে আছে এবং সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম লিথিয়াম মজুদগুলির মধ্যে একটি সহ। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের প্রস্থানের পর তালেবান এখন সেই ভাÐারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চীন ইতিমধ্যেই সেখানে সমৃদ্ধ খনিগুলির অনুসন্ধান চালাচ্ছে। একইভাবে, আফ্রিকাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিজ মজুদ রয়েছে, চীন এই অঞ্চলের ক‚টনৈতিক শূন্যস্থানটির সদ্ব্যবহার করেছে এবং নিঃশব্দে সেইসব প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমাদের সাথে বিবাদের কারণে ভুগছে। উদাহরণস্বরূপ, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো। বিশ্বের কোবাল্টের ৭০ শতাংশই এই দেশ থেকে আসে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের হিসাবে, চীনা কোম্পানিগুলি সেখানে ১৯ টি কোবাল্ট খনির মধ্যে ১৫ টিরই মালিকানা বা অর্থায়নে যুক্ত।
২০১৬ সালে, যখন ওয়াশিংটন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে বিভ্রান্ত ছিল, তখন চায়না মলিবডেনাম যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম তামা এবং কোবাল্ট খনি টেনকে ফাংগুরুমের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদারিত্ব অধিগ্রহণ করে, যা প‚র্বে অ্যারিজোনা-ভিত্তিক ফ্রিপোর্ট-ম্যাকমোরানের মালিকানাধীন ছিল। ৪ বছর পর, চীনা ফার্মটি একই মার্কিন ফার্ম থেকে আরও একটি এবং আরও বেশি চিত্তাকর্ষক কোবাল্ট রিজার্ভ অধিগ্রহন করে। চীনের এই কৌশলগুলি এখন পরবর্তী প্রজন্মের জ্বালানীর পরিশোধন এবং প্রক্রিয়াকরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার মতে, দেশটি বিশ্বের লিথিয়াম এবং কোবাল্টের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং রেয়ার আর্থ মিনারেলের ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে। চীন যথাক্রমে ৪০ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ শেয়ার সহ তামা এবং নিকেলের বৃহত্তম প্রক্রিয়াজাতকারী।
চীনের প্রভাব কেবল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত, ভঙ্গুর দেশগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যেগুলি পশ্চিমের সাথে বিরোধে জড়িয়ে আছে। চীন পশ্চিমের মিত্র দেশগুলিতেও উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি লিথিয়াম, অস্ট্রেলিয়ায় উৎপাদিত হয়। আইইএ তথ্য অনুসারে, এর ৫৮ শতাংশ চীনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এই বাজারগুলিতে চীনের প্রভাব সামনের বছরগুলিতে একটি উল্লেখযোগ্য দর কষাকষির চাবি হিসাবে প্রমাণিত হবে, বিশেষত, যখন পশ্চিমারা ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নির্গমনের দিকে অগ্রসর হতে চলেছে। ট্রাম্প এবং বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে, ওয়াশিংটন চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু, যেখানে সবুজ শক্তির সাথে সম্পৃক্ত খনিজগুলি চীনের আওতায় চলে এসেছে, এবং তেল ও গ্যাসের মজুদ কিছু দেশের হাতে রয়েছে, সেখানে অন্তত মাঝারি মেয়াদে চীনের উপর নির্ভর করা ছাড়া বিশ্বের কাছে বিকল্প নেই। যদিও বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত বক্তৃতায়, বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা গড়ে তোলার এবং চীনের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ইচ্ছার উপর জোর দিয়েছে, তবে, ভবিষ্যতের জ¦ালানী শক্তির বাজার এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে মার্কিন ক‚টনীতিকে আরও দীর্ঘ সময় ঘাম ঝরাতে হবে। সূত্র : ইউএস চায়না রিলেশন্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।