Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আস্থা বাড়ছে বিদেশিদের’

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের বড় বাজার : সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সব ধরনের সুযোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে একটি বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নসহ সব নীতি সহায়তা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব দিন-দিন বাড়ছে। রাজধানীর একটি হোটেলে দু’দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২১’, এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ‘রেডিসন ব্লু’ হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ভারত, সউদী আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বিশে^র ১৫টি দেশের ২ হাজার ৩৩২ জন নিবন্ধন করেছে জেনে আমি আনন্দিত হয়েছি। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য আমরা সম্ভাবনাময় ১১টি খাত চিহ্নিত করেছি। এ সব হচ্ছে, অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও ফাইন্যান্সিয়াল সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ, পাট-বস্ত্র এবং ব্লু-ইকোনমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ^াস করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে এসব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিশে^ বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনদফা নির্বাচনে জয়লাভের ফলে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ-পরিশ্রমী জনসম্পদ সৃষ্টি, আকর্ষণীয় প্রণোদনার মাধ্যমে উদার বিনিয়োগ-নীতি এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারের মধ্যবর্তী ভৌগলিক অবস্থানের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতি আস্থার ফলে ৬০ শতাংশের বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আসছে পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে। তাঁর সরকার ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’কে প্রধান্য দিয়ে দেশে বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতি প্রাধান্য দিচ্ছি। দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে কাজ করছি। ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করেছি। বাংলাদেশ বিশে^র ৩৮টি দেশে একতরফা শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাচ্ছে। ৩৬টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত-করারোপন পরিহার চুক্তি বলবত আছে। তাঁর সরকার বিভিন্ন বাণিজ্য জোটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অবকাঠামোসহ সকল নীতিগত সহায়তা প্রদানে অঙ্গিকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ বিশ্বে এখন উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছি। দেশে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। আমাদের ১২ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আহরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের আইটি পণ্য রফতানির লক্ষ্য নিয়েছি। যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা শূন্য হাতেই ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামে নেমেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। জাতির পিতা সকল কল-কারখানা জাতীয়করণ করে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশকে বহির্বিশে^র সঙ্গে যুক্ত করে বিনিয়োগ-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করেন, বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতির পিতা মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ করে সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল কৃষক অল্পদামে সার পাবে, বেশি ফসল উৎপাদন করবে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জিত হবে, উদ্বৃত্ত খাদ্য ও সার বিদেশেও রফতানি করা যাবে। তাঁর উন্নয়ন দর্শনের মূলেই ছিল দেশীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং মানব সম্পদের উন্নয়ন। ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতির পিতার এক ভাষণের উদ্ধৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা ভাষণে বলেন, আপনাদের অনেক কষ্ট করতে হবে। বাংলাদেশে সম্পদ আছে। সে সম্পদ ব্যবহার করা হয় নাই। ব্যবহার করতে সময় লাগবে। ইনশাআল্লাহ, যদি বাংলাদেশের সম্পদ আমরা ব্যবহার করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ যে ‘সোনার বাংলাদেশ’ হবে, সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

আওয়ামী লীগের ২১ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের প্রসঙ্গ টেনে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের ২০০০-২০০১ অর্থবছরে বর্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮১৬ মিলিয়ন ডলার। যেখানে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২৮৬ মিলিয়ন ডলার। আমরা ২০০০-২০০১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি, যেখানে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। তিনি বলেন, আমরা যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ও রফতানি উন্নয়নের লক্ষ্যে আইটি-ভিলেজ এবং হাইটেক-পার্ক গড়ার উদ্যোগ নিই। অথচ, বিএনপি বিনামূল্যে ফাইবার অপটিক কেবলে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে।

তাঁর সরকারের সময় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন চিত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা জাতীয় শিল্পনীতিসহ খাতওয়ারি শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। রফতানিমুখী শিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য বন্ড ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশন করছি। আমরা ৩৯টি হাইটেক-পার্ক নির্মাণ করেছি। পর্যায়ক্রমে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়েক তুলছি। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে ২৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। মীরসরাই, সোনাগাজী ও সীতাকুন্ড উপজেলায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ গড়ে তুলছি। আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।

তিনি বলেন, অমরা ‘বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইন, ২০১৫’ প্রণয়ন করেছি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানে ৭৯টি পিপিপি প্রকল্পে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করেছি এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৯ সাল থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ৩৫টি সংস্থার ১৫৪টি বিনিয়োগ সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করেছি। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। ঢাকায় মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, সৈয়দপুরে আঞ্চলিক বিমানবন্দর, কক্সবাজারে আরো একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং মাতারবাড়ি ও পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির প্রতিঘাত নিরসনে ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছি। ‘আমরা স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির আকার এখন ৪১১ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ২,৫৫৪ ডলার। রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন করছি। তিনি মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণে এই বিনিয়োগ সম্মেলনটি আয়োজন করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সউদী আরবের পরিবহন ও লজিস্টিকমন্ত্রী সালেহ নাসের এ আল-জাসের এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়াল।

সালমান এফ রহমান বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সফলতা পেতে পারে। ফলে এদেশে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের বড় বাজার। পাশাপাশি (আমাদের) পাশে ভারত ও চীন আছে। বাংলাদেশে উৎপাদন করে বিনিয়োগকারীরা সেই সুবিধা নিতে পারেন।

একই সঙ্গে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বন্দরসহ বড় বড় বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। অবকাঠামোগত এসব উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। সালমান এফ রহমান বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সফলতা পেতে পারে। ফলে এদেশে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, আইসিটি, প্লাস্টিক, চামড়াজাতীয় পণ্যসহ বাংলাদেশে কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হচ্ছে। বাংলাদেশ আগের মতো নেই। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাংলাদেশ। যেখানে বিনিয়োগে সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। সালমান এফ রহমান বলেন, এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, মোবাইল ব্যবহারে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। গত কয়েক বছর ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ বেড়ে ৪১১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু গড় আয়ও বেড়ে দুই হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা আগের হিসাবে ছিল দুই হাজার ২২৭ ডলার। দেশের অভ্যন্তরে কৃষি, শিল্প ও সেবাসহ সব খাত এগিয়ে যাচ্ছে। সবজি উৎপাদনে আমরা বিশ্বে তৃতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বন্দরসহ বহু বড় বড় প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। এসব অবকাঠামো থেকে সাধারণ মানুষ সেবা পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। অবকাঠামোগত এসব উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে।

পীযুষ গয়াল বলেন, ঢাকা-দিল্লি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে যোগাযোগ, পর্যটন, শিল্প, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেবে ভারত। তিনি বলেন, ঢাকা-দিল্লি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। ভারত যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ভারত নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক জোন করছে বাংলাদেশ। এটা অনেক ভালো উদ্যোগ। মিরসরাই ও মোংলা ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করছে ভারত। অন্যান্য অঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে ভারত।

এদিকে গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সব বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। অগ্রগতির এ ধারা যেন আর কেউ রোধ করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক রকম চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থাকবে। সেগুলো মাথায় নিয়ে আমাদের চলতে হবে। যতই সমালোচনা হোক, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং করে যাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। জনগণের সার্বিক উন্নয়নে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এ অর্জন আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। এটি বাঙালি জাতির বিরল সম্মান ও অনন্য অর্জন। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি বলেই আমরা সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। অনেক সমালোচনার সম্মুখিন হতে হয়েছে। সমালোচনায় কান না দিয়ে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছি। সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।

সংসদ নেতা বলেন, বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণ প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার কারণে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। এ কাজ আমরা সহজভাবে করতে পেরেছি, তা কিন্তু নয়। এ যাত্রাপথ কখনো সুগম ছিল না। আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, গাড়িতে আগুন, অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ এসব কর্মকাণ্ড বিএনপি এখনো প্রত্যাহার করেনি।

তিনি বলেন, উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এরপরে এই কোভিড-১৯ মহামারিও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতির চাকা যখন স্থবির তখন আমরা তা সচল রেখেছি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এজন্য আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতো। জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল- জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ বা বেগম জিয়ার কথা বলেন, তারা তো কেউ দেশকে উন্নত করতে চাননি। ক্ষমতা তাদের কাছে ছিল ভোগের বস্তু ও বিলাসবহুল জীবন। তারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দলে টেনে একটি শ্রেণি তৈরি করল। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ উন্নীত হওয়ার কারণে আমরা সুবিধা যেমন পাব, অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের সুযোগগুলো পাব না। অবশ্য আমরা ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছি, করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। এতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদার এই প্রাপ্তি দেশের জনগণের।

বঙ্গবন্ধুকন্যা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, যাদের জন্য জাতির পিতা সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করলেন, সেই বাঙালি জাতির হাতেই তার জীবন দিতে হলো।

শেখ হাসিনা বলেন, সবকিছু জেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি দেশে ফিরে আসি। সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। বারবার আঘাত এসেছে, কিন্তু কেন জানিনা আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমিন বার বার বাঁচিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ পেয়েছি বলেই একটা মার্যাদায় বাংলাদেশকে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।



 

Show all comments
  • Tuhin Ahmed Tufayel ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
    অভিনন্দন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Maahi Ahmed ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
    Congratulations Best wishes Our pride Honourable Prime Minister Sheikh Hasina
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiq Rahman ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
    সামিট সফল হোক। জয় বাংলা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Kamrul Hassan Chowdhury ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
    Development is implementing by the dynamic leadership of our honourable prime minister jana natree sheikh Hasina. We are going to a develop country within 2026. Joy Bangla Joy Bongobondhu
    Total Reply(0) Reply
  • Masidul Huq ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
    উন্নয়ন মূলক কাজ গুলোর জন্য আপনাদের অভিনন্দন __
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sumon ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
    শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে উন্নয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • Prince Fakrul Islam ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি"আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Uttam Ghosh ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
    মমতাময়ী মা, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আপনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Bhowmik ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
    আমাদের মা জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,,সৎ ও সততা বান দিয়ে এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ,, কারণ,, আমাদের মা জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,, যে ব্যক্তির উপরওয়ালা,, আল্লাহকে নির্ভরশীল করে ,,সে ব্যক্তি ইনশাল্লাহ ,,বাংলাদেশ এগিয়ে নিয়ে যাবে ,, সেটা আমার বিশ্বাস,, জানিনা আপনাদের মতামত এবংবিশ্বাস কি,,,,?তাই আমাদের মা ,,জননীর কাছে,,, অসম্ভব,, বলতে কোন,, শব্দ নেই,,
    Total Reply(0) Reply
  • বাশীরুদ্দীন আদনান ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:৪৬ এএম says : 0
    সব বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:৪৭ এএম says : 0
    অগ্রগতির এ ধারা যেন আর কেউ রোধ করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মান্নান ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:৪৯ এএম says : 0
    সালমান এফ রহমান স্যার ঠিক বলেছেন বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের বড় বাজার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ