Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার ও বাস মালিক আঁতাত আছে

সংসদে জিএম কাদেরের ‘অপ্রিয় বচন’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এবং বিরোধী (জাতীয় পার্টি) দলীয় সংসদ সদস্য হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। সংসদে তাকে পাশে রেখেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বাস মালিক সমিতির সঙ্গে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ‘আঁতাত’ রয়েছে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর বাসের ভাড়া বাড়ানো এবং শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ নিয়ে বিআরটিএ’র সঙ্গে মালিক সমিতির দফায় দফায় বৈঠকে সমঝোতা না হওয়া ইস্যুতে সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।

বিরোধী দলীয় উপনেতা কাদের গতকাল রোববার সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখেন। তার পাশের আসনে বসেছিলেন বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। বক্তব্যের সময় হাসতে হাসতে সে কথাও বলেন জিএম কাদের। তখন পাশ থেকে রাঙ্গাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা গরিব। সবচেয়ে গরিব।’

জিএম কাদের বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাস মালিকরা বাসের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করতেই পারেন। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু দেশব্যাপী মানুষ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হলো। তেলচালিত বাস বন্ধ হলো। সেটা হতেই পারে, মানলাম। গ্যাসচালিত বাস বন্ধ হলো কেন?

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ বা সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সারা দেশে পরিবহন বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক নয়। আমাদের বিআরটিএ বলে একটা সংস্থা আছে। যাত্রীদের জিম্মি করে অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে যারা দাবি আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার উদাহরণ দেখছি না।

জিএম কাদের বলেন, মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে। ডিজেলচালিত বাসের জন্য একটা আর গ্যাসের জন্য একটা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে একই ভাড়া। একটা অনিয়মের চিত্র দেখা গেলো। পত্রিকায় দেখলাম, যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে যেতে চাইলে বাস থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টর আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করছে, সরকার? সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে এখানে? নাকি মালিক-শ্রমিক সমিতি করছে? সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি এই খাতের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করছে? শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে সরকারকে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানান।

জিএম কাদের সংসদ সদস্যদের জন্য অবসরকালীন আর্থিক সুবিধার দাবি করে বলেন, আমাদের অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন যারা ১৫-২০-২৫ বছর আছেন। তারা সৎভাবে কাজ করেন। প্রশাসনের বা অনেক জায়গায় অবসরের পর আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। অনেক দেশে এমপিদের অবসর সহায়তা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা করার দাবি করছি। তাহলে যারা সৎভাবে কাজ করতে চান, তারা মানবেতর জীবনে পড়বেন না।

তিনি বলেন, অবসরের পর কর্মকর্তারা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেন। এমপিরা পারেন না। সচিবদের দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের দেওয়া হচ্ছে। আর্মিদের দেওয়া হচ্ছে। এমপিরা পান না। স্থানীয় সরকারে যারা আছেন, তাদেরকেও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নথি চুরি হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম নিয়ে অনেক দিন ধরে কথা বলছি। দুর্নীতি দূর হয়েছে এমন মনে হচ্ছে না। সম্প্রতি কোনাকাটা সংক্রান্ত ১৭টি নথি গায়েব হয়ে গেলো। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেওয়া হলো, ফাইল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। যেখানে দুর্নীতি হয়, সেখানে ফাইল গায়েব করে দিলে আর সাজা হয় না। ফাইল গায়েবে বোঝা যায় দুর্নীতি হচ্ছে।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল না। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে কমানো হয় না। কিন্তু বাড়লে বাড়ানো হয়। করোনার সময় আমরা সেটা করিনি। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমবে বলে অনেকে মনে করছেন। এটি দেশের বাজারে পুননির্ধারণ করা উচিত।

তিনি বলেন, দেশে দারিদ্রের হার বাড়ছে, বেকারত্বের হার বাড়ছে। খোলাবাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ চোখে পড়েনি। বাজারে কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে বল মনে হয় না। বেকারত্ব বাড়ছে, দারিদ্র বাড়ছে আয় কমছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। মানুষ বাঁচবে কিভাবে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিএম কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ