চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলূম মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা নূরুল ইসলাম জেহাদীর ইন্তিকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (হাফি.)।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি ষড়যন্ত্রের প্রতিরোধ এবং ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি হিসেবে তিনি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তার সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং প্রচার-প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ৯০-এর দশক থেকেই বিরামহীনভাবে এ যাবত তিনি কাদিয়ানীবিরোধী আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। একই সাথে তিনি রাজধানী ঢাকার অন্যতম বিখ্যাত খিলগাঁও মাখজানুল উলূম মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস ছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মাদরাসার মজলিসে শূরার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট যেকোন গুরুত্বপূর্ণ জরুরত ও সংকটে তিনি দেশের আলেম সমাজের মাঝে দীর্ঘ দিন ধরে নেতৃত্বের কাতারে থাকতেন। কওমি উলামায়ে কেরামের যে কোন সংকটে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা সবাইকে অভিভূত করে তুলতো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর কাছ থেকে ব্যাপক দ্বীনি খিদমত নিয়েছেন।
আল্লামা ইয়াহইয়া (হাফি.) বলেন, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)সহ গত দেড় বছরে বহু শীর্ষ আলেমকে হারানোর পর আমরা আশা করেছিলাম, আল্লামা নূরুল ইসলাম জেহাদী (রহ.) এই শূন্যস্থান পুরণে বহুদিন দায়িত্ব পালন করে যাবেন। কিন্তু আজ তিনি আমাদেরকে ছেড়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও পরকালের অসীম জীবনের পথে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর এই বিদায়ে অন্য সকলের সাথে আমিও গভীরভাবে বেদনাকাতর ও শোকাহত।
আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (হাফি.) আরো বলেন, বর্তমানে উলামায়ে কেরামের শীর্ষ নেতৃত্বের সংকটে আল্লামা নূরুল ইসলাম জেহাদী (রহ.)এর উপস্থিতি অনেক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর ইন্তিকাল ইসলামী অঙ্গন ও উলামায়ে কেরামের মাঝে গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে। তাঁকে হারানোর ক্ষতি সহজে পুরণ হবার নয়। ধর্মীয় বিষয়াদি ছাড়াও মরহুমের সাথে ছাত্র জীবন থেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমার অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক চলে আসছে। মরহুমকে হারিয়ে আজ শুধুমাত্র তাঁর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নন, বরং গোটা আলেম সমাজ ও লক্ষ লক্ষ তৌহিদী জনতা গভীর শোকে মুহ্যমান ও বেদনাকাতর।
আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (হাফি.) স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, গত কিছু দিন আগে তিনি আমার কাছে নিজের একান্ত ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেছিলেন, “কখন মৃত্যুর ডাক আসে জানি না। আমার মনের একান্ত ইচ্ছা, আমার মৃত্যুর পর আমার লাশ যাতে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মাকবারায় দাফন করা হয়”। আল্লাহর ইচ্ছায় আজ তাঁর ইন্তিকালের খবর শোনার পর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে মরহুমকে দারুল উলূম হাটহাজারীর মাকবারায় দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, দারুল উলূম হাটহাজারীর নিজস্ব কবরস্থানটি প্রতিষ্ঠার পেছনে আল্লামা জেহাদী (রহ.)এর বিশেষ ভূমিকা ও অবদান ছিল। এছাড়া তিনি আজীবন দারুল উলূম হাটহাজারীর যে কোন প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দিয়ে এসেছেন এবং জামিয়াকে একান্তই নিজের আপন জানতেন।
.
শোকবার্তায় আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (হাফি.) বলেন, মহান আল্লাহর দরবারে গভীরভাবে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন মরহুম আল্লামা নূরুল ইসলাম জেহাদীকে মাগফিরাত দান করে আপন রহমতের ছায়াতলে আবৃত করে নেন এবং পরকালে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন। পাশাপাশি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, মুহিব্বীন, শাগরীদ ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। দয়াময় আল্লাহ তাদের সকলকে সবরে জামিল দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।