পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানুষকে কষ্ট দেয়া ও নিপীড়ন করা একটি ধ্বংসাত্মক নিন্দনীয় আচরণ। কাবিরা গুনাহ। সব ধর্মেই মানুষকে কষ্ট দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ ইরশাদ করেন, আর তোমাদের মধ্যে যে অত্যাচার করে (মানুষকে কষ্ট দেয়) আমি তাকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব। (সূরা ফুরকান, আয়াত নং-১৯)। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার জামাতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। জায়গার অভাবে মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, উত্তম চরিত্র ঈমানকে পরিপূর্ণ করে। চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন না করে ঈমানের সৌন্দর্য অর্জন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা.)-কে সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সূরা : ক্বলাম, আয়াত ৪)।
ইরশাদ হচ্ছে, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সঙ্গে সে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করো। যে ব্যক্তি তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। শুধু এতটুকেই ক্ষ্যান্ত নয়। আরো নির্দেশ আসছে, এরপর যে ব্যক্তি তোমার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে, তোমার প্রতি জুলুম করে তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ করো। তার সাথে ভালো আচরণ করো। কথাবার্তা ও মৌখিক আচরণে একজন মু’মিনকে কিভাবে শালীন হতে হবে সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলো।’ (বাকারা: ৮৩)। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সাদকার সওয়াব হয়ে যায়’। (তিরমিযী)। অনেক হাদিসে নবী করীম (সা.) উন্নত নৈতিক চরিত্র অর্জন এবং খারাপ চরিত্র বর্জনের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। ঈমানের উচ্চ আসনে আসীন হওয়ার জন্য উন্নত নৈতিক চরিত্র ও আচার-ব্যবহারের ন্যায় আর কোনো আমল নেই। তিনি ইরশাদ করেন ‘ঈমানদার হচ্ছে ঐ লোক যার চরিত্র সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সে লোক সর্বোত্তম যে তাদের স্ত্রী পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণে অভ্যস্ত। (আহমদ-তিরমিযী)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, ‘আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র’। আবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, ‘মুখ (বচন) ও গোপন অঙ্গ (যিনা-ব্যভিচার)’। (তিরমিযী)। উত্তম চরিত্র, নীতি নৈতিকতার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তি জীবন, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে তুলি। যাতে করে একটি সুখি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে ওঠে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানুষকে কষ্ট দেয়া ও নিপীড়ন করা একটি ধ্বংসাত্মক নিন্দনীয় আচরণ। কবিরা গুনাহ। সব ধর্মেই মানুষকে কষ্ট দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম ধর্মে বান্দা মা’ফ না করলে এর শাস্তি জাহান্নাম। দুঃখের বিষয় মুসলিম হয়েও একজন অন্যজনকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়। অথচ মানুষকে কষ্ট দেয়ার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। চরম খারাপ। পরকালে তো আছেই, কখনও কখনও কারো কারো ক্ষেত্রে দুনিয়াতেই এর পরিণাম ভোগ করতে দেখা যায়। খতিব বলেন, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কষ্ট দেয়ার নিন্দাকরত: কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্যে পাপের বোঝা বহন করে। (তার পরিণতি জাহান্নাম)। (সূরা আহযাব, আয়াত নং-৫৮)। যে ব্যক্তি অহেতুক অযথা মানুষকে কষ্ট দেয়, তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কেউ নেই। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমরা যা বলো তারা তা মিথ্যারোপ করে। অতএব, তোমরা আযাব ফেরাতে পারবে না এবং কোনো সাহায্যও করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে যে অত্যাচার করে (মানুষকে কষ্ট দেয়) আমি তাকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব। (সূরা ফুরকান, আয়াত নং-১৯)। রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হয় আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন তিনি তাকে অপমান করে ছাড়বেন, যদিও সে তার উটের হাওদার ভেতরে অবস্থান করে। (তিরমিযি শরীফ, হাদিস নং-২০৩২)। রাসূল (সা.) আরো বলেন, সেই ব্যক্তিই হচ্ছে প্রকৃত মুসলমান, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে (বোখারী শরীফ হাদিস নং-১০)। আল্লাহ সকলকে কবুল করুন। আমিন। ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়াস্থ মসজিদের বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে ওয়াদা করেছেন, যারা মজবুত ও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী হবে তাদের আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে দৃঢ় থাকার ওপর সাহায্য ও তৌফিক দান করবেন। দুনিয়ার যত কষ্ট ক্লেশ বা জুলুম নির্যাতন বা বিপদ আপদ তাদের একচুল পরিমাণও ঈমান থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। সূরা ইবরাহীম। হযরত বিল্লাল (রা.), খাব্বাব (রা.), আম্মার (রা.)সহ আনসার মুহাজির এবং পরবর্তী অসংখ্য মুসলিম সব কিছু বিসর্জন দিতে হলেও ঈমান বিসর্জন দেয়নি। তাদেরই আল্লাহ তায়ালা ঈমানের দৌলতের ওপর দুনিয়া আখেরাত তথা আখেরাতে প্রথম ঘাঁটি কবরে বরযখে কালেমার ওপর দৃঢ় অবস্থানে রাখবেন। তারা ঈমানের দৌলত নিয়ে কালেমা সঙ্গে নিয়েই পরকালে উপস্থিত হবেন। আর কবরে ফেরেশতারা তিনটি প্রশ্ন করার সাথে সাথেই তারা সঠিক জবাব দিবে এবং প্রথম ঘাঁটিতেই তাদের মুমিন হিসেবে সীলমোহর পড়ে যাবে। তাদের পরবর্তী ঘাঁটিগুলোতে আর কোনো সমস্যা হবে না। বরং কবরের জগৎ থেকেই তারা জান্নাতের সুখ অনুভব করতে থাকবে। পক্ষান্তরে জালেম, মুনাফিকরা আল্লাহ তায়ালার সাহায্য পাবে না বিধায় তাদের ঈমান দৃঢ় থাকবে না আল্লাহ তায়ালাও তাদের দৃঢ় রাখবেন না। আল্লাহ আমাদের দৃঢ় ও মজবুত ঈমানদার হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।